উপার্জনে নৈতিকতার প্রেরণা
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
অর্থনীতির প্রধান উপলক্ষ্য উপার্জন। সেই উপার্জনের নীতিতে ইসলামের দিকনির্দেশনা অনেক স্পষ্ট ও পরিষ্কার। দিয়ানতদারি ও সততা হচ্ছে বৈধ উপার্জনের বড় অনুষঙ্গ। ব্যবসা বা উপার্জনের ক্ষেত্রে এই সততা ও নৈতিকতা অবলম্বন মানব-জীবনে উজ্জ্বলতা নিয়ে আসতে পারে। ব্যবসা ও উপার্জন বিষয়ক কয়েকটি হাদিসের ভাষ্যের প্রতি দৃষ্টি দিলে বিষয়টি অনুধাবন করা আমাদের জন্য সহজ হতে পারে। হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, কোনো এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর রাসূল উপার্জনের মাধ্যমগুলোর মাঝে কোন মাধ্যমটি সবচেয়ে উত্তম এবং পবিত্র? নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন, ‘নিজের হাতের কাজ এবং বিশ্বস্ততাপূর্ণ ব্যবসা।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৭২৬৫)
হযরত কায়েস (রা.) বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের বলা হতো দালাল। একদিন আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হযরত রাসূলে কারীম (সা.)। তখন তিনি আমাদেরকে এর চেয়েও সুন্দর একটি নাম দেন। তিনি এরশাদ করেন, হে ব্যবসায়ীরা! পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে অনেক অহেতুক কথা বলা এবং মিথ্যা শপথ করার পরিবেশ তৈরি হয়। এজন্য তোমরা সদকা করো, যেন তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হয়ে যায়। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৩২৬)
রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার একজন শস্যব্যবসায়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি তার শস্যের স্তূপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন। তখন ভেতরের শস্যগুলোতে তিনি কিছু কিছু আর্দ্রতা অনুভব করলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কী? সেই ব্যবসায়ী উত্তর দিলেন, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। ‘নবীজী তখন বললেন, ভেজা অংশটা উপরে রাখলে না কেন?’ তারপর নবীজী আরো বললেন, যারা আমাদেরকে ধোঁকা দেয় তারা আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম : ১০২)
উপরে বর্ণিত হাদিসগুলোতে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নৈতিকতার প্রেরণা পাওয়া যায়। একইসঙ্গে দেখা যায়, ওই যুগের সম্ভাব্য ব্যবসায়িক ধোঁকা বা প্রতারণার বিষয়ে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। সেসব অমোঘ সতর্কবাণীকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করলে স্পষ্টত বোঝা যায় আজকের সিংহভাগ ব্যবসায়ী সমাজের প্রতারণা ও ক্ষতিকর পদক্ষেপ সম্পর্কে হাদিসের ভাষ্য কতো কঠোর হতো। কারণ, আগের যুগে প্রতারণার ক্ষেত্রগুলোতে ক্রেতাকে ঠকিয়ে শুধু কিছু অবৈধ লাভের চিন্তা করা হতো। পক্ষান্তরে, বর্তমানে ক্রেতাকে ঠকিয়ে লাভ হাতানোর জন্য পণ্যের সঙ্গে ফরমালিনসহ নানা ধরনের প্রাণঘাতী বিষেরও সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। এভাবে অর্থ ও জীবন দুইয়েরই ক্ষতি সাধন করা হয়। মুসলিম জীবনের সঙ্গে এই ভয়ংকর প্রতারণার কোনো মিল নেই।
আরবিতে ‘ইহতিকার’ কথার বাংলা অর্থ হচ্ছে গুদামজাত করা। ব্যবসায়িক পরিভাষায় বলা হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য আটকে রেখে স্তূপ করা, বাজারে না ছাড়া। এভাবে মূল্যবৃদ্ধির অপেক্ষা করা। এরপর মূল্য বেড়ে গেলে পরে আটকে রাখা পণ্য বাজারে ছাড়া এবং অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করা। নবী কারীম (সা.) এ জাতীয় প্রবণতার প্রতি তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। এমন মানসিকতার প্রতি আঘাত করেছেন। মূলত এমন মানসিকতা ও প্রবণতা হৃদয়বান মানুষকে পাথরদিলের বে-রহম প্রাণীতে পরিণত করে দেয়। এটি ইসলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। কারণ ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে মানুষের প্রতি সহৃদয়তা ও সহানুভূতির প্রেরণা জোগানো। রাসূলে কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যবসায়ী পণ্য আবদ্ধ ও স্তূপ করে সে গোনাহগার। (সহীহ মুসলিম : ১৬০৫)
অপরদিকে নবীজীর এরশাদ রয়েছে, যে ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আবদ্ধ করে না, বরং সময়মতো বাজারে পণ্য নিয়ে আসে, সে আল্লাহর রহমত পাওয়ার অধিকারী; তাকে আল্লাহ রিযিক দেবেন। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আবদ্ধকারী হচ্ছে অভিশপ্ত। (সে আল্লাহর রহমত থেকে মাহরূম হবে। কারণ, সে মন্দকাজ করেছে।) (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২১৫৩)
উপরের হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা গেল গুদামজাত করা বা স্তূপ করাসহ ভোক্তা-সাধারণকে বিপদে ফেলে পণ্যের দাম বাড়ানো একটি অত্যন্ত বাজে কাজ। একইভাবে পরিকল্পনা করে জোটবদ্ধ হয়ে পণ্যের দাম অযৌক্তিক উপায়ে বাড়িয়ে দেয়াও মারাত্মক অন্যায়। অথচ বিভিন্ন মৌসুমে এ জাতীয় স্তূপিকৃত করা কিংবা পরিকল্পিত জোটবদ্ধতার ভিত্তিতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটানোর পরিস্থিতি প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। বলা বাহুল্য, এ জাতীয় প্রবণতার সঙ্গে ইসলামের সহৃদয়তা ও সহানুভূতিশীল ব্যবসা-নীতির কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত সৎ ব্যবসায় নিয়োজিত থাকা, অসৎ ব্যবসা থেকে বিরত থাকা এবং কায়িক শ্রম দিয়ে উপার্জন ইসলামের অন্যতম উপার্জননীতি। অসততা, অলসতা এবং সক্ষম সচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও অন্যের দুয়ারে হাত পাতা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। ইসলামের এই সৌন্দর্যমণ্ডিত উপার্জননীতি অনুসরণ করে চললে নিঃসন্দেহে যে কোনো মুসলমান দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব হতে পারবে। একই সঙ্গে মুসলমানদের সমাজে নেমে আসবে সহৃদয়তা ও সাচ্ছন্দ। অপর জাতি-গোষ্ঠির সামনে তাদের নৈতিক চরিত্রের উজ্জ্বল চেহারা প্রশংসিত ও আকর্ষণীয় হবে এবং এ আচরণ দ্বীনী দাওয়াতের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইপিএল নিলামে নাম না তোলার ব্যাখ্যা দিলেন ইংলিশ অলরাউন্ডার
‘চিকিৎসা নিতে করাচি যান, ভারতে নয়’, বাংলাদেশিদের ভিসা বাতিলের দাবি শুভেন্দুর
বৃষ্টির কবলে দ. আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট
ইসকন দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে - বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
আওয়ামী নেতাদের নির্দেশে চট্রগ্রামে নৈরাজ্য সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা
সাত কলেজ অনার্স প্রথম বর্ষের কালকের পরীক্ষা স্থগিত
নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের ১২ নেতাকর্মীর পদত্যাগ কমিটি বাতিলের দাবি
মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে মহা জট, ফড়নবিশকে জরুরি তলব দিল্লিতে
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান ফখরুল ইসলামের
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
আইনজীবী হত্যার অবিলম্বে বিচার চাই -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ
ফ্যাসিবাদের দোসর উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন’কে নিষিদ্ধ করা হোক আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ
ভারতের প্রেসক্রিপশনে ইসকন বাংলাদেশে অশান্তি করছে: হাসনাত
ডোমিনোজ পিৎজা এখন মহাখালীতে
বিএনপি জনগণের দল, 'ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিন' অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া
ইসকন ভারতের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দেশব্যাপী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু
ইসকনের মিথ্যাচার ও ভারতীয় মিডিয়ার সিন্ডিকেট নিউজ
ঋণগ্রহীতা মারা যাওয়ার পর পাওনাদার তার পাওনা মাফ করে দেওয়া প্রসঙ্গে।
সংস্কারের প্রাসঙ্গিকতা