জবানের হেফাজতের গুরুত্ব
৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম

রাসূল (সা.) জবান হেফাজতের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যে তার জবান ও লজ্জাস্থান হেফাজতের জামানত দিতে পারবে, আমি তার জান্নাতের জামিন হবো। (সহিহ বুখারী- ৬৪৭৪)
রাসূল (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ। কথা-বার্তা, চাল-চলন, কাজ-কর্ম সব বিষয়ে তিনি কখনো অযথা অনর্থক কথা বলতেন না, এমনকি বলা পছন্দও করতেন না। শুধু উপকারী ও প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। তিনি দীর্ঘসময় নীরব থাকতেন। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) দীর্ঘসময় চুপ থাকতেন এবং কম হাসতেন। (মুসনাদে আহমাদ-২০৮১০)
সরাসরি মিথ্যা, গালমন্দ, অশ্লীল কথা এগুলো থেকে আমরা অনেকেই বিরত থাকতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় বেখেয়ালে মিথ্যা বলে ফেলি। যেমন- কিছু দেয়ার বাহানা করে ছোট বাচ্চাকে ডাকা হলো অথচ আহŸানকারীর কাছে দেয়ার মতো কিছুই নেই। এটি মিথ্যার শামিল।
উম্মে আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) ছোট বাচ্চাকে কিছু দেয়ার কথা বলে ডাকছিলেন। রাসূল (সা.) বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। বললেন, তুমি কি তাকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকছ (নাকি কিছু দেয়ার বাহানা করে তাকে কাছে ডাকছ?)। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি তাকে খেজুর দেয়ার জন্য ডাকছি। তখন নবীজী বললেন, জেনে রাখো, তুমি যদি তাকে কিছু না দিতে, তাহলে তোমার গুনাহের খাতায় একটি মিথ্যা লেখা হতো। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯৯১)
গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা ও রসিকতার ছলে অনেক সময় আমরা অলীক, অবাস্তব ও উদ্ভট কথা বলে ফেলি। এমনকি কখনো কখনো মিথ্যাও হয়ে যায়। এ সমস্যাটি ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সর্বশ্রেণীর মানুষের মাঝে মহামারির আকার ধারণ করেছে। কারণ রসিকতায় শ্রোতাদের হাসানোই থাকে মুখ্য বিষয়। তাই মিথ্যা, অলীক, অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক কথা বলার প্রবণতা থাকে। এমনকি এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়। অথচ মিথ্যাকে আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যম বানানো মারাত্মক গুনাহ। এর পরিণাম অনেক ভয়াবহ। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ধ্বংস ওর! যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে। ধ্বংস ওর! ধ্বংস ওর জন্য!! (মুসনাদে আহমাদ-২০০২১)
কারো কারো মাঝে কথায় কথায় লানত-বদদোয়া দেয়ার অভ্যাস থাকে। বিশেষভাবে নারীদের মাঝে। অনেক সময় তারা আপনজন এমনকি নিজ সন্তানকেও বদদোয়া দিয়ে চলে। হতে পারে তখন দুআ কবুলের মুহূর্ত ছিল। ফলে খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা হয়। বদদোয়াটা লেগে যায়। এটা খুবই গর্হিত কাজ। যবানের মারাত্মক অপব্যবহার। তাই এ ব্যাপারে আমাদের হুঁশিয়ার থাকা উচিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা একে অপরকে লানত করো না; বলো না- তোমার উপর আল্লাহর লানত হোক, তোমার উপর আল্লাহর গযব পড়ুক, তুমি জাহান্নামে যাও। (জামে তিরমিযী-১৯৭৬)
জবানের অপব্যবহারের আরেকটি ক্ষেত্র হলো, ঠাট্টা-বিদ্রƒপ, গীবত-অপবাদ ইত্যাদি। আমাদের কারো কারো কথাবার্তার বড় একটা অংশ থাকে তৃতীয় ব্যক্তিকে নিয়ে। হয়ত কারো দোষ চর্চা করা, না হয় কাউকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা অথবা কারো ব্যাপারে মন্দ বলা বা অপবাদ আরোপ করা। অথচ কুরআন-হাদিস এগুলো থেকে শক্তভাবে বারণ করেছে। এগুলো প্রত্যেকটাই কবীরা গুনাহ। পাশাপাশি জবানের অপব্যবহারেরও শামিল।
জবানের অপব্যবহার মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। দীর্ঘ এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত মুআয (রা.) রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কথার কারণেও কি আমাদের পাকড়াও করা হবে? (মুখের কথার কারণেও কি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে?) তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) মুআজ (রা.)-এর উরুতে মৃদু আঘাত করে বললেন, হে মুআয! তুমি এ বিষয়টি বুঝ না! আরে, মানুষকে তো তার জবানের কথাই উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী সে যেন ভালো কথা বলে বা অন্তত মন্দ কথা থেকে বিরত থাকে। তোমরা ভালো কথা বল, লাভবান হবে। মন্দকাজ থেকে বিরত থাক, নিরাপদ থাকবে। (মুসতাদরাকে হাকেম-৭৭৭৪)
রাসূল (সা.) জবানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। কত পুত-পবিত্র তাঁর জবান! যে জবান আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার কাছে ওহী পৌঁছায় এবং আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যা দান করে। এ জবানের পবিত্রতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, [সে তার নিজ খেয়াল-খুশি থেকে কিছু বলে না। এ তো ওহী, যা তার কাছে পাঠানো হয়। (সূরা আননায্মÑ৩-৪)] তা সত্তে¡ও রাসূল (সা.) বিনয়কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে জবানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার কান, চোখ, জবান, হৃদয় এবং লজ্জাস্থানের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ-১৫৫১) আমাদের উচিত জবানের সঠিক ব্যবহারের প্রতি সচেতন ও যতœবান হওয়া এবং এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ধবলধোলাই হয়ে রিজওয়ান বললেন, ‘হতাশার সিরিজ’

মাগুরায় সন্ত্রাসী হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

রংপুরে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার

জুলাই বিপ্লবে শহীদ রাকিবুলের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা তারেক রেজা

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোথাও নেই বাংলাদেশের মত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নগরকান্দায় বিয়ের ১ মাস হতেই ডাকাতের হাতে প্রান গেল প্রবাসীর

বায়ার্নের সঙ্গে ২৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন মুলার

নিকলীর হাওরে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন

মার্কিন শুল্ক ইস্যুতে জরুরি সভা ডাকলেন প্রধান উপদেষ্টা

ভারতে মুসলিমদের সম্পত্তি দখল এবং সংখ্যালঘু নিধনের গভীর ষড়যন্ত্র–ওয়াকফ বিল

বুড়িচং উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মিজান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক কামাল ও সদস্য সচিব কবির

আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত বিএনপি নেতা জাকিরকে দেখতে হাসপাতালে ব্যারিস্টার সায়েম

দুমকিতে মাইক্রোবাসের চাপায় এক নারীর মৃত্যু

কলাপাড়ায় দুই সন্তানের জননীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ

সিউলে অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউনের পক্ষে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিএনপি! নেক্কারজনক ভূমিকায় হতবাক-বিক্ষুব্ধ নেটিজেনরা

সুরমার ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় কয়েক শত শত পরিবার

শেষ হয়েছে দুবলারচরের শুঁটকি মৌসুম লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরছেন জেলেরা

ইতালিতে নতুন নিরাপত্তা আইন, রোমজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ

ঈদের ৯দিন ছুটির পর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলওয়ে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম চালু হয়েছে