ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য

Daily Inqilab ফজিলা ফয়েজ

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ এএম

চল্লিশ দশকের বিদ্রোহী ও কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৫ আগস্ট, ১৯২৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যা তখন ব্রিটিশ ভারতের একটি অংশ ছিল। তাঁর পিতা নিবারণ চন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন একজন প্রকাশক এবং একটি লাইব্রেরীর মালিক সেই সুবাদে সুকান্তের বিশ্বদৃষ্টি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

কৈশোর থেকেই তিনি সাম্যবাদী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। সুকান্ত ছোটবেলা থেকেই বিস্তৃত ধারণা ও দর্শনের সাথে পরিচিত। লেখালেখি ও কবিতার প্রতি সুকান্তের আবেগ প্রথম দিকেই বিকশিত হয় এবং শীঘ্রই তিনি নিজেকে একজন প্রতিভাবান ও প্রসিদ্ধ লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর কবিতা সাহসী এবং বিপ্লবী চেতনার অধিকারী। সুকান্তের বিপ্লবী লেখা তাকে ব্যাপক পরিচিতি ও প্রশংসিত করেছিল। তার কবিতা শ্রেণী, ধর্ম, জাতিগত বাধা অতিক্রম করে সর্বস্তরের মানুষের কাছে অনুরণিত হয়েছিল।

বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী কবি। চল্লিশের বিশ্ব যুদ্ধের তা-ব ও মরণ ছোবলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন কবি সুকান্ত। দেশ বিভাগের সহিংসতা এবং রক্তপাত প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতা নিপীড়িত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য লড়াই করেন।

যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষে ঝাঁঝরা হলেও মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থেকেছিল বাংলাদেশ। দুর্ভিক্ষে লাশ হওয়া মানুষের কঙ্কালের উপর দিয়ে চলল বৃটিশের যুদ্ধের অভিযান। মৃত্যু মানুষের হার গুড়িয়ে চললো ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া আযানের বহর। সেই বিচূর্ণ হারের ভেতর থেকে জ্বলতে থাকল আগুন। জ্বলে উঠলো প্রতিরোধের দাবানল। কোটি শিখা হয়ে দিকে দিকে জ্বললো স্বাধীনতার মশাল। সেদিনের সেই নব জাগ্রত বাংলাদেশকে বিপ্লবী কবি সুকান্ত দেখেছেন তার তিমির বিদারী উদার অভ্যুদয়ের এক রক্তিম সূর্যালোক। ‘দুর্মর’ শিরোনামের কবিতায় এই জাগরণকে নন্দিত করে তিনি লিখলেন:

‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ
কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছাসে;
সেই কোলাহলে রুদ্ধ রুদ্ধস্বরের আমি পাই উদ্দেশ্য
জলে ও মাটিতে ভাঙনের বেগ আসে।’
এর পরের স্তবকে লিখেলেন:

‘হঠাৎ নিরীহ মাটিতে কখন
জন্ম নিয়েছে সচেতনতার ধান;
গত আকালের মৃত্যুকে মুছে-
আবার এসেছে বাংলাদেশের প্রাণ’

শেষে রক্তের হরফে আগাম বিজয়ের ঘোষণা রাখলেন বিপ্লবী তরুণ এই কবি:

‘সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী তাকিয়ে রয়:
জ্বলে পুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়
এবার লোকের ঘরে ঘরে যাবে সোনালী নয়তো রক্তে রঙিন ধান,
দেখবে সকলে সেখানে জ্বলছে দাউ দাউ করে বাংলাদেশের প্রাণ।’
মহৎ কবিরা আগামী দিনকে ধারণ করে তাদের অনুভবে। চল্লিশ দশকের শেষ দিকে কথাগুলো উচ্চারণ করেছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ভবিতব্যের মতো।
দুই দশক পরে সত্তরে এসে জ্বলে পুড়ে ছারখার হওয়া বাংলাদেশের মাঠ থেকে আমরা তুলেছি স্বাধীনতার ফসল। আর সেই ফসল ছিল রক্তধোঁয়া।
কারণ ত্রিশ লক্ষ শহীদের খুন রাঙা ছিল আমাদের মাঠের সেই ধান।

তার কবিতাগুলি স্বাধীনতার জন্য একটি মিছিলকারী আর্তনাদ ও জনসাধারণের মধ্যে প্রতিরোধের চেতনা জাগিয়ে তোলে।
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো বাংলাদেশের প্রাণ
কেনো ঘরে ঘরে গড়ে উঠলো এত রণাঙ্গন?
কেনো এত রক্ত বিসর্জন?
সুকান্ত এই প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলেন:

‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান
চলে যাবো তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ’

প্রাণপনে পৃথিবীর সারাবো জঞ্জাল অঙ্গীকার ঘোষণা করে বলেন:
এ বিশ্বকে,
এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি;
নব জাতকের কাছে আমার দৃঢ় অঙ্গীকার করে লেখেন:
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুরে- করে যাবো আশীর্বাদ’
তারপর হবো ইতিহাস।

কি আশ্চর্য মিল সুকান্তর এই পঙ্গক্তিগুলোর সঙ্গে সত্তর দশকের যুদ্ধের সাথে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণে আগামী দিনের শিশুদের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ রচনার প্রত্যয় জাগিয়ে তুলেছে ন এই নতুন প্রজন্মের কবি।
উচ্চকিত সরে গাইছেন:
‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি;
মোরা একটি শিশুর মুখে হাসি ফোটাবো বলে যুদ্ধ করি’

১৯৭১ সালে, যখন বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তখন স্বাধীনতা আন্দোলনে সুকান্তের লেখাগুলো ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়। তার বাণী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং বাঙালির সম্মিলিত চেতনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্যের তার কালজয়ী কবিতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অটল অঙ্গীকারের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। তাঁর কবিতাগুলি সামাজিক পরিবর্তন আনতে শিল্প ও সাহিত্যের শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা