গফুর স্যার ও আমি
১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
তাঁর সে সাক্ষাৎকার পর্বেই এটাও জানতে পারি যে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে স্ট্যান্ড করা ছাত্র হওয়ার পরও তাঁর এম.এ. ডিগ্রি নিতে বেশ কয় বছর বিলম্ব করতে হয়। সাংবাদিকতা দিয়ে জীবন শুরু করলেও এম.এ. পাসের পর তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এবং ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর তখন থেকেই তাঁর নামের সাথে অধ্যাপক শব্দটি যুক্ত হয়। ভাষা আন্দোলনের একজন সৈনিক এবং আন্দোলনের মূখপত্র সৈনিক এর সম্পাদক হিসেবে তিনি আমার নিকট একজন ভাষা সৈনিক পরিচয়েই প্রথম থেকে পরিচিতি পান।
১৯৮১ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় তরুণ সংঘ কিশোরগঞ্জ থানা শাখার পক্ষ থেকে ‘একুশের উত্তরসূরী’ নামে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তদানীন্তন কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরে লেখক-সম্পাদক হিসেবে আমার আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ। কৌশলে আমি আমার একুশ বছর বয়সকেও উদযাপন করি এ পত্রিকা প্রকাশের ভেতর দিয়ে। ঐ বছরই ঢাকার জাতীয় দৈনিকে এবং জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের মাসিক ‘বই’ পত্রিকায় লেখা প্রকাশের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের লেখালেখিতেও বিচরণ শুরু। লেখার জন্য সম্মানী পাওয়ার বিষয়টিও তখনই প্রথম জানতে পারি জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বই পত্রিকায় প্রকাশিত ‘কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরী ও মিউজিয়াম’ শীর্ষক লেখার জন্য ৫০ টাকার একটি সম্মানীর চেক পেয়ে এ সময় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ফজলে রাব্বি সাহেবের সাথেও আমার পরিচয় গড়ে ওঠে।
গফুর স্যারের লেখা নিয়ে সমালোচনা
১৩৮৯ বাংলা সনের ৫ ফাল্গুন ( ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩) সংখ্যা দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার শুক্রবার সংখ্যার সাহিত্য পাতায় অধ্যাপক আবদুল গফুর সাহেবের লেখা ‘মোবিনুদ্দিন আহমদ জাঁহাংগীর নগরী’র ‘নবীশ্রেষ্ঠ’ শীর্ষক পুস্তক পরিচিতি মূলক একটি লেখা পাঠ করি। আসলে এ লেখাটি ছিল জাহাঁগীর নগরী সাহেবের লেখা ‘মেফতাহুল ফোরকান বা কোরআন তত্ত্ব’ তৃতীয় খ-, যার পুন: মুদ্রণকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক ‘নবীশ্রেষ্ঠ’ নামকরণ করা হয়েছে এর উপর আলোচনা। ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বিভাগ এ ধারার গুরুত্বপূর্ণ বই হাতে পেলে পুন:মুদ্রণের ব্যবস্থা করবে এমনটাই হয়তো স্বাভাবিক। বইটির উপর আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক আবদুল গফুর তাঁর হাতে যা তথ্য আছে সে নিরিখেই আলোচনাটি করেছিলেন। কিন্তু মফস্বলের একজন নিবিষ্ট পাঠক হিসেবে তাঁর সেদিনের আলোচনা আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি। ১৯৭৬ সালে গুরুদয়াল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেবার পর রেজাল্ট বের হবার আগে যে বিশেষ কিছু পড়ালেখা করেছিলাম সে সময় আমার বড় ভাই মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী এবং আলিমুদ্দিন লাইব্রেরির মালিক কামাল উদ্দিন সাহেবের সূত্রে কিশোরগঞ্জ জামেয়া রোডের জনাব শাহজাহান মিঞা পিতামৃত আবদুল বারী এর সাথে পরিচয় গড়ে ওঠে। তিনি একজন গ্রন্থ পাঠক এবং বেশ কিছু দুর্লভ সংগ্রহের অধিকারী। বড় ভাই ছিলেন খুব পড়–য়া। তিনিই প্রথম শাহজাহান মিঞার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে মোবিনুদ্দিন আহমদ জাঁহাগীর নগরীর লেখা ‘মেফতাহুল ফোরকান বা কোরআন তত্ত্ব’ বইয়ের প্রথম খ- থেকে শুরু করে চতুর্থ খ- পর্যন্ত এনে পাঠ করেন। এ সময় বইটির সাথে আমার সংযোগ ঘটে। বড় ভাই বইগুলো ফেরৎ দেবার পর শাহজাহান মিঞার কাছ থেকে আবার এনে এগুলো আমিও পাঠ করি। কিশোরগঞ্জে তখনো ফটোস্ট্যাট মেশিন আসেনি। যে কারণে বইয়ের খ-গুলো হাতে লিখে কপি করার চিন্তাও মাথায় এসেছিল কিন্তু অচিরেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় আর সেটি করতে পারিনি। তবে বইটির প্রকাশক, বইয়ের লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং বইয়ের সূচী ইত্যাদি বিষয়গুলো নোট করে রাখি। বইয়ের মালিক বইটি ফেরৎ দিতে বার বার তাগাদা দিতে ছিলেন। আমি তাঁর বইগুলো ফেরৎ দিলাম এবং আরেকবার আমাকে পড়ার সুযোগ দিতে অনুরোধ রাখলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বইগুলো দ্বিতীয়বার আর আমার হাতে পাইনি। বইয়ের মালিক বইগুলো বাসা থেকে কেবা বা কারা নিয়ে গেছে বলে জানালেন। এরপর যতবার বিষয়টি স্মরণ করিয়েছি তিনি বইগুলো পাওয়া যায়নি বলেই বার বার জানিয়েছেন। একবার পাঠ করার কারণে ‘মেফতাহুল ফোরকান বা কোরআন তত্ত্ব’ সম্পর্কে এবং এর লেখক সম্পর্কে কিছু তথ্য আমার খাতায় নোট করা থাকায় মোটামুটি যতটুকু জানতাম দেখলাম গফুর সাহেবের লেখায় তাও নেই। তাঁর এ বই পরিচিতি মূলক আলোচনাটি আমি ‘মূল্যবান আলোচনা’ উল্লেখ পূর্বক এ প্রসঙ্গে আরো কিছু তথ্যের জানান দিতে একটি প্রতিক্রিয়ামূলক লেখা পাঠাই। লেখাটি উক্ত পত্রিকায় পরের সপ্তাহের সাহিত্য পাতায় অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ সংখ্যায় ‘নবী শ্রেষ্ঠ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে ছাপা হয়। লেখাটিতে আমি গ্রন্থটির মোট পাঁচটি খ-ের কোনটিতে কি সূচী রয়েছে সে বিবরণ দেয়ার পাশাপাশি লেখকের নয় পুরুষের তালিকা পেশ করেছিলাম। সে তালিকার প্রথম ব্যক্তি আহমেদ মের্জা স¤্রাট শাহজাহানের ‘মীর-ই-মুনশী’ অর্থাৎ চীফ সেক্রেটারি বা প্রধান সচিব ছিলেন এ কথাটি উল্লেখ করেছিলাম এবং ঢাকায় তাদের ঠিকানা কোথায় তাও উল্লেখ করেছিলাম। তিনি পরবর্তীতে ফাউন্ডেশনের চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে আবার পত্রিকা অফিসে যোগদান করেন। ফলে তাঁর হাত দিয়ে এ গ্রন্থটির অন্য কোন কপি আর উদ্ধার ও ছাপা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি বাংলাদেশের বড় বড় লাইব্রেরিগুলোতে খুঁজে দেখেছি এ বইটি আর কোন লাইব্রেরিতেই পাইনি।
প্রথমে ছিলাম গফুর সাহেবের ভক্ত। তাঁর একটি লেখার সমালোচনা করার সুবাদে এবার তাঁর সামনে আবির্র্ভূত হবার সুযোগ পেলাম। পরবর্তীতে তিনি যখন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ফিচার এডিটর তখন একদিন তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে সরাসরি পরিচয় করলাম।
স্বল্পভাষী অথচ হাঁসিমুখ অধ্যাপক আবদুল গফুর সাহেব প্রথম পরিচয়েই আমার সাথে বেশ কিছু বিষয়ে মত বিনিময় করলেন। আমি তখন কিশোরগঞ্জ টেক্সটাইল মিলে কর্মরত। আমার বস টেক্সটাইল মিলের সে সময়কার জেনারেল ম্যানেজার মোবায়েদুর রহমান সম্পর্কেও তিনি আমার কাছ থেকে জানলেন। পরবর্তীতে যখন টেক্সটাইল মিলের চাকুরী থেকে ঢাকায় আয়কর বিভাগের চাকুরীতে যোগদান করি তখন মোবায়েদুর রহমান সাহেবও ইনকিলাবে যাতায়াত করতেন এবং সেখানে মোবায়েদুর রহমান সাহেবের সাথেও দেখা-সাক্ষাৎ হতে লাগলো। সাহিত্য পাতার হাসনাইন ইমতিয়াজ সাহেবের সাথে তাঁর পাতায় লেখা ছাপার সুযোগে পরিচয় হলো অনেকের সাথে।
ঢাকার একটি সাহিত্য সম্মেলনে
বিভিন্ন প্রোগ্রামে এবং বিভিন্ন জাতীয় কমিটিতে তাঁর সঙ্গে আমার আরো কিছু ছিটেফোটা কাজের সংযোগ রয়েছে। বাংলা সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত ১৯৯৭ সনের ১৩,১৪ ও ১৫ জুন তিন দিন ব্যাপী ৪র্থ জাতীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মেলন ঢাকাস্থ বেইলি রোডের গাইড হাউজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মোট ৩টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন উদ্বোধনীর পর বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সেমিনার। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করি আমি-বিষয় ছিল ‘স্বাধীনতা উত্তর সাহিত্য আন্দোলন: প্রেক্ষিত আমাদের ঐতিহ্য’। এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন কথাশিল্পী অধ্যাপক শাহেদ আলী আর প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কাজী দীন মুহম্মদ। একই দিনে দ্বিতীয় সেমিনার ছিল ‘আধুনিক কবিতা: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত’ প্রবন্ধকার ছিলেন ড. হুমায়ুন কবীর। (অসমাপ্ত)
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তিলক ভর্মার বীরত্বে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়
তিলক ভর্মার বীরত্বে ভারতের রোমাঞ্চকর জয়
সিটি অধিনায়কের নতুন ঠিকানা এখন এসি মিলান
ছাগলনাইয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত
মতলবে আদিবা হত্যা মামলার আসামী ইমনের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা
গাজাকে বাসোপযোগী করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসেই জনগণের আস্থা
টি-টোয়েন্টির বর্ষসেরা আর্শদিপ
দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানোর ঘোষণা কানাডার
এ দেশকে নিয়ে আমরা আর কাউকে খেলতে দেব না - মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান
গ্রামীণ ট্রাস্টের মালিকানায় আসছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়
সৈয়দপুরে শ্যাইলার মোড় জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরন
জেলা বিএনপির আমৃত্যু সভাপতি খোরশেদ আলমের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা
সৌদির নতুন জাতীয় সংগীতের সুর করবেন মার্কিন তারকা
প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন : লুৎফর রহমান খান আজাদ
শেরপুরে আন্তঃউপজেলা ভলিবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে সদর উপজেলা চ্যাম্পিয়ন
সৈয়দপুরে শ্যাইলার মোড় জামে মসজিদ কমিটির উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ
আছরের নামাজে বিলম্ব হয়ে মাগরিবের নামাজ শুরু হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।
আ.লীগ সরকার জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প
বাংলা একাডেমি পুরস্কারের ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত