শবে বরাত : নববী নির্দেশনাই মুক্তির উপায়-২
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

শবে বরাত একেবারেই সন্নিকটে। অতি উৎসাহী যেকোনো কর্মকা- আমাদেরকে এ রাতের রহমত ও মাগফিরাতের মহা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করে দিতে পারে। আর কিছু আমলের ব্যাপারে আমরা খুব যতœবান হলেও তা খুবই অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়। হালুয়া-রুটি বিতরণ, আতশবাজি ও পটকাবাজির সাথে ইবাদতের কী সম্পর্ক? মৃতদের রূহ এ রাতে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি বেড়াতে আসে এ ধরনের অমূলক ধারণা পোষণ করা, বিশেষভাবে এই দিনে ঘর-বাড়িতে আলোকসজ্জা করা, মাজারে মাজারে মোমবাতি দিতে হুড়মুড় করার ফযীলতই বা কী?
মসজিদে মসজিদে ওয়াজ মাহ্ফিলের ব্যবস্থা করে সম্মিলিত বা একাকী নামাযের জন্য আহ্বান করা, তথাকথিত বানোয়াট বিশেষ পদ্ধতির শবে বরাতের নামায তো একেবারেই পরিত্যাজ্য। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন রসম-রেওয়াজ প্রচলিত। ঢাকায় না এলে আরো নব উদ্ভাবিত কিছু বিদআত ও কুসংস্কারের সাথে হয়তো আর একটু দেরিতে পরিচিত হতাম। ঢাকায় এসে দেখেছি, এরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় রাস্তায় পাউরুটি বা কেক দিয়ে তৈরি বিশাল বিশাল কৃত্রিম মাছ ও কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির জীব-জানোয়ারের পসরা দিয়ে গড়ে ওঠে বিভিন্ন দোকানের সমাহার।
প্রত্যেক দোকানের সামনে লেগে থাকে ক্রেতাদের ভিড়। আবার সারা রাত রিক্সা ও ঠেলাগাড়িতে চড়ে তরুণ বয়সের পাঁচ-দশ জন মিলে নিজেরা ড্রাইভিং করে শহরময় অলিতে-গলিতে ঘুরে আনন্দ উল্লাসের দৃশ্যটাও ঢাকায় এসে প্রথম দেখলাম। খুব উৎসুক হয়েও এসবের কোনো উৎস খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সবচেয়ে মারাত্মক যে বিশ্বাসটি এখনো অনেক মানুষ পোষণ করে থাকেন তা হলো, এই রাতকে শবে কদরের চেয়েও বেশি মহিমান্বিত মনে করা এবং শবে কদরের ফযীলতগুলোকে এই রাতের সাথে সংযুক্ত মনে করা। আবার সেই আমরাই রমযানের শেষ দশকে হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এ রাতের তালাশ না করে ঈদ-বাজার নামক ক্রমবর্ধমান বেপর্দেগীর সংস্কৃতিতে ডুবে থাকি। এ অজ্ঞতা বড়ই অন্যায় এবং শরীয়ত নির্ধারিত সীমার চরম লঙ্ঘন।
এসব রসম-রেওয়াজ, বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি ও অজ্ঞতা-বিদআত থেকে মুক্তি পেতে চলুন আমরা ছুটে যাই নববী নির্দেশনার পানে। হাদিসের আলোকেই নির্ধারণ করি শাবান ও শবে বরাত আমাদের কী করণীয় আর কী বর্জনীয়। আর এ উদ্দেশেই আমরা শাবান ও শবে বরাত সম্পর্কিত সহিহ, হাসান, নির্ভরযোগ্য ও অন্তত ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হাদিসগুলো সংক্ষিপ্তকারে উল্লেখ করছি।
বিভিন্ন সহিহ হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) প্রায় পুরো শাবান মাসই রোযা রাখতেন। রমযানের পর এই একটি মাসেই তিনি সবচেয়ে বেশি রোযা রাখতেন। এর কারণ প্রথমত রমযান ও রজব মধ্যবর্তী এ মাসটিকে মানুষ হেলায় নষ্ট করে ফেলে। তাই রমযানের প্রস্তুতি স্বরূপ নবীজী এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন। দ্বিতীয় এ মাসে পুরো বছর মৃত্যুবরণকারী সব মানুষের মৃত্যুর কথা লিপিবদ্ধ করা হয়। নবীজী চাইতেন, তাঁর মৃত্যুর কথা এমন সময় লেখা হোক যখন তিনি রোযাদার। (বুখারীÑ১৯৬৯-১৯৭০)
আবার অন্যান্য কিছু হাদিসে শাবানের শেষ ক’দিন বিশেষত ২৮ থেকে ৩০শে শাবান রোযা রাখতে নবীজী নিষেধ করতেন। কারণ এতে রমযানের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায়। (বুখারী-১৯১৪)। এ বিষয়ে হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) মাখলুকের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান-৫৬৬৫)
এমনিভাবে বাযযার (হাদিস ২০৪৮) এ হযরত আওফ ইবনে মালেক হতে, ইবনে খুযাইমা ‘কিতাবুত তাওহীদ’ এ (এর পৃষ্ঠা-১৩৬) যা তাঁর ‘সহিহ’ কিতাবেরই একটি অংশ হযরত আবু বকর (রা.) হতে এবং ইবনে মাজায় (হাদিস ১৩৯০) হযরত আবু মুসা (রাযি.) হতে প্রায় একই ধরনের হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসের শেষাংশে এসেছে যে, আল্লাহ এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমদ-৪/১৭৬)
হযরত উসমান ইবনুল আস হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, এ রাতে আল্লাহ মুশরিক ও ব্যভিচারিনী মহিলা ব্যতীত সকলেরই চাওয়া পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ঈমান-৩/৩৮৩)। লালকায়ীর ‘কিতাবুস সুন্নাহ’, আর ‘শুয়াবুল ঈমান’ ৩/৩৮২-এ হযরত আবু সালাবা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আছে, যখন অর্ধ-শাবানের রাত্রি আসে তখন আল্লাহ মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। অতঃপর মুমিনকে ক্ষমা করে দেন, কাফেরদেরকে (ফিরে আসার) সুযোগ দেন এবং হিংসুকদেরকে হিংসা পরিত্যাগ ব্যতীত ক্ষমা করেন না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি