ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা
২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম
আল্লাহর বাণী: প্রত্যেকের জন্য তাদের কাজ অনুসারে মর্যাদার স্তর। তাদের কাজের প্রতিফল তাদের দিয়ে দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না। (সূরা আহকাফ-১৯)। ১৮৮৬ সালের ১মে আমেরিকার শিকাগো শহরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজ ৮ ঘন্টা বিশ্রাম ৮ ঘন্টা বিনোদনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছিল। অথচ পুলিশি আক্রমণে সেদিন হে-মার্কেট রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। এ রক্তে রঞ্জিত দিনটিকে স্বরণ করেই আজ দেশে দেশে মে দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ব্যতীত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই মহান মে দিবস সরকারি ছুটির দিন। সভ্যতার প্রতিটি ইট, বালু ও পাথরে যাদের ঘাম ও রক্ত জড়িয়ে আছে, যে শ্রমিকরা ছাড়া কখনোই সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না, এখনো নয়। সেই শ্রমিকরা আজ অবহেলিত, লাঞ্জিত ও শোষিত ! ১০-১২ ঘন্টা কাজ করত কিন্তু মুজুরী পেত সামান্য! শ্রমিকরা সর্বপ্রথম মুখ খুললো ১৮৬০ সালে! কিন্তু শ্রমিক সংগঠন না থাকায় এ দাবী জোরালো করা সম্ভব হয় নি! আন্দোলনে ১৯ জনের মত প্রাণ বিসর্জন দেয় ও ০৬ জনেরমত ফাঁসি দেয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে আন্দোলনের নেতা আগষ্ট স্পিজ বলেছিলেন। আজ আমাদের এ নি:শব্দতা তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা শক্তিশালী হবে।
১৮৯১ সাল থেকে দিবসটি বিভিন্ন দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো পালন শুরু করে! ১৯০৪ সালে জাতিসংঘ আই.এল ও কনভেনশনে (ওহঃবৎহধঃরহধষ খধনড়ঁৎ ঙৎরবহঃবফ ঈড়হাবহঃরড়হ) এর মাধ্যমে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সে থেকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মহান মে দিবস পালিত হচ্ছে, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায় ও বিজয়ের প্রতিক হিসেবে। এ যাবত বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৮০টি দেশ এ সনদে স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু খোদ আমেরিকা আজো এ সনদে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি আমেরিকা ও কানাডা এ দিবসটি পালনও করে না বরং তারা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার জাতীয় শ্রমিক দিবস পালন করে থাকে। যে দেশগুলো আই.এলও কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি তাদের মধ্যে জাপান অন্যতম।
ইসলাম মানবজীবনের জন্য রহমত! জাহেলি যুগে আরবে যখন দাস-দাসী ও গরিব শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হতো তখনই রাসুল (সা:) নিয়ে এসেছিলেন মানবতার বার্তা। একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ইসলামের। এর পর শ্রমিক ও মালিকের সৌহার্দমূলক পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন এক বিধানের প্রচলন করেছে ইসলাম যেখানে দুর্বল শ্রেণিকে শোষণ-নিপীড়নে পিষ্ঠ করার জঘন্য প্রবণতা নেই। কেননা ইসলাম হচ্ছে সাম্য ও মানবতার ধর্ম! ইসলাম সমাজে এ কথা বাস্তবায়ন করেছে যে, আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবাই সমান। এতে কোনো ভেদাভেদ নেই! এ জন্য বিদায় হজ্বের ভাষণে নবীজি (সা:) বলেছেন, অনারবের ওপর আরবের আর আরবের ওপর অনারবের এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের ও কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই! শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আল্লাহভীতি ও ধর্ম পালনের দিক দিয়েই বিবেচিত হতে পারে (মুসনাদে আহমদ-২২৯৭৮)
ইসলাম হলো প্রকৃতির ধমর্, আল্লাহর নিকট আত্মসম্পর্পণ। পরিভাষায় শ্রম হলো, উপার্জনের উদ্দেশ্যে মেধা, সময় ও শক্তি বিনিয়োগ করা। শ্রমিক: যিনি শ্রম দেন বা পরিশ্রম করেন। মজুর, মজদূর যে শরীর খাটিয়ে খায়। শ্রমজীবী, মেহনতি, শ্রমী যে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করে! পরিশ্রমী, শ্রমশীল, শ্রমোপজীবী পরিশ্রম দ্বারা জীবিকা নির্বাহ কারী। শ্রম ও শ্রমিকের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পারিশ্রমিক। পারিশ্রমিক হলো শ্রমের বিনিময়, মজুরী, মজদুরী। পারিশ্রমিক (১) সাধারণ কর্মচারী বা শ্রমিকের ক্ষেত্রে বলা হয় মজুরী (ডধমব) (২) চাকুরীজীবী সাধারণ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে বলা হয় বেতন (ঝধষধৎু) এবং (৩) উচ্চপদস্থ বা সম্মানিতদের ক্ষেত্রে বলা হয় সম্মানী (ঐড়হধৎরঁস) আরবীতে বলে আজরুন, উজরাতুন। পবিত্র কুরআনে এসেছে ফাতুহুন্না উজুরাহুন্না ফারিদাতুন। আর তোমরা তাদেরকে তাদের নির্ধারিত বিনিময় দিয়ে দাও।(সূরা: নিসা-২৪) হযরত মুছা (আ:) ৮-১০ বছর কাজ করে তার বিনিময়ে হযরত হাজেরা (রা:) কে পেলেন এটি তার কাজের বিনিময় বা প্রতিদান। তাই তার নাম হয়েছে আজর (আজেরা বিনিময়) যা পরিবর্তিত উচ্চারনে হাজেরা হয়েছে। পারিশ্রমিক শ্রমিকের জীবনে জীবিকার প্রদান অবলম্বন।
শ্রমিকের প্রতি মমতা : ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের জন্য অভিন্ন অন্ন-বস্ত্রের নির্দেশ দিয়েছে। যাতে শ্রমিকের মানসম্মত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত হয়। একজন স্বাধীন ব্যক্তির যেমন বাসস্থান পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তেমনি একজন শ্রমিকেরও বাসস্থান পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ইসলাম মালিক শ্রমিক উভয়কেই সমান অধিকার প্রদান করেছে। রাসুল (সা:) এ সম্পর্কে বলেন: যে আমাদের কোনো দায়িত্বের নিযুক্ত হলো অথচ তার কোন ঘর নেই, তাকে সে যেনো আবাসিক ঘর বানিয়ে দেয়। অথবা যার স্ত্রী নেই, সে যেন বিয়ে করে নেয় অথবা যার কোনো ভূত্য নেই, সে যেন ভূত্য গ্রহণ করে অথবা যারা বাহন নেই, সে যেন একটি বাহন করে নেয়। (আল মুসনাদ: হাদীস নং ১৭৩২৯)। রাসুল (সা:) বলেছেন: প্রতি আদম সন্তানের জন্য এ বস্তুগুলোর মধ্যে অধিকার রয়েছে। বাসস্থ’ানের জন্য ঘর, লজ্বাস্থান ঢাকার জন্য বস্ত্র, স্বাভাবিক খাদ্য পানীয়। (তিরমিযী ২য় খন্ড পৃ:৫৯)।
অন্যত্র রাসুল (সা:) বলেছেন: তারা তোমাদের ভাই! আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তাই-ই খাওয়ায় যা সে খায়! সেই কাপড় পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যর অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে। (বুখারী : ৫৬১৭) উপরোল্লিখিত হাদিসসমূহে শ্রমিক ও মালিক পরোস্পরের মধ্যে শ্রেণিবৈষম্যের বিলোপ সাধন করা হয়েছে। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ
যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠছে টোকিও : বাড়ছে ভিড়