অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু
০৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৮ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ঢামেকের জরুরি বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জসিম সাহা (২৪) নামে এক কলেজছাত্র মারা গেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে তাকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও চিকিৎসকরা।
অনুসন্ধ্যান ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে অজ্ঞান-মলম পার্টির তৎপরতা। গত এক মাসেই তাদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, অতিমাত্রায় চেতনানাশক ওষুধের ব্যবহারে প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হলেও থেকে যাচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি।
আর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলেও, রাস্তার পাশ থেকে কোন কিছু খাওয়ার আগে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে নগরবাসীকে।
মোহাম্মদ হামিদুর রহমান (৫০), পেশায় ট্রাক চালক; জয়পুরহাট থেকে পণ্য নিয়ে আসছিলেন ঢাকায়। নগরীর সাইনবোর্ড এলাকায় আসতেই ৫ থেকে ৬ জনের একটি দল মারধর করে জোরপূর্বক চেতনা নাশক ওষুধ খাইয়ে নিয়ে যায় তার সর্বস্ব। জ্ঞান ফিরে দেখেন রয়েছেন হাসপাতালে। গত মঙ্গলবারের ঘটনা এটি। শুধু হামিদুর নয়, গত এক মাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে অনেকে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, অজ্ঞান পার্টি চক্রের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নেই। তবে পুলিশের দাবি, ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ করেন না। অভিযোগ না করায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও তেমন সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলছে, সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতন থাকলে অজ্ঞান পার্টির খপ্পর থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
ঢাকা মেডিকেল ক্যাম্প পুলিশ (ইনচার্জ) ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, জসিমের বাড়ি কুমিল্লা হোমনা উপজেলার ফতের কান্দি গ্রামে। সেখানে রঞ্জিত সাহার দুই সন্তানের মধ্যে জসিম ছোট। জসিম নারায়ণগঞ্জ বন্দরে অবস্থিত সরকারি কদম রসল ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঢামেকে অচেতন অবস্থায় জসিমকে নিয়ে আসেন তার ভাই অসিম সাহা।
তিনি বলেন, চাকরির সুবাদে আমি নারায়ণগঞ্জ শিবু মার্কেট এলাকায় থাকি। ভাই জসিম গ্রামে থাকলেও মাঝেমধ্যে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে অবস্থিত ওই কলেজে এসে ক্লাস করত। শনিবার অথবা রোববার বাসা থেকে বেরিয়ে যায় জসিম। সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছে বলে বিদায় নেয় জসিম। মঙ্গলবার দুপুরেও জসিমের সঙ্গে মোবাইলে ফোনে কথা হয়েছিল। জসিম বলছিল, সে সিলেটে আছে পরে রওনা দেবে।
অসিম আরও বলেন, বুধবার একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। সেই ব্যক্তি বলেন, জসিম নামে এক যুবক যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এমন সংবাদে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে আসি যাত্রাবাড়ীতে। এর আগে পথচারীরা জসিমকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। আমার ভাইয়ের কি হয়েছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সিলেট থেকে আসার সময় অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েছে নাকি অন্য কিছু, আমি কিছুই বলতে পারছি না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতি মাসে ১৫০ জন মানুষ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সেখানে চিকিৎসার জন্য যায়। এদের অনেকেই দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
রাজধানীর একাধিক পরিবহনের হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাত্রী এক জায়গা থেকে উঠলে আমরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দিই। দেখা যায়, কেউ গাড়িতে উঠে ঘুমিয়ে যায়, কেউ মাথা নিচের দিক দিয়ে মোবাইল চাপে। সেক্ষেত্রে কে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে তা বোঝা যায় না। তবে গাড়িতে সচেতনতামূলক কথা লেখা থাকলেও তা কেউ দেখে না।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার) হারুন অর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, অজ্ঞান পার্টি আগেও ছিল এখনও আছে। অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য থামাতে পুলিশের বিশেষ দল মাঠে কাজ করছে। অনেককে ধরে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে তাদের কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। এজন্য পথচারী বা যাত্রী সবাইকে সতর্ক হতে হবে।
তিনি আরও জানান, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা বেশিরভাগই গণপরিবহন ও ভাসমান অবস্থায় অপরাধ করে। তাই এসব চক্র থেকে রক্ষায় জনসাধারণকেই বেশি সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে চলার পথে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, অজ্ঞান পার্টি বেপরোয়াভাবে বেড়েছে। তাদের প্রধান টার্গেট থাকে সাধারণ যাত্রীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এদের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তবে যারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে, ঝামেলা এড়াতে তাদের অনেকে মামলা করে না। আবার মামলা বা গ্রেফতার হলেও স্বল্প সাজা ও জামিনে বের হয়ে যায়। এসব প্রতারণায় আইন কঠোর হওয়া উচিত। তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমে যেত। আবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঝিমিয়ে যাওয়ায় অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে গেছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ থাকা দরকার।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম দুর্ভোগে পথচারীরা
মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা
বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়
জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন
যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার
আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়
কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়
আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩
সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা
সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট
খুবির উৎকর্ষ সাধনে পাশে থাকবে ইরান
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের দাবি হরিরামপুর-শিবালয়বাসীর