আদরের মেয়ে : দুনিয়ার পূর্ণতা আর পরকালের মুক্তির পয়গাম-৩
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

মেয়েশিশুদেরকে নিয়ে আইয়ামে জাহিলিয়্যাতের সময়ের পাষ-তার একটি নমুনা এই যে, এক সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করার পর নবীজী (সা.)-এর কাছে এসে নিজের ঘটনা শুনিয়েছেন। তার ভাষ্যÑ আমার যখনই কোনো মেয়েশিশু জন্ম নিত আমি তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলতাম। একবার আমি সফরে ছিলাম। তখন আমার এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার মা তাকে বাড়িতে না রেখে তার মামাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমি যখন সফর থেকে ফিরে আসি তখন সন্তানের খবর নিই। সে আমাকে বলল, আমাদের এক মৃত শিশু জন্ম নেয়। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়।
আমার মেয়েটি তার মামার বাড়িতেই বড় হতে থাকে। একদিন সে তার মাকে দেখতে আসে। তার সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ হই। পরে আমি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি সে আমারই মেয়ে। এরপর আমি তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। তার জন্যে মাটিতে একটি গর্ত খুঁড়ি। তাকে সেখানে ফেলে দিই। সে আমার কাছে জানতে চায়Ñ বাবা, তুমি আমাকে কী করবে? আমি তার উপর মাটি ফেলতে থাকি আর সে বলতে থাকেÑ বাবা, তুমি কি আমাকে মাটিচাপা দিচ্ছ? আমাকে একাকী ছেড়ে দাও, আমি অন্য কোথাও চলে যাই। কিন্তু তার কোনো কথা না শুনে আমি তার উপর মাটি ফেলতেই থাকি, একপর্যায়ে তার সব আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যায়। এ বিবরণ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, এ তো নির্ঘাত এক পাষ-তা! যে দয়া করে না, তাকেও দয়া করা হবে না! (আলওয়াফী বিল ওয়াফায়াত, কায়েস ইবনে আসেম এর জীবনী দ্রষ্টব্য)।
এই পরিস্থিতি যখন সমাজে বিরাজ করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মেয়েশিশুদের ভরণ-পোষণের এমন অতুলনীয় ফযিলতের কথা ঘোষণা করেছেন। এর পাশাপাশি সুস্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছিল নারীদের বিভিন্ন অধিকারের কথাও। অথচ তখনকার সমাজে নারীদের কোনো অধিকার তো নয়ই, বরং তাদের মানুষ হিসেবেও স্বীকৃতি ছিল না। প্রায় দেড় হাজার বছর আগের অন্ধকার পৃথিবীতে আলো জ্বালিয়েছিলেন প্রিয় নবীজী (সা.)। অথচ এই আধুনিক যুগেও আমরা সেই অন্ধকারেই যেন ঘুরপাক খাচ্ছি। খুব ব্যাপকাকারে না হলেও, সমাজের মানুষের চোখে মেয়েশিশু ততটা কাক্সিক্ষত নয়। যদি কোনো নারীর পরপর দুটি মেয়েসন্তান হয় কিংবা ছেলেসন্তান কারো না-ই থাকে, অনেকের চোখে সে নিন্দার পাত্রে পরিণত হয়।
মায়েরা ভয়ে থাকে, তাদেরকে কখন আবার কী শুনতে হয়! মেয়েশিশুর জন্মের সংবাদ কারো কারো জন্যে কোনো আনন্দই বয়ে আনে না, আবার কারো জন্যে তা হয়ে পড়ে কষ্টের বিষয়, ঠিক জাহেলি যুগের মতো! জীবন্ত পুঁতে ফেলার রেওয়াজ যদিও এখন নেই, কিন্তু মেয়েশিশুর প্রতি মানসিকতা যেন সেই অন্ধকার যুগের মতোই! তবে ব্যতিক্রমও আছে। আমাদের সমাজে যাদের কেবলই ছেলে, তাদের অনেককেই একটি মেয়েশিশুর জন্যে আক্ষেপ করতে দেখা যায়। মেয়েদের ছাড়া যেন সংসারের পূর্ণতা আসে না!
এ কথা তো অনস্বীকার্য, বাবা কিংবা মা, তাদের একজনের অনুপস্থিতিতে পরিবারে যেমন একধরনের শূন্যতা নেমে আসে, তেমনি ভাইকে ছাড়া বোন এবং বোনকে ছাড়া ভাইও একধরনের শূন্যতা অনুভব করে। সন্তানাদি আমাদের পরিবারের প্রদীপ। এ প্রদীপ দুনিয়াতে জীবনকে আলোকিত করে রাখে। আবার পরকালের সফরেও এরা ‘পাথেয়’। তবে কোনো পরিবারে সন্তান যদি ছেলেও থাকে, মেয়েও থাকে, কেমন যেন আমরা সে পরিবারকে একরকমের পূর্ণ পরিবার মনে করি।
ছেলে-মেয়ে উভয় প্রকারের সন্তানের প্রতি আকর্ষণ তাই মানুষের এক স্বভাবজাত বিষয়। কিন্তু আমরা সবাই এ বিশ্বাসও করিÑ সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে, এ নিয়ে বাবার কিংবা মায়ের কিছুই করার নেই। এটা সম্পূর্ণই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছানুসারে হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিয়েছেনÑ ‘আকাশম-লী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা তিনি কন্যাসন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা দান করেন পুত্রসন্তান। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তিনি বন্ধ্যা করে রাখেন। তিনি সর্বজ্ঞ, শক্তিমান।’ (সূরা শূরাÑ৪৯-৫০) একজন আল্লাহ-বিশ্বাসী মুমিন হিসেবে চিন্তা-চেতনায় এবং কাজে-কর্মে এ বাণীর প্রতি পূর্ণ আস্থা আমাদের রাখতেই হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি