বাজেটে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে : সিপিডি

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২২ জুন ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ০৬:৪৩ পিএম

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের আগ্রহ কম থাকায় এবারের বাজেটে তা গুরুত্ব পায়নি। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে রূপ নিতে চলেছে। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিষয়ক সমস্যা এবং প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম, বদরুল ইমাম ও এজাজ হোসেইন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। বাজেটে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে তা ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, মেগাওয়াট কিন্তু পাওয়ার। জ্বালানি ছাড়া মেগাওয়াট কিছুই উৎপাদন করতে পারবে না। সুতরাং জ্বালানি নিশ্চিত না করে মেগাওয়াট বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।

তিনি বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। এবারের বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য তেমন কিছুই বরাদ্দ রাখা হয়নি। যদি রাখা হতো তাহলে সংকট মোকাবিলার একটি পথ তৈরি হতো। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারেও সরকারের কর্মক্ষমতা লক্ষ্য করা যায় না। আমরা বলেছি যে, প্রতি বছর নতুনভাবে ২৫টি গ্যাসকূপ আবিষ্কার করা দরকার, যা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে এলএনজির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, এখন যে জ্বালানি সংকট... শিল্প কারখানায় জ্বালানি না দিতে পারার কারণে যে ইফেক্ট তৈরি হচ্ছে, কারখানায় উৎপাদন ঠিকমতো হচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে ও ব্যয় কমাতে কর্মচারী ছাঁটাই হচ্ছে। সংকট নিয়ে আমরা এর আগে যে কথাগুলো বহুদিন ধরে বলে আসছি, এখন সেগুলো পরিণতিতে পরিণত হচ্ছে।

শামসুল আলম বলেন, বড় বাজেট সরকার অনেক আনন্দ উৎসব করে পেশ করে, তারা যত বেশি আনন্দিত হয়, আর আমরা শঙ্কিত হই। এবারের বাজেটের অবস্থা দেখে আমার প্রথম মনে হচ্ছিল, সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা যখন বলছিলেন আমরা অনেক বড় বাজেট দিতে পেরেছি, এত বড় বাজেট দেওয়া একটা বিরাট সাহসের ব্যাপার। কিন্তু সেখানে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশ, আমাদের ক্যাবের হিসেবে তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়বে, কারণ যারা বিক্রি করে বা রপ্তানি করে, সেই কৌশল তাদের জানা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম নাও বাড়ে তারপরও তো আমাদের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। তাহলে আমি এতবড় বাজেট দেখে কেন আতঙ্কিত হব না?

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, আমাদের এখন মূল সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি সংকট ও গ্যাসের সংকট। এ সংকট সহসাই কেটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বরং সামনে তা আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে জ্বালানি আমদানি করতে ১০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ সেই খরচ ২০ বিলিয়নে পৌঁছাবে। জ্বালানির এই চাহিদা কীভাবে মেটানো হবে? এখনো সময় ও সম্ভাবনা রয়েছে দেশীয় খাতে নজর দেওয়ার। যদি যথাযথ অনুসন্ধান করা হয়, বছরে তিন থেকে চারটি নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া যাবে। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। কিন্তু দেশীয় সম্ভাবনা থাকার পরেও ডলার সংকটের মধ্যে কেন আমরা আমদানিতে নির্ভরশীল হব?

বক্তারা বলেন, শেভরনের অধীন বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র এবং সরকারের অধীন তিতাস গ্যাসক্ষেত্র একই মজুদ ও উৎপাদনক্ষম গ্যাসকূপ। অথচ বিবিয়ানা প্রতিদিন ১২০০ এমএমসিএফ গ্যাস উত্তোলন করে, অপরদিকে তিতাস উত্তোলন করে ৩০০ এমএমসিএফ গ্যাস। উৎপাদনের এই ব্যর্থতার কারণ হলো কারিগরি সমস্যা। এদিকেও নজর দিতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, বাপেক্স তার সক্ষমতা অনুসারে বছরে তিনটি কূপ খনন করতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তারা সেটা করতে পারে না। তাদের চেয়ে থাকতে হয় মন্ত্রণালয়ের দিকে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় গ্যাস ডেভলপমেন্ট ফান্ড তৈরি করেছিল শুধুমাত্র বাপেক্সের অনুসন্ধান ও উত্তোলন কাজের জন্য। সেই ফান্ডে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, বাপেক্স সেই টাকা পায়নি। বরং সেই ফান্ড থেকে ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
আরও

আরও পড়ুন

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর

সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা

গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট