ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা সম্পূর্ণ সত্যি নয় : ক্যাব

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২২ জুন ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ০৬:৩১ পিএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে এ কথা সম্পূর্ণ সত্যি নয় বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ‘ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বাজার পরিস্থিতি ও ভোক্তা স্বার্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘দেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তবে এটা সম্পূর্ণ সত্যি নয়। এটা অর্ধেক সত্যি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট পলিসি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে এমনটি করা হয়নি। আমাদের এখানে কী হচ্ছে... গত ১১ মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই টাকা কোথা থেকে দিলো? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকশাল আছে। টাকশাল থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে।’

‘অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হয় তার প্রভাব বাজারে এসে পাঁচ গুণ হয়। অর্থাৎ অর্থ সরবরাহ পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। ৭০ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা অর্থ বাজারে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজেটের ঘাটতি মেটানো মূল্যস্ফীতির একটা বড় কারণ বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। আমাদের দেশে ২০২০ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেটকে নয়-ছয়ের বাঁধনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লাগাম টানার যে হাতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ছিল, তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্য সেবা নিয়ে মূল্যস্ফীতি হিসেব করে তার সবগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে না। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে ৫০ থেকে ৬০টি পণ্য। তাই ৫০-৬০টি পণ্য জীবনধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। টিসিবির পণ্যের যে বাজার দর সেটা যদি পর্যবেক্ষণ করেন দেখবেন গত এক বছরে অনেক পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার প্রতিফলন ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক ইনডেক্সে সঠিকভাবে হচ্ছে বলে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না।’

নিত্যপণ্যের বাজার সরকারের সংস্থাগুলোর তদারকি আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ক্যাব সভাপতি। বলেন, ‘আমাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে বর্তমান যে প্রশাসনিক কাঠামো, সেটাকে আরও জোরদার করা প্রয়োজন। আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুইটা ডিভিশন থাকা উচিত। একটা কনজুমারস অ্যঅফেয়ার্স ডিভিশন অন্যটি বিজনেস ডিভিশন। যেসব বড় বড় কাজ যেমন আমদানি-রপ্তানি এগুলো বিজনেস ডিভিশন দেখবে। ভোক্তাদের স্বার্থ দেখবে কনজুমারস অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন। সরকারের সব মন্ত্রণালয় ভোক্তার স্বার্থকে প্রথমে দেখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সংস্থার সাথে ভোক্তা স্বার্থ জড়িত। এসব সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করে ভোক্তা বান্ধব করার একটা সুযোগ আছে। সেটি এখন হচ্ছে বলে আমরা মনে করি না। এখন যে এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ পাবলিক ডিসট্রিবিউশন, এটাও এই ডিভিশনের আওতায় থাকবে। এই ডিভিশন ভোক্তা স্বার্থ দেখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোরবানি ঈদের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের প্রভাব বাজারে তেমন পড়ছে না বলে মনে করছে ক্যাব। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা ও অসহায় হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্দেশে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তারা পাঠ করেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনসহ ক্যাবের জেলা কমিটির সদস্যরা।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
আরও

আরও পড়ুন

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

আবাসিক হোটেলের নামে মাদকের আড্ডা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

নোয়াখালীতে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে বিদায়ী সংবর্ধনা

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

খুলনাকে বিদায় করে ফাইনালে মেট্রো

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর