ডেঙ্গু গল্প

Daily Inqilab জোবায়ের রাজু

০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম

পুরো হাসপাতাল জুড়ে ডেঙ্গু রোগী ভরপুর। সবগুলো হাসপাতালের একই অবস্থা। ডেঙ্গু জ্বর প্রকট আকার ধারণ করেছে। আজ পাঁচ দিন ধরে হসপিটালে স্বামী পলাশকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে শোভা ডাক্তার যখন বলল পলাশের অবস্থা চরম গুরুতর। শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরে কিনা বলা যাচ্ছে না। ডাক্তারের তথ্যটি শোনার পর শোভার পুরো পৃথিবী কেঁপে উঠল। পলাশের যদি কিছু হয়ে যায় তবে সে কোথায় যাবে। সৎভাইদের কাছে আশ্রয় তো দূরের কথা, কোনো আত্মীয় তাকে একদিনের জন্যও ঠাঁই দেবে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরো পৃথিবীকে শোভার জানা হয়ে গেছে। স্বার্থ ছাড়া কেউ কাউকে দয়া করে না। আবার পলাশও যে তাকে দয়ার সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে, এমনও না। দাম্পত্য জীবনে এই মানুষটা তাকে কোনোদিন কোনো দিক থেকে সুখ দেয়নি। শ্বশুর শাশুড়ি আর ননদ তাকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু পলাশ কখনো তার সাথে সোজা পথে চলে না। কারণে-অকারণে ভুল ধরা থেকে শুরু করে কখনো নির্জনে দুটি মনের কথা বলতে পলাশ বরাবরই নিজেকে কাপুরুষ প্রমাণ করেছে। স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তাকে পারিবারিক চাপে পড়ে বিয়ে করতে হয়েছে। বাবলি নামের একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল পলাশের। সেই সম্পর্ক মানেনি পলাশের বাবা-মা। জোর করে শোভার সাথে বিয়ে দেন তারা। কিন্তু অভাগী হয়ে গেল শোভা সুযোগ্য পাত্রী আর সংসারের জন্য মানানসই বউ হিসেবে শোভা অতুলনীয় হলেও স্ত্রীর মর্যাদা অর্জনে সে ব্যর্থ। পলাশ একই ছাদনা তলার নিচের দিনের পর দিন সংসার হয়ত করেছে, কিন্তু সংসারী হতে পারেনি।

সেই পলাশ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হবার পর হাসপাতালে এসে শয্যাশায়ী হবার পর বাবা-মা বোনেরা তাকে কেউ দেখতে আসেনি। কারণ সংসারের প্রতি খামখেয়ালী করার কারণে পরিবারের সদস্যরা অনেক আগেই পলাশকে মন থেকে বহিষ্কার করেছে। এই নির্মম হাসপাতালে অসুস্থ রোগী পলাশকে একমাত্র শোভাই সেবা যতœ করে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে।

আজ পলাশের শরীরটা একটু ভালো। স্বাভাবিক লাগছে সবকিছু। স্বামীর এমন সুস্থতায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নামছে শোভার। কেবিনে শুয়ে আছে পলাশ। ছোট্ট কেবিনের একপাশে ফ্লোরে ওড়না বিছিয়ে শুয়ে পড়তেই ঘুম চোখে নেমে এল। আজ কয়েকদিন এখানে পলাশের সেবায় ঘুমে শোভর দারুন সমস্যা হয়েছে।

ঘুম ভাঙলো ২ ঘণ্টা পর। জেগে দেখে পলাশ কেবিনে নেই। কোথায় গেল! ফোন দেয় পলাশকে। ওপাশ থেকে পলাশ জানায়, আমি ছাদে এসেছি। তুমি আসবে?

বুকটা ধক করে উঠে শোভার। আজকে পলাশের কন্ঠে এত নমনীয়তা কেন! মনে হচ্ছে ছাদে যাবার ওই আহবানে একধরনের মায়া আছে।

দৌড়ে শোভা চলে এল ছাদে হাসপাতালের এই সুবিশাল ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে পলাশ। তার হাতে একটি রঙ্গন ফুল। শোভাকে দেখে পলাশ এগিয়ে এসে বলল, এই ফুল তোমার জন্য। গোলাপ হলে ভালো হত। ছাদের এই টপগুলোর গাছে কেবল রঙ্গনটাই পেলাম। আমার এই কর্মকা-ে অবাক হচ্ছো? হাহাহা। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। হাসপাতালে যেভাবে আমাকে আগলে রাখলে, আমি সব খেয়াল করেছি। অথচ তোমাকে বিয়ের পর থেকে কেবল অবহেলাই উপহার দিয়েছি। আজ থেকে আমার পক্ষ থেকে তোমাকে অবহেলা দেওয়ার দিন শেষ। তুমি কি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে?

কোনো জবাব দিতে পারছে না শোভা। তার যে কান্না আসছে। শোভার জীবনে আনন্দ কম। তাই সে আনন্দ অশ্রুর অনুভূতির সাথে এই প্রথম পরিচিত হচ্ছে। কিন্তু তার থেকেও ভালো লাগছে পলাশের হাতের ওই রঙ্গন ফুলটি দেখে। ভাবতে অবিশ্বাস লাগছে যে এই ফুল তার জন্য। শোভার চোখের জল টপটপ করে ঝরে পড়ার পর এবার অবিরাম ঠোঁট কাঁপছে। কি যে এক অবস্থা।

 


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নববর্ষের ঘোষণা
রক্তমাখা শার্ট
জেগে থাকো পূর্ণিমা : সমাজ বাস্তবতার আখ্যান
বাংলাদেশের কবিতা ও সমকালীন সাহিত্য
ধৈর্যের বসতঘর
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ