নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা-২
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম
সুন্দর নাম রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, হাশরের ময়দানে- সেখানে পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে এবং ব্যক্তিকে তার নাম ও তার বাবার নামসহ ডাকা হবে। হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে- অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখ। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪৮)।
একজন অপরজনের নাম সম্পর্ক অবগত হওয়া ঈমানী ভালোবাসা এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্বেরও দাবি। তাই এমন নাম রাখা উচিত নয়, যা বলতে মানুষ লজ্জাবোধ করে। ইয়াযীদ ইবনে নাআমা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কেউ যখন অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে চায় তাহলে সে যেন তার নাম, তার বাবার নাম ও বংশের কথা জিজ্ঞেস করে। এর দ্বারা ভালোবাসার বন্ধন আরো গভীর হয়। (জামে তিরমিযী : ২৩৯২)।
উপরের রেওয়ায়েতসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের সুন্দর নাম রাখা পিতা-মাতার অবশ্যকর্তব্য। এটা পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক। কখনো কোনো কারণে মন্দ ও অসুন্দর নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখা উচিত। এটাই নবীজী (সা.) এর সুন্নত।
যেসকল নাম নবীজী (সা.) অপছন্দ করেছেন উপরে তার কিছু বিবরণ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নবীজী (সা.) যেসকল নাম পছন্দ করতেন এবং সেগুলো রাখতে উৎসাহিত করতেন- সে সম্পর্কেও জানা থাকা দরকার। কেমন নাম রাখা উচিত। কোন্ ধরনের নাম আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন এ ব্যাপারে একটি হাদীসে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ হাদীসে চারটি অংশ। প্রথম অংশ : (তোমরা নবীগণের নামে নাম রাখ।) নবীগণ হচ্ছেন সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত। রিসালাতের মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তাঁদের উপর। মানুষকে অন্ধকার ছেড়ে সত্যের আলোকিত পথ তারা প্রদর্শন করেন। তাদের প্রতিটি আচরণ ও উচ্চারণ মানব জাতির জন্য অনুপম আদর্শ। এজন্য তাদের নামও হয়ে থাকে সুন্দর ও অনুকরণীয়। আম্বিয়ায়ে কেরামের সংখ্যা অনেক। কিন্তু তাদের সবার নাম ও অবস্থা আমাদের জানা নেই।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : অনেক রাসূলের বৃত্তান্ত আমি আপনাকে জানিয়েছি। আর অনেক রাসূলের বৃত্তান্ত জানাইনি। আল্লাহ তাআলা মূসার সাথে কথা বলেছেন। (সূরা নিসা : ১৬৪)। সে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের নাম ও বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক সম্মানিত হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)।
যে সকল নবীর নাম পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে তারা হলেন- আদম, ইদরীস, নূহ, হূদ, সালেহ, শুয়াইব, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, মূসা, হারুন, ঈসা, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ইলিয়াস, আলইয়াসা , ইউনুস, সোলাইমান, দাউদ, আইয়ূব, যুলকিফল আলাইহিমুস সালাম।
এগুলো আম্বিয়ায়ে কেরামের ব্যক্তিগত নাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন নবীর গুণবাচক নাম ও উপাধি পবিত্র কুরআন-হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর উপাধি খলিলুল্লাহ ও খলিলুর রহমান। ইসমাঈল (আ.)-এর উপাধি যাবিহুল্লাহ। মূসা (আ.)-এর উপাধি কালীমুল্লাহ। ঈসা আ.-এর উপাধি রুহুল্লাহ ও কালীমুল্লাহ।
হাদীসের দ্বিতীয় অংশ হল : (আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার কাছে সে সকল নাম সর্বাধিক প্রিয়, যেগুলোর মধ্যে বন্দেগী ও দাসত্বের প্রকাশ রয়েছে। অর্থাৎ ‘আব্দ’ শব্দটিকে নামের অংশ বানিয়ে আল্লাহ তাআলার কোনো নামের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। যেমন, আব্দুল্লাহ, আবদুর রহমান, আবদুর রহীম, আবদুর রাযযাক, আবদুল খালেক, আবদুস সাত্তার, আবদুর রব ইত্যাদি।
আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমানকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হল, আল্লাহ ও রহমান আল্লাহ তাআলার ঐসকল গুণবাচক নামের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোকে কোনোভাবেই আল্লাহ ভিন্ন অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। এর যে কোনো একটির শুরুতে ‘আব্দ’ শব্দটি যোগ করে নাম রাখা যেতে পারে।
হাদীস শরীফে আছে : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। এক কম একশ। যে ব্যক্তি তা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। আল্লাহ তাআলা একক-অদ্বিতীয় (বেজোড়), তাঁর কোনো শরীক (জোড়) নেই। তিনি বেজোড় ভালোবাসেন। (সহীহ বুখারী : ৬৪১০)। পবিত্র কুরআনে সংখ্যা উল্লেখ করা ছাড়াই আসমায়ে হুসনার আলোচনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। তোমরা এগুলোর মাধ্যমে তাঁকে ডাক এবং যারা তাঁর নামের মাঝে বক্রতা সৃষ্টি করে তাদেরকে পরিত্যাগ কর। তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ : ১৮০)।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলার সুন্দর সুন্দর নাম আছে, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্তে পূর্ণতার প্রমাণ বহন করে। এ সুমহান নামসমূহের মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকা ও স্মরণ করার আদেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে যারা আল্লাহর নামের মধ্যে বক্রতা অবলম্বন করে তাদের সংস্পর্শ ত্যাগ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাইডেনের আটকানো ২৪ হাজার রাইফেল ইসরাইলকে দিতে পারেন ট্রাম্প
অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিরাপত্তাহীনতায় নারী তারকারা, ক্ষুব্ধ সোশ্যাল মিডিয়া!
পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে এস আলম, বেক্সিমকো, পিকে হালদার
ট্র্যাব অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন
ট্রাম্পের নতুন নীতির প্রভাবের ফলে আফগান শরনার্থী সহায়তা বন্ধ
পরিবর্তিত বাংলাদেশ, কলকাতার বাঙালিদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা
মালা বিক্রেতা থেকে বলিউড অভিনেত্রী মোনালিসা!
বরিশালে ঠান্ডাজনিত রোগ সহ ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত
প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা আবুল হাশেম (রহ.)-এর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী
সোমবার থেকে আরও কমবে তাপমাত্রা
নববিবাহিত সারজিসকে খোঁচা ময়ূখ রঞ্জনের!
দূষণের সব মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ঢাকার বাতাস
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ সচিব
রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনার কবলে ৬ গাড়ি, আহত ২৫
মেক্সিকো-কানাডা-চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ
গান গাইতে গাইতেই অসুস্থ সাবিনা ইয়াসমিন; নেয়া হয়েছে হাসপাতালে
চিলমারীতে গলায় মাফলার পিছিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
কঙ্গোতে বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ে ৭০০ জনের মৃত্যু : জাতিসংঘ
গণহত্যাকারীদের আস্ফালন থামাতে সিরিয়ার ন্যায় দ্রুত ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি
সাড়ে ১০ ঘন্টা পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং ৮ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি চালু