মেহমানের শিষ্টাচার মেজবানের অধিকার-২
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

যখন কেউ কাউকে আমন্ত্রণ করে তখন অনেকেই সময় মতো উপস্থিত হয় না। আমন্ত্রণকারীকে কষ্ট দেয়ার একটি আধুনিক রূপÑ কথা মতো, যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়া। কেমন যেন আমরা এটাকে রেওয়াজই বানিয়ে নিয়েছি। মেহমান যদি দুপুর একটায় আসার কথা থাকে, তাহলে কমপক্ষে দুইটায় আসা যেন তার অধিকারের মধ্যেই পড়ে! বাড়িতে খাওয়ার দাওয়াতে যেমন এটা ঘটে, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও তা ঘটে সমান তালেই। বিকাল চারটায় যে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা, তা যদি পাঁচটায়ও শুরু হয় তবুও যেন সময় মতোই হলো। এটাও তো একপ্রকার ওয়াদা-খেলাফ। ওয়াদা যখন করা হয়, তখনই ভেবে-চিন্তে করা উচিত।
ওয়াদা করার পর তা রক্ষা করা তো মুমিনের কাছে ঈমানের দাবি। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ওয়াদা রক্ষা করে না, তার দ্বীনদারি নেই। (মুসনাদে আহমাদ-১২৪০৬) কখনো কখনো মেহমান মেজবানের কাজকর্ম আটকে দেয়। এতেও তার কষ্ট হয়। অনেক সময় তো তাকে বিপদেই পড়ে যেতে হয়। নবীজীর জীবনের একটি ঘটনা। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মুল মুমিনীন হযরত যায়নাব (রা.)-কে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর ওলিমার আয়োজন করেছেন। সেখানে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে এসে কেউ কেউ গল্পগুজবে মেতে ওঠে। খাওয়া-দাওয়া শেষেও তারা অনেকক্ষণ বসে থাকে।
এ প্রেক্ষিতে নাযিল হয় পবিত্র কুরআনের এ আয়াতÑ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী-গৃহে প্রবেশ করো না, তবে যদি তোমাদের খাওয়ার জন্যে (আসার) অনুমতি দেয়া হয় (তাহলে প্রবেশ করতে পারবে,) তবে এভাবে আসবে যে, তোমরা খাবার প্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে না। যখন তোমাদের আমন্ত্রণ করা হয় তখন তোমরা প্রবেশ করো। অতঃপর যখন খেয়ে নেবে, তখন চলে যাবে এবং পরস্পর গল্পগুজবে মেতে ওঠবে না। তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে তা বলতে লজ্জাবোধ করেন। তবে আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জা করেন না। আর যখন তোমরা নবীপতœীদের নিকট কোনো কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে চাও। এ খুবই পরিচ্ছন্ন পন্থা- তোমাদের অন্তর ও তাদের অন্তরের জন্যে।’ (সূরা আহযাব-৫৩)
আয়াতটি নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট এবং আয়াতের দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য আমাদেরকে স্পষ্টই এ নির্দেশনা দিচ্ছেÑ দাওয়াত গ্রহণ করতে গিয়ে খাবার খাওয়া শেষে এমনভাবে পরস্পরে কথাবার্তায় লিপ্ত হওয়া যাবে না, যাতে মেজবান কষ্ট পেতে পারে। একইভাবে একজন মেহমানকে এমন প্রতিটি কাজ ও আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে তার মেজবানের কোনোরূপ কষ্ট হতে পারে কিংবা তাকে বিব্রত করে তুলতে পারে। আয়াতের শুরুতেও বলা হচ্ছে একই কথাÑ তোমাদেরকে যদি দাওয়াত দেয়া না হয় তাহলে যাবে না।
আবার দাওয়াত দেয়া হলেও এমন সময় গিয়ে ওঠবে না, যাতে তোমার উপস্থিতির কারণে বাড়ির লোকদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। আয়াতে যদিও কথাগুলো হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘর সম্পর্কে বলা হয়েছে, কিন্তু এর শিক্ষা সকলের জন্যেই ব্যাপক। আতিথেয়তা ও নিমন্ত্রণ কীভাবে গ্রহণ করা হয়Ñ সেই আদব ও শিষ্টাচারই এখানে সবাইকে শেখানো হচ্ছে।
মেহমান যদি সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে আসতে চান, কিংবা কেউ যদি মেহমানের সঙ্গে আসতে চায়, তাহলে মেজবানের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এমন কারো আতিথেয়তার ভার আমন্ত্রকের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। হ্যাঁ, যদি তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নেন, তাহলে কথা ভিন্ন। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র জীবনেরই আরেকটি ঘটনা।
হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.) বর্ণনা করেন, এক আনসারী সাহাবী হযরত আবু শুআইব (রা.) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দাওয়াত করলেন। পাঁচজন মেহমানের জন্যে খাবার রান্না করা হয়েছিল। আর তিনি ছিলেন পাঁচজনের একজন। নবীজী (সা.) সেখানে গেলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গেল আরেকজন, দাওয়াত ছাড়াই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আমন্ত্রণকারীকে বললেন, ও তো আমাদের সঙ্গে এসেছে। এখন তোমার ইচ্ছা, চাইলে তুমি তাকে অনুমতি দিতে পারো, অথবা তুমি চাইলে সে (এখান থেকেই) ফিরে যাবে। সাহাবী বললেন, আমি তাকে অনুমতি দিচ্ছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সহিহ বুখারী-২৪৫৬)
এমনটা ভাবার অবকাশ নেইÑ মেহমান যদি সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে এসে অনুমতি চায়, তাহলে মেজবান কি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে? বাধ্য হয়েই তো সে অনুমতি দিয়ে দেবে। এ অনুমতি চাওয়ার তাহলে কী অর্থ? না, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর সাহাবীদের সম্পর্ক ছিল খুবই আন্তরিকতাপূর্ণ এবং লৌকিকতামুক্ত। সাহাবী যখন অনুমতি দিচ্ছেন, তখন তিনি আন্তরিকভাবেই দিচ্ছেন। আবারো ঘুরে ফিরে সেই একই কথাÑ সবকিছুর মূলে এই আন্তরিকতা।
মোটকথা, মেহমানের কারণে মেজবানকে যেন কোনো গোনাহে জড়াতে না হয়। এখানেও একই কথা, আয়াতে যদিও নবীজী (সা.)-এর স্ত্রীগণের বিষয়ে বিধান দেয়া হয়েছে, কিন্তু এর ব্যাপকতায় পুরো উম্মতই অন্তর্ভুক্ত। এ বিধান মেনে চলতে হবে সবাইকেই।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি