শেরপুর উত্তরে ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা এখন শুধুই স্মৃতি!
০২ জুলাই ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
শেরপুর উত্তরে ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা এখন শুধুই স্মৃতি! সময়ের বিবর্তণ, জৌলুস হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা ও যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশে বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক শেরপুর উত্তরের ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা। এখন আর আগের মত নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি নাইউর যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না ধরে না। কমপক্ষে ২৫ নদ-নদীবেষ্টিত শেরপুর জেলার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকার সম্পর্ক। দুই/তিন দশক আগেও এসব নদ-নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পু পু শব্দ অনুভূতি জুগিয়েছে প্রাণে। পালতোলা নৌকায় নদ-নদী ভ্রমণে যতটা না তৃপ্ত হতো মন তার চেয়ে নদ-নদীর পাড় থেকে সারি সারি নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল উড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠতো। শেরপুর জেলার বুক চিরে বয়ে চলা এসব নদ-নদীগুলোর পাড়ে দল বেঁধে মানুষ পালতোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যেতো। আর মাঝ নদী থেকে ভেসে আসা কণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মন তৃপ্ত হতো।
এসব নদীকে ঘিরে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। এ পাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত এই নৌকা। কিন্ত কালের পরিক্রমায় এ সব নৌকা এখন শুধুই অতীত স্মৃতি। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কদাচিৎ নৌকা চলাচল করে। পালতোলা নৌকারতো দেখাই মেলে না। এক সময় সাম্পান, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাওসহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল। যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে গেছে সেই পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল ও দাঁড়বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন।
অথচ এই পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম। শুধু দেশি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশী অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করতো পালের নাও। বিভিন্ন আকার ও ধরণের নৌকা ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এ সব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে।
পালের নৌকার পাশাপাশি মাঝিদেরও বেশ কদর ছিল একসময়। প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার উপর। তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে।
শেরপুর জেলা উত্তরের ঝিনাইগাতী উপজেলার শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী ও আলহাজ্ব শলীফ উদ্দিন সরকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নৌকাই ছিলো আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন নৌকা বা ট্রলারেরও আবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তাঁরা আরো বলেন, আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে হারিয়ে গেছে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পালের নৌকা। কালের আবর্তে এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে- পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও ইত্যাদি ছড়া। বিচিত্র রঙের পালের বাহারিতে ঝলমল করবে না এ দেশের নদ-নদী, খাল-বিল। এরপরও আবেদন থাকবে, পরিবেশ রক্ষার জন্য নদ-নদীগুলো খনন করতে হবে।’
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখা প্রয়োজন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন নৌকা বা ট্রলারেরও আবেদন রয়েছে। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কালিয়াকৈরে চাঁদাবাজের হামলায় চাঁদাবাজ কালামের মৃত্যু
বিরল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়
কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়
আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩
সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা
সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট