ছেলেটা জীবিত আছে কিনা জানতে চাই

গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনের আহাজারি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

 

২০১৫ সালের ১৭ মার্চ। সকাল সাড়ে আটটায় ফকিরাপুলের ২৯১ নম্বর ভাড়া বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে মাজহারুল ইসলাম রুবেল নামের ব্যবসায়ীকে আটক করেন ৭-৮ জন। তাকে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার আকস্মিকতায় পরিবারের সদস্যরা হতবিহবল হয়ে পড়েন। শান্ত স্বভাবের রুবেল কী অপরাধ করেছে সে বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চান সবাই। কিন্তু সন্তোষজনক কোনো জবাব কিংবা ওয়ারেন্ট না দেখিয়েই নিয়ে যান তারা।

 

এরপর থেকে শুরু হয় পরিবারের সদস্যদের দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আজও সন্ধান মেলেনি রুবেলের। তবে সবাই হাল ছেড়ে দিলেও হাল ছাড়েননি মা রহিমা। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে প্রিয় সন্তানের সন্ধানে ঘুরছেন থানা, কারাগার, কোর্ট, ডিবি অফিস, র‌্যাব-১, র‌্যাব- ৩, র‌্যাব সদরদপ্তরে। কিন্তু রুবেলের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবুও আশাবাদী রহিমা। হয়ত প্রিয় ছেলেকে ফিরে পাবেন এমন আশায় রুবেলের ছবি বুকে জড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। তিনি বলেন, আর কোনো ইচ্ছা নাই। আর কিছু বলার নাই। মরার আগে জানতে চাই গুমের শিকার ছেলেটা জীবিত আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে। অবশ্য এমন দাবি শুধু রহিমার নয়, সারাদেশ থেকে গুম হওয়া ৫০ জনের বেশি মানুষের স্বজনরা প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গুমের শিকার বাবার সন্ধানে আসা মেয়ে সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবার নাম মো. মোস্তফা। তিনি দোকানদার ছিলেন। মিরপুরের ভাষানটেক এলাকা থেকে ২০২০ সালের ৬ জুন তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে হায়েস গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। পরে আমরা জিডি এবং মামলা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। পরিবারের সবাই দিশেহারা। আমার মা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা। আমি আমার বাবার সন্ধান চাই।

 

বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন অভিযোগে কুড়িল থেকে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ গুমের শিকার হন মো. সুজন। এরপর থেকে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন স্বামীর সন্ধানে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আর খোঁজ মেলেনি তার। নাজমা আক্তার বলেন, আমার একটা সন্তান নিয়ে আমি খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ২০১৯ সালে সাদা পোশাকে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তখন স্বামীর সন্ধান চেয়ে থানায় জিডি ও মামলা করতে চেয়েছিলাম। একটা সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন কিছুই করতে দেওয়া হয়নি। আমার ছোট্ট ছেলেটি এখন বড় হয়েছে। সারাক্ষণ বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। আমি কোথায় যাব কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।

নাজমা বেগমের পাশেই বাবার ছবি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে ছেলে হৃদয়কেও। বাবা হারানোর বেদনায় অল্প বয়সেই শোকে পাথর হয়েছে শিশুটি।
রাস্তায় চোখের সামনে নিজের স্বামীকে গুম হতে দেখে এমন আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি। আমার স্বামীর নাম কামরুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২২ জন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানাধীন এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ডিবি পরিচয় তাকে ধরা হয়েছিল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তার সন্ধান আর পাইনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত স্বজনরা গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে বর্তমান সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান।

 

এ সময় স্বজনহারা সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবিও তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফেরত দিতে হবে; প্রতিটি সেল (আয়না ঘর) বর্তমান গুম কমিশনের দায়িত্বশীলদের দেখতে দিতে হবে; যাদেরকে খুন করা হয়েছে তাদের পরিবারকে সনদ দিতে হবে; প্রতিটি নিখোঁজ পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; স্বাধীন বাংলাদেশ কোনো প্রকার আয়না ঘর থাকতে পারবে না; আয়নাঘর এবং সব টর্চার সেল ভেঙে ফেলতে হবে; প্রশাসন কালো কাচের গাড়ি ব্যবহার করতে পারবে না; সব থানাতে মামলা নিতে হবে; গুম-খুনে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনতে হবে; এবং আলোচিত সাত খুনে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘দেশে নয়া ইসলামি সভ্যতা গঠনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনার করলো ইরান দূতাবাস
ভারতীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে
উত্তরখানে পুলিশ ছাত্র-জনতা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয় সভা
কম্বল বিতরণ করলেন ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া
ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু হচ্ছে জনতার বাজার
আরও

আরও পড়ুন

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

শীতে পশু-পাখিদের যত্ন

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মানব পাচার রোধ করতে হবে

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০