অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়-২
১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
ইসলাম ধর্ম হলো সুস্পষ্ট ও আলোকিত একটি পথ। যারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈমানের আলোয় ইসলামের পথে চলবে, তারা পুরোপুরি আলোকিত মানুষ। তারা ধর্মান্ধ নয়; বরং ধর্মপ্রাণ। চোখ আছে, ভালো-মন্দ দেখতে ও বুঝতে পারে এবং আলো ও সত্যকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে চায় বলেই তারা দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলে। গোমরাহীর অন্ধকারে পথ হারায় না। অন্যদিকে যারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে ‘ধর্মান্ধ’ বলে, তাদের অনেকে প্রবৃত্তিপূজারী, আবার অনেকে ধর্মবিদ্বেষী। তাদের চর্মচক্ষু আছে বটে, কিন্তু তাদের হৃদয় অন্ধকার। তাই তারা অধর্ম ও গোমরাহীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। সে অন্ধকারকে তারা আবার আলো ও প্রগতি বলে বিভ্রমে পড়ে আছে। আল্লাহ তায়ালা গত আলোচনায় আলোচ্যকৃত আয়াতসমূহে তাদেরকেই লক্ষ করে বলেছেন ‘অন্ধ ও বধির’ এবং তারা ‘অন্ধকার দ্বারা পরিবেষ্টিত’। তারা যা কিছুুকে আলো বলছে এবং যে আলোর দিকে মানুষকে ডাকছে, আল্লাহ তায়ালা সেগুলোকে অন্ধকার বলেছেন। তারা যাদেরকে অন্ধ বলছে, আল্লাহ তাদেরকেই চক্ষুষ্মান বলেছেন। আর কে না জানে, আল্লাহ তায়ালার কথাই চিরন্তন সত্য।
এই প্রকৃত অন্ধরা কিয়ামতের দিন কবর থেকে চোখেরও অন্ধত্ব নিয়ে পুনরুত্থিত হবে। তখন তারা বলবে, আল্লাহ! আমি দুনিয়ায় থাকতে দেখতে পেতাম। আজ আপনি আমাকে অন্ধ করে ওঠালেন কেন? এ কথা আল্লাহ তায়ালা কোরআন কারিমে এভাবে বলেছেন : আর যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সঙ্কটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে ওঠাব। সে বলবে, হে রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে ওঠালেন কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। (সূরা ত্বহা : ১২৪-১২৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে। (সূরা বনি ইসরাইল-৭২) আর যারা দুনিয়ায় প্রকৃত চক্ষুষ্মান, তারা আখিরাতেও আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোপ্রাপ্ত হবে। তাদের কাছে সেদিন ওই অন্ধরাও আলো চাইবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন কারিমে বলেন : সেদিন তুমি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণকে দেখবে, তাদের আলো তাদের সামনে ও তাদের ডান দিকে ধাবিত হচ্ছে (এবং তাদেরকে বলা হবে,) তোমাদের জন্য আজ এমন সব উদ্যানের সুসংবাদ, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে, যাতে তোমরা সর্বদা থাকবে। এটিই মহা সাফল্য।
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা মুমিনগণকে বলবে, আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করো, যাতে তোমাদের আলো থেকে আমরাও কিছুটা আলো গ্রহণ করতে পারি। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও, তারপর আলো তালাশ করো। তারপর তাদের মাঝখানে স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। তার মধ্যে থাকবে একটি দরজা, যার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে শাস্তি। তারা মুমিনগণকে ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? মুমিনগণ বলবে, হ্যাঁ, ছিলে বটে কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদে ফেলেছ। তোমরা অপেক্ষা করছিলে, সন্দেহে নিপতিত ছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম আসল। আর সেই মহাপ্রতারক (অর্থাৎ শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করে যাচ্ছিল। (সূরা হাদিদ : ১২-১৪)
অতএব যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ঈমানের আলো দিয়ে চক্ষুষ্মান করেছেন, তারা অন্ধ বা ধর্মান্ধ নয়, পথহারা বা ভ্রান্তপথেও নয়; বরং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেই চক্ষুষ্মান ও আলোকিত বলেছেন এবং তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঈমানহারা অন্ধদের চেয়ে উত্তম বলেছেন। চক্ষুষ্মান ঈমানদারগণ এবং ঈমানহারা অন্ধরা কিছুতেই বরাবর হতে পারে না। আর তাই তাদের কর্তব্য হলোÑ জীবনের সব ক্ষেত্রে এ আলোয় পথ দেখে চলা।
এ আলো সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অনুসরণ করে চললেই তারা সফল হতে পারবে, গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। সেই সঙ্গে তাদের দায়িত্ব, সর্বত্র এ আলো ছড়িয়ে দেয়া। যারা এ আলো পায়নি, তাদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া, আর যারা মুখ ফিরিয়ে অন্ধকারে উ™£ান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কাছে এ আলোর মাহাত্ম্য তুলে ধরা।
মুমিনদের একমাত্র অভিভাবক আল্লাহ তায়ালা। আর যারা আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করেনি, তারা শয়তানের অনুসারী। যারা আল্লাহর অভিমুখী হয়, আল্লাহ তাদেরকে অন্তর্চক্ষু দান করেন এবং অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেন। আর শয়তান তার অনুসারীদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে তার হৃদয়ে ঈমানের আলো দিয়েছেন এবং তাকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন; এর পরও যদি সে হেলায় খেলায় পথ হারিয়ে ফেলে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ নয়।
চক্ষুষ্মান হওয়া এবং নিজের ঠিকানা জানার পরও লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারা চরম নির্বুদ্ধিতা। অতএব প্রত্যেক মুমিনের আবশ্যক, আল্লাহ যে তাকে ঈমানের আলো দান করে চক্ষুষ্মান বানিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর শোকরগোজার হওয়া এবং এ আলোয় নিজেকে পরিপূর্ণ আলোকিত করে ইসলামের পথে চলা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়