জবানের হেফাজতের গুরুত্ব

Daily Inqilab মুহাম্মাদ রাকীবুল হক

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম

জবান অনেক দামী নিআমত, আল্লাহ তাআলার মহা দান। তাই এর নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবহার কাম্য। কথায় আছে, দামী জিনিসের হেফাজত কঠিন। স্বর্ণ-রৌপ্য তো মানুষ যত্রতত্র ফেলে রাখে না। সাধ্যের সবটুকু দিয়ে হেফাজতের চেষ্টা করে। আল্লাহ তাআলা জবান হেফাজতের তাকীদ করেছেন এভাবেÑ ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত আছে, যে (লেখার জন্য) সদা প্রস্তুত।’ (সূরা ক্বফ-১৮)

জবানে উচ্চারিত সবকিছুই ফেরেশতারা সংরক্ষণ করে রাখেন। ভালো-মন্দ, ছোট-বড় সবকিছুই তাঁরা লিপিবদ্ধ করেন। কিয়ামতের দিন এগুলোর হিসাব দিতে হবে। সেইদিন জিহ্বা, হাত-পাসহ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সাক্ষী দিবে। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ ‘যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত ও পা সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা নূর-২৪) আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে বান্দাকে সতর্ক করেছেনÑ ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য-সঠিক কথা বলো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলি শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করল সে মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সূরা আহযাব-৭০)
আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাকওয়া অবলম্বন তথা সব ধরনের নাফরমানী ছেড়ে দিতে বলেছেন। এর সাথে সাথেই জবানের সদ্ব্যবহার তথা সত্য-সঠিক কথা বলতে বলেছেন। কেননা, জবান হলো নাফরমানীর বড় হাতিয়ার। তাই তাকওয়ার সাথেই জবানে সত্য-সঠিক কথা বলতে বলেছেন। জবান ঠিক হয়ে গেলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সংশোধন হয়ে যাবে। তাই এরপরেই সব আমল সংশোধন ও গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন।

আর অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত, যারা জবানের হেফাজত করতে পারে, তারা অন্যান্য গুনাহ থেকে সহজেই বাঁচতে পারে। জবানের ব্যাপারে শিথিলতা অনেক বড় বড় বিপদ ডেকে আনে। দেখা যায়, দু-একটি কথার সূত্র ধরে বউ-শাশুড়ি কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বড় ধরনের ঝগড়া-বিবাদ হয়ে যায়। জবান হেফাজতের ব্যাপারে রাসূল (সা.) অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেনÑ ‘যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ বুখারী-৬০১৮)

একবার রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবী ওকবা ইবনে আমের (রা.)-কে তিনটি ওসিয়ত করলেন। এর প্রথমটি ছিল, তুমি তোমার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। (জামে তিরমিযী-২৪০৬) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, সেই সত্তার কসম, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। ভূপৃষ্ঠে সবকিছুর চেয়ে জিহ্বাই সবচেয়ে বেশি বন্দিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের মুখাপেক্ষী। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, বর্ণনা-৮৭৪৪)

রাসূল (সা.) বাচালকে অপছন্দ করেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে দূরে থাকবে সে, যে অযথা বেশি কথা বলে এবং যে অহংকার প্রদর্শনের জন্য, দাপট দেখানোর জন্য মুখ ভরে কথা বলে। (জামে তিরমিযী-২০১৮)

জবানের অপব্যবহারে কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া। হাদিস শরীফে এসেছে, আমি তোমাদেরকে কদরের রাত সম্পর্কে সংবাদ দিতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু দুই ব্যক্তির বিতর্কের কারণে আমি তা ভুলে গেছি। তাই তোমরা শেষ দশকে তা অন্বেষণ কর। একুশ, তেইশ, পঁচিশ, সাতাশ এবং ঊনত্রিশ রাতে। শবে কদর একটি মহিমান্বিত রজনী। বরকতময় রাত। এ রাতের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে এসেছে, কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যদি একটু বাগবিত-ার কারণে এত বড় সৌভাগ্য লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাহলে আমরা যেভাবে জবানের অপব্যবহার করি যেমন গীবত, পরনিন্দা, অপবাদ, মিথ্যা, কটুকথা, গালি ইত্যাদির কারণে আমরা কত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি!

রাসূল (সা.) বলেন, যে চুপ থাকে সে বেঁচে যায়। (জামে তিরমিযী- ২৫০১) অন্যত্র তিনি বলেন, তুমি যখন চুপ থাকবে তখন নিরাপদেই থাকবে। আর যখন কথা বলবে তখন তা তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে যাবে। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী-১৩৭) এক দার্শনিকের অভিব্যক্তি, আমি কখনো আমার নীরবতার উপর অনুতপ্ত হইনি। তবে বহুবার কথার কারণে লজ্জিত হয়েছি। তাই আমাদের উচিত চুপ থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কাশিয়ানীর নিজামকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ১৫ মাসের কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি

কাশিয়ানীর নিজামকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ১৫ মাসের কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি

মসজিদ-অফিসে এসি ২৫ ডিগ্রি রাখার নির্দেশনা, না মানলে লোডশেডিং: বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা

মসজিদ-অফিসে এসি ২৫ ডিগ্রি রাখার নির্দেশনা, না মানলে লোডশেডিং: বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা

তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি আ.লীগ : মির্জা ফখরুল

নৈতিকতার বিপ্লব করতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে: বেগমগঞ্জ নির্বাহী অফিসার

নৈতিকতার বিপ্লব করতে হলে মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে: বেগমগঞ্জ নির্বাহী অফিসার

তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে বিএনপির ২ দিনের কর্মসূচি চলছে

তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনে বিএনপির ২ দিনের কর্মসূচি চলছে

জানযট ও জনদূর্ভোগ নিরসনে হাইওয়ে সড়কের উপর বাজার ইজারা বন্ধের দাবী

জানযট ও জনদূর্ভোগ নিরসনে হাইওয়ে সড়কের উপর বাজার ইজারা বন্ধের দাবী

দৌলতদিয়ায় গলা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক যুবতী

দৌলতদিয়ায় গলা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক যুবতী

সালথায় মহান শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা

সালথায় মহান শহীদ দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা

পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা পাড়ে শিক্ষার্থীরা

পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে তিস্তা পাড়ে শিক্ষার্থীরা

‘ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব’, রাশিয়া-ইরানের জোট ভাঙতে হুমকি ট্রাম্পের

‘ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব’, রাশিয়া-ইরানের জোট ভাঙতে হুমকি ট্রাম্পের

বাড়ি থেকে উদ্ধার কোরিয়ান অভিনেত্রীর লাশ

বাড়ি থেকে উদ্ধার কোরিয়ান অভিনেত্রীর লাশ

হরিণাকুন্ডুর ছাত্রনেতা ওলিয়ার রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত

হরিণাকুন্ডুর ছাত্রনেতা ওলিয়ার রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত

সালথা প্রেসক্লাবে তালা দেওয়ার অভিযোগে শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

সালথা প্রেসক্লাবে তালা দেওয়ার অভিযোগে শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়ায় নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে বিএনপির জনসভায় জিয়া জিয়া ধ্বনিতে মুখর আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ

বগুড়ায় নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবিতে বিএনপির জনসভায় জিয়া জিয়া ধ্বনিতে মুখর আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ

‘ভারতের জনগণই কি হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে?’

‘ভারতের জনগণই কি হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে?’

পশ্চিমবঙ্গের মুরিগঙ্গা নদীতে ডুবছে বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ

পশ্চিমবঙ্গের মুরিগঙ্গা নদীতে ডুবছে বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ

অপারেশন ডেভিড হান্টে বকশীগঞ্জে গ্রেফতার  ২

অপারেশন ডেভিড হান্টে বকশীগঞ্জে গ্রেফতার ২

ধামরাইয়ে ৮ বছরের মাদরাসার ছাত্রী ধর্ষণের শিকার ধর্ষক আট

ধামরাইয়ে ৮ বছরের মাদরাসার ছাত্রী ধর্ষণের শিকার ধর্ষক আট

জকিগঞ্জে হাট-বাজার ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ : ২৪ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি

জকিগঞ্জে হাট-বাজার ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ : ২৪ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি

ইবির জয়পুরহাট জেলাকল্যাণে সভাপতি মোহসীন সম্পাদক তামিম

ইবির জয়পুরহাট জেলাকল্যাণে সভাপতি মোহসীন সম্পাদক তামিম