ভ্রাতৃত্বের চর্চায় আলোকিত হোক আমাদের সমাজ-১
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

একজন আল্লাহ-বিশ্বাসী মুমিনের নিকট ঈমানের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় থাকতে পারে না। ঈমান তার কাছে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। মুমিন এমনই হয়। যে ঈমান তার কাছে এতটা প্রিয়, এতটা মর্যাদার, সেই ঈমান যখন তার মতোই আরেকজন মানুষ ধারণ করে তখন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি অনিবার্য। এটা ঈমানের ভ্রাতৃত্ব। দেশ-কাল-ভাষা-বর্ণের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এ ভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে পড়ে দূর-বহুদূর। কোনো পূর্বপরিচয় নেই, একজন আরেকজনের ভাষাও বোঝে না- এমন দুইজন মুমিনও যখন ঈমানের দাবিতে একত্রিত হয়, তখন মুহূর্তেই যেন তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে হৃদ্যতা। ভাষার সীমাবদ্ধতা, দেশের ভিন্নতা এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পবিত্র কুরআনের ঘোষণাÑ ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই।’ (সূরা হুজুরাতÑ১০)
স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা করে দিয়েছেন, সেই ভ্রাতৃত্বকে ছোট করে দেখার অবকাশ কোথায়! পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব তো আরো কত কারণেই সৃষ্টি হতে পারে। একই দেশের নাগরিক, একই এলাকার বাসিন্দা, একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, একই কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ইত্যাদি কত কারণেই তা গড়ে ওঠে! তবে যত কিছুই হোক, কুরআনের ঘোষণার সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা চলে! ঈমানী এই বন্ধন যে কেবল দুইজন ঈমানদার ব্যক্তির ঈমানের বিন্দুতে একত্রিত হওয়ার ফলে গড়ে ওঠে- বিষয়টি এখানেই শেষ নয়।
কুরআন ও হাদিসের নানা জায়গায় নানা আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে এ বন্ধনের গুরুত্বের কথা। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা যতক্ষণ ঈমান না আনবে ততক্ষণ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি না হবে, ততক্ষণ তোমরা মুমিনও হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে একটি কাজের কথা বলে দেব, যা করলে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমাদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাও। (সহিহ মুসলিম-৫৪)
কথা তো খুবই সহজÑ নিজে ঈমানদার হতে হলে অন্য মুমিনদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করতে হবে। এ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা গড়ে তোলার একটি পন্থাও নির্দেশ করেছেনÑ সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও। আর বাস্তবতা এমনইÑ পারস্পরিক সালামের বিনিময় যখন হয়, তখন মন থেকে হিংসা-বিদ্বেষ কর্পুরের মতোই উড়ে যায়। সালামকে বলা যায় মুমিনের মন জয় করার এক অব্যর্থ হাতিয়ার।
প্রিয় নবীজী (সা.)-এর হিজরতের পর মদীনা মুনাওয়ারার আনসারগণ হিজরতকারী মুসলমানদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের যে নমুনা প্রদর্শন করেছেন, তা সত্যিই বিরল। ঘরবাড়ি ফেলে, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে শুধুই নিজেদের ঈমান রক্ষার তাগিদে দূর মদীনায় যারা হিজরত করেছিলেন, তাদের একেকজনকে মদীনার একেকজন মুসলমানের ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। প্রিয় নবীজীর হাতে গড়ে ওঠা ভ্রাতৃত্বের এ বন্ধনকে তারা এতটাই মাথা পেতে নিয়েছেন যে, তারা তাদের এ ভাইদেরকে নিজেদের ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন, নিজেদের সম্পদে অংশীদার বানিয়ে নিয়েছেন, এমনকি কেউ কেউ তো নিজের একাধিক স্ত্রীর মধ্যে কাউকে তালাক দিয়ে নতুন এই ভাইয়ের বিয়ের ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে চেয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে মদীনার আনসারদের এ ত্যাগ ও সহযোগিতার বিবরণ এসেছে এভাবে :“ ...আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এই নগরীতে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে, তারা মুহাজিরদেরকে ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্যে তারা অন্তরে আকাক্সক্ষা পোষণ করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।” (সূরা হাশরÑ৯)
কারো যখন সচ্ছলতা থাকে, তখন সে সহজেই অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে। এতে তার কোনো কষ্ট পোহাতে হয় না। কিন্তু অসচ্ছলতাকে কাঁধে করে, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হয়ে নিজেদের প্রয়োজনের তুলনায় অন্য কারো প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়া মোটেও সহজ নয়। মদীনার আনসারগণ এই কঠিন কাজটিই করে ভ্রাতৃত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন।
মুমিনদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) তুলনা করেছেন একটি দেহের সঙ্গে। এক অঙ্গের অসুস্থতায় পুরো দেহই যেমন কাতর হয়ে পড়ে, ঠিক পৃথিবীর এক অঞ্চলের একজন মুসলমানের ব্যথাও অনুভব করতে হবে অন্য সব অঞ্চলের মুসলমানদের। তখনই এই ভ্রাতৃত্বের মর্যাদা রক্ষা হবে। হাদিস শরীফের ভাষ্য, তুমি মুমিনদের দেখবে তারা পারস্পরিক দয়া-ভালোবাসা আর মায়া-স্নেহের বিষয়ে একটি দেহের মতো। দেহের এক অঙ্গ যখন আক্রান্ত হয়, তখন পুরো শরীরই অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। (সহিহ বুখারী-৬০১১) এই হলো ভ্রাতৃত্বের নমুনা। আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনগণ যেন একটি প্রাচীর, যার একটি ইট আরেকটিকে শক্তি যোগায়। (সহিহ বুখারী-২৪৪৬)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বাংলাদেশ থেকে সবসময় নেয়ার চেষ্টা করেছে ভারত: জামায়াত

বিএনপি এদেশের জনগণের আস্থার দল -আমান উল্লাহ আমান

বিভেদ না করে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করুন : সুপ্রদীপ চাকমা

গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

আমেরিকার পথে 'ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ'র দল

আনোয়ারায় ৭০জন বাচ্চাকে ফ্রি খতনা

বাংলাদেশি লেনিন অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় নির্বাচনে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থী

উইন্ডিজ ও দ. আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে ভারত

বিচার বিভাগ অভ্যন্তরীণ সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে-প্রধান বিচারপতি

তামিমের চিন্তাভাবনাকে 'অশিক্ষিত' বললেন সালাউদ্দিন

নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি

বাংলাদেশের মাটিতে আর কোন ফ্যাসিস্ট যেন জন্মাতে না পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য - খোকন তালুকদার

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

পড়ালেখা শেষে শিক্ষার্থীদেরকে দেশ ও জাতির সেবক হিসাবে কাজ করতে হবে-সোলায়মান চৌধুরী

শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেই বিভক্তি বাড়ছে

ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি আবু শহীদ ও সম্পাদক ডিফেন্স

তিন ধাপ এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক: বিশেষ দূত

প্রশাসনের সহযোগিতায় অটোরিক্সায় শৃঙ্খলা ফিরেছে

শেখ হাসিনা ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট ভূমিকা অবতীর্ণ করেছে : এ্যানি