মাদক নির্মূলে ইসলামের নির্দেশিত পথের কোনো বিকল্প নেই
১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
ইসলামের দৃষ্টিতে মাদক : ইসলামে নেশা বা মাদক সেবন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং অপবিত্র কাজ। কারণ মাদক কিংবা নেশা মানুষের মস্তিষ্ককে বিকল করে দেয়। মাদক সেবনের ফলে কোনো মানুষ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে তা হারাম। মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার ভয়ংকরতম ব্যাধিগুলোর অন্যতম। বিশ্বে অগণিত সফল জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, টেকনিশিয়ান ও অনুরূপ সফল মানুষের জীবন ও পরিবার ধ্বংস হয়েছে মদের কারণে একটি মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও দৈহিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে, ক্ষতি সাধন করে তার দ্বীন ও দুনিয়ার। একই ভাবে একথা বলারও অপেক্ষা রাখে না যে, মাদক পরিবার-পরিজন ও জ্ঞাতী-বংশকে এমন বিপদ-বিপর্যয়ের মাঝে ফেলে দেয়, যা থেকে উৎরে ওঠা, যা থেকে স্ত্রী- সন্তানদের জন্য মেরুদ- সোজা করে দাঁড়ানো সুকঠিন হয়ে পরে।
মাদক সমাজ ও জাতির রুহানী, বৈষয়িক এবং চারিত্রিক অস্তিত্বের প্রশ্নে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।আর মাদক মানব জাতিকে যতটা কঠিন আঘাত হেনেছে, ততটা কঠিন আঘাত আর অন্য কোনো কিছু হানতে পারে নি। যদি এ ব্যাপারে ব্যাপক পরিসংখ্যান চালানো যায় যে, বিশ্বের চিকিৎসালয় গুলোতে যে সমস্ত রোগাক্রান্ত মানুষ থাকে, তাদের মধ্যে কতজন মাদকের কারণে মস্তিষ্ক বিকৃত ও দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে যায়; কতজন মাদকের কারণে আত্বহত্যা করে, অন্যকে খুন করে; বিশ্বের কত জনের উপর এই মাদকের কারণে স্নায়ুবিক, পাকস্থলীক এবং নাড়িতন্ত্রিক রোগের অভিযোগ ওঠে; এই মাদকের কারণে কত জন মানুষ তার নিজের ধ্বন-সম্পদ উজার করে দিয়ে নিঃস্ব ও সর্বস্ব হয়ে যায়; কত জন মানুষ এই মাদকের কারণে তার মালিকানাকে বিক্রি করে দেয় কিংবা প্রতারণার জালে পড়ে তা হারিয়ে বসে; যদি এসব বিষয়ে কিংবা এর মাত্র কয়েকটি বিষয় নিয়ে পরিসংখ্যান চালানোা যায়, তাহলে এদের পরিমাণ এত ভয়ঙ্কর মাত্রায় গিয়ে ঠেঁকবে যে, আমরা দেখতে পাবো , এর সামনে যাবতীয় নসিহত যাবতীয় পরামর্শ বলতে গেলে বৃথা।
আরবরা জাহেলীয়াতের যুগে ছিল মদ পানের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত । মদের সাথে ছিল তাদের গভীর বন্ধুত্ব ও অনুরক্ততা। তারা তাদের এ আসক্তি ও অনুরক্ততার কথা তাদের সাহিত্যের ভিতরেও প্রকাশ ঘটাতো। এমনকি মদের শ’খানেক নামও দিয়েছিলো তারা। এর বিভিন্ন গুণাগুণ তাদের কবিতাগুলোতে উচ্চারিত হত। বিভিন্ন আসরে আসরে বর্ণিত হত এর রকমারি চমক ও চানোক্য ।যখন ইসলাম আবির্ভূত হল, সে তখন তাদেরকে একটি প্রজ্ঞাপূর্ন রাজপথে পরিচালিত করলো। ইসলাম তাদের ওপর মদকে হারাম করে দিল একটি ধারাবাহিকতা মেনে, একটি ক্রমধারা মেনে। তাদেরকে প্রথম ধাপে মদে-মত্তো অবস্থায় নামায পড়া থেকে নিষেধ করা হল। এরপর তাদেরকে বলে দেয়া হল যে, মদের মধ্যে যেসব উপকারিতা রয়েছে যেসব ফায়দা রয়েছে, তার তুলনায় এর গোনাহ ও অপরাধের দিকটিই অধিক মারাত্বক। এরপর আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদা’র নি¤েœাক্ত ব্যপক তাৎপর্যবহ ও অকাট্য আয়াতে কারিমাটি নাজিল করলেন : হে ইমানদারগণ! নিশ্চই খামরুন (মদ ও মাদক), মাইসীরুন (জুয়া), আনসাব্ (বলীদানের স্থান) এবং আযলাম (ভাগ্য গণনার শর)-শয়তানের অ-পবিত্রসব কাজ। বিধায় তোমরা তা পরিহার করে চলো। আশা করা যায়, তোমরা সফলতা লাভ করতে পারবে। নিশ্চই শয়তান চায় যে , মদ ও জুয়ার আবর্তে ফেলে সে তোমাদের পরষ্পরের মাঝে দুশমনি ও জিঘাংসা সৃষ্টি করে দিবে এবং তোমাদেরকে আল্লাহ’র স্মরণ ও নামায থেকে ফিরিয়ে রাখবে। সুতরাং, (এখন এসব থেকে) তোমরা বিরত হবে কি? (সূরা মায়েদাহ- ৯০, ৯১)।
আল্লাহ তাআলা এ আয়াত দুটিতে মদ ও জুয়াকে একেবারে চুড়ান্ত ও কঠোর ভাষায় হারাম করে দিয়েছেন এবং এদেরকে (বলিদানের স্থান) এবং (ভাগ্য গণনার শর) – এর সাথে একই সঙ্গে উল্লেখ করে এ কাজ দুটিকে (অপবিত্র/পঙ্কীলতাপূর্ণ) হিসেবে গণ্য করে নিয়েছেন। আর (রিযসুন) কথাটি যখন কুরআনে ব্যবহৃত, তখন সেটা শুধুমাত্র ফাহেশা, জঘন্য, বিভৎস ও পঙ্কীল জাতীয় কিছু বোঝাতেই মূলতঃ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তদুপরি এ কাজ দুটিকে আবার (শয়তানের কাজ) বলে অভিহিত করেছেন; আর শয়তানের কাজই হল ফাহেশা ও বদ্ কাজ করা। এখানে মদ্যপান ও জুয়াকে পরিহার করে চলার আহবান জানান হয়েছে; সাথে এই পরিহারকরণকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে সাফল্যের পানে ধাবিত হওয়ার পথ। আরও বলা হয়েছে, এ দু’কাজের বিভিন্ন সামাজিক ক্ষতির কথা। বলা হয়েছে, এসব কাজ নামাজ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখে, সৃষ্টি করে একে-অপরের মাঝে দুশমনি ও জিঘাংসা। মাদক এবং জুয়ার আরও অন্যতম ক্ষতি এই যে, তা নামায এবং আল্লাহর স্বরণের ন্যায় দ্বীনের বিভিন্ন অপবিহার্য বিষয় -যা আত্মার রুহানী খোরাক- তা থেকে মানুষকে সরিয়ে রাখে।
প্রত্যেক নেশাকর জিনিসই মাদক : নবী করিম (সা.) যখন সর্বপ্রথম মদ নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষনা দেন, তখন তিনি এদিকে মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেননি যে , কোন্ কোন্ জিনিস থেকে মদ তৈরী করা হয়, বরং তার মূল দৃষ্টি ছিল -মদ (মানুষের মধ্যে) যে আছোর ও প্রতিক্রিয়া ঘটায় -সে দিকে; আর সেটা হল মাতালতা , নেশা ও মাদকতা। কাজেই যে জিনিসের মধ্যেই এই মাদকতা, নেশা ও মাতালতার শক্তি বিদ্যমান থাকবে, সেটিই (খামরুন/মাদক/মদ) হিসেবে বিবেচিত হবে -চাই মানুষ সেটার যে নাম বা উপনামই দিক না কেনো -চাই তা যে জিনিস থেকেই প্রস্তুত করা হোক না কেনো। সুতরাং, ‘বিয়ার’ এবং এজাতীয় মাদকগুলোও হারাম।নবী করিম (সাঃ)-এর কাছে ‘মধু’ থেকে প্রস্তুতকৃত, কিংবা ‘ভুট্ট’ ও ‘যব’ ভিজিয়ে পরে তা ঘন করে যে মদ প্রস্তুত করা হয় -সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, নবী করিম( সাঃ) যেমন ব্যপক অর্থবোধক বক্তব্য সহকারে প্রেরিত হয়েছিলেন, তেমনি এক্ষেত্রেও তিনি একটি ব্যপক অর্থবোধক জবাবই দান করেছিলেন, (বলেছিলেন)- প্রত্যেক নেশাকর জিনিসই খামরুন (মাদক/মদ)। আর প্রত্যেক খমরুন’ই হারাম। [সহিহ মুসলীম- ৩/১৫৮৮ হাদিস ২০০৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)এর মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে হযরত ওমর ফারূক রা. লোকজনের সামনে এই ঘোষনা দিয়েছিলেন : খামরুন (মদ/মাদক) হল তা, যা মস্তিষ্কে মাদকতা আনয়ন করে। (সহিহ বুখারী, হাদিস ৪৩৪৩)। বস্তুতঃ এক্ষেত্রেও ইসলাম তার চুড়ান্ত পরিচয় দিয়েছে আরও একবার। মাদকের মধ্যে গণ্য হয় -এমন পানীয়ের পরিমাণ কম হোক কি বেশি -ইসলাম সেদিকে দেখতে যায় নি। বাস্, সে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে এই পিচ্ছিল পথে মানুষের কদম্ আছাড় খেয়ে খেয়ে এমন গভীরে চলে যেতে না পারে, যা থেকে আর ফেরত আসা সম্ভব নয়। এজন্য রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : যে জিনিসের অধিক পরিমান মাতালতা/নেশা/মাদকতা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমানও হারাম। (সুনানে আবু দাউদ- ৪/৮৭ হাদিস ৩৬৮১)।
মদ/মাদক ব্যবসা : মদ/মাদক -চাই কম হোক বা বেশি- নবী করিম (সা.)সেটাকে শুধু হারাম করে দিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি, বরং মাদক ব্যবসাকেও তিনি হারাম করে দিয়েছেন -চাই সেই ব্যবসাটি অমুসলীমদের সাথেই করা হোক না কেনো। সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্যই এ কাজ জায়েয নয় যে, সে মাদক আমদানী-রপ্তানীর কাজ করবে, অথবা মাদক বিক্রির দোকান দিয়ে বসবে, কিংবা কোনো মদের দোকানে চাকুরী করবে। এ পর্যায়ে নবী করিম (সা.) মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট দশ শ্রেণির ব্যক্তির উপরে লা’নত দিয়েছেন। তারা হল : যে (দ্রব্য নিংরিয়ে/প্রক্রিয়াজাত করে) তা উৎপাদন করে, যে তা উৎপাদন করিয়ে নেয়, (অর্থাৎ যে মাদক উৎপাদন করতে বলে), যে তা সেবন করে, যে তা বহন করে, যার কাছে তা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়, যে তা পরিবেশন করে, যে তা বিক্রি করে, যে তার মূল্য খায়, যে তা ক্রয় করে, এবং যার জন্য তা ক্রয় করা হয়। (সুনানে তিরমিযী- ১/২৪৩ হাদিস ১২৯৫)। পরিশেষে বলতে চাই, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের পদ্ধতিতেই মাদকতা ও মাদকাসক্তি নির্মূল করা সম্ভব। যদি আমরা ইসলামি অনুশাসন মেনে চলি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাদক সেবনের ছোবল থেকে রক্ষা করুন। কুরআন হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মদ, মাদক ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জিনিস থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার