চট্টগ্রাম-বান্দরবান-কক্সবাজারে বন্যার পানি কমছে খুবই ধীরে

লাখো পানিবন্দির আহাজারি

Daily Inqilab শফিউল আলম

০৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

ঢল-বন্যায় মানুষের চরম দুঃখ-কষ্ট : খাবার নেই চুলা জ¦লেনি ছিটেফোঁটা ত্রাণ সামগ্রী : কাদা-পানি নামতে বড় বাধা দোহাজারী-কক্সবাজার নয়া রেলপথ : সর্বত্র ভেসে উঠছে ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন : পানির নিচে হাজারো বসতঘর দোকানপাট রাস্তাঘাট-সড়ক ফল-ফসল হাসপাতাল-ক্লিনিক : বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হ চট্টগ্রাম-বান্দরবানে নিহত : নিখোঁজ ১০ জন : ত্রাণকাজে তৎপর সেনাবাহিনী : বন্দরনগরীতে এখনো ময়লাপানি সরাতেই নাকাল


দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানি কমছে। তবে খুবই ধীরে। বানের পানি সামান্য নামতে না নামতেই সর্বত্র ভেসে উঠছে ধ্বংসের ক্ষতচিহ্ন। পাহাড়ি ঢল, ভূমিধস ও বন্যায় চরম দুর্দশায় পড়েছে কমপক্ষে ৬ লাখ মানুষ। স্থানীয় জনগণ বলছেন, গত ৩৮ বছরে কখনও এমন অতি ভারী বৃষ্টিপাত, ঢল-বান তারা দেখেননি। বৃহত্তর দক্ষিণ চট্টগ্রামের তিনটি বন্যা কবলিত জেলা ছাড়াও ব্যাপক পাহাড়ধস হয়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিতে। এ কারণে বন্দরনগরীর এবং রাজধানী ঢাকাসহ আন্তঃজেলা-উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনও প্রায় বিচ্ছিন্ন। বিকল্প পথে পথে যানবাহনের দীর্ঘ জটে যাত্রীরা দুর্ভোগে হয়রান।
গতকাল বুধবার সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পাহাড়ি খর¯্রােতা সাঙ্গু নদী বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ অঞ্চলের অন্যান্য নদী-খাল-বিল, ছরা-নালাগুলোও ফুলে ফুঁসে আছে। যদিও গতকাল বৃষ্টিপাত তেমন হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্ত হালকা বৃষ্টিপাত এবং নদ-নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সঙ্কেত তুলে নেয়া হয়। এদিকে চার-পাঁচ দিনের অতিবৃষ্টি ও পানিবদ্ধতার জের চলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। নগরবাসী এখনও নালা-নর্দমা, খাল-ছরা উপচে পড়া অসহ্য দুর্গন্ধময় ময়লা পানি সরাতে গিয়েই নাকাল হচ্ছেন। অলিগলিতে থমকে আছে কাদা-পানি-জঞ্জাল। ময়লা ও কাদাপানি মাড়িয়ে বাড়িঘর কিংবা কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

আগের দুই দিনে প্রবল পাহাড়ি ঢল-বন্যার জেরে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ১৪টি উপজেলায় এখনো হাঁটু থেকে কোমর সমান উঁচু কাদা-পানির সাথে ময়লা-আবর্জনা ও পাহাড়ধোয়া বালি-মাটিতে সয়লাব হয়ে আছে হাজারো বসতঘর। এরমধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত শত শত ঘরবাড়ি। তাছাড়া ডুব-ভাসি অবস্থায় রয়েছে অসংখ্য দোকানপাট, গোডাউন, রাস্তাঘাট-সড়ক, ফল-ফসলি জমি, শাক-সবজি ক্ষেত, হাসপাতাল-ক্লিনিক। ভেসে গেছে মৎস্য খামার। বন্যার্ত অগণিত মানুষ এখনও বাড়িঘরে ফিরতে পারেননি।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢল ও বন্যার পানি নামার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে দোহাজারী-কক্সবাজার নয়া রেললাইন। যা উঁচু বাঁধের মতো আটকে দিচ্ছে বন্যার পানির স্বাভাবিক অপসারণ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন উন্নয়নের কিছু পাশর্^ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব থাকবে। এটা স্বাভাবিক মেনে নিতে হয়। যারা গতকাল পানি নামতে দেখে বাড়িঘরে গেছেন তারা কাদা-পানি-ময়লা সরাতেই হয়রান। অনেকেরই ঘরে খাবার নেই। মজুদ চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। চুলা জ¦লেনি। সঙ্কট বাড়ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ-পথ্যের। বন্যার্তদের কাছে খাবারসহ ত্রাণ সামগ্রী তেমন পৌঁছেনি।

যেখানে গেছে তাও প্রকৃত প্রয়োজনের চেয়ে ছিটেফোঁটা। সর্বত্রই একই অভিযোগ। ত্রাণের জন্য আহাজারি। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ, মোবাইল টেলিকম ব্যবস্থা অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন ও বিঘিœত। গতকালসহ তিন দিনে পাহাড় ধস, ঢল ও বন্যায় চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে নিহত ও নিখোঁজ হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। পাহাড়ধস ও বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ধার ও জরুরি ত্রাণ কাজে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাসদস্যরা শুকনো ও তৈরি খাবারসহ জরুরি খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধপত্র বিতরণ করছে। ত্রাণ কার্যক্রমে সমন্বয়ের মাধ্যমে সিভিল প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা করছে।

প্লাবিত মহাসড়ক : যোগাযোগ অচল
পাহাড়ি ঢল ও বানের পানিতে এখনো ডুবে আছে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক, রাস্তাঘাট। এরফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে আছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পানিতে ডুবে থাকায় স্বাভাবিক হয়নি যানবাহন চলাচল। মহাসড়কে ৪ জায়গায় বিরাজ করছে তীব্র যানজট। আটকে আছে কয়েকশ’ ছোট-বড় যানবাহন। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল টেলিকম বিপর্যস্ত থাকায় মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম বাবর জানান, খুব ধীরগতিতে গতিতে নামছে বন্যার পানি। তাতে বিশেষত সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার্তদের কষ্ট-দুর্ভোগের শেষ নেই। পানিবন্দি লোকজনকে উদ্ধার ও জরুরি ত্রাণকাজে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বুধবার সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিলটন বিশ্বাসসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় বৈঠক শেষে তারা মাঠে তৎপর হন। সাতকানিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র কেরানিহাট এখনো ৩ ফুট বানের পানির নিচে। গতকাল ও আজসহ দুদিন বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অচল ও বন্ধ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। কেওচিয়া, বাজালিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড়, কালিয়াই, নলুয়া, চরতি,আমিলাইষ, ঢেমশা, সাতকানিয়া সদর ও পৌর এলাকায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি।

বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছে মানুষ। টানা তিনদিন পানিবন্দি লোকজন হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে গতকালও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে দেখা গেছে। কেওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখনো পানিবন্দি হাজারো মানুষ। তাদের জন্য সাধ্যমত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মহাননগরীতে কাদা-ময়লা পানি থৈ থৈ
বিগত পাঁচ দিনের অতি বর্ষণ ও সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যাপক এলাকা ডুব-ভাসির জেরে এখনো কাদা-পানি-আবর্জনা-বর্জ্য আটকে আছে অনেক জায়গায়। গত দুদিনে তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবুও ময়লা কাদা-পানি থৈ থৈ করছে অলিগলি থেকে রাস্তাঘাট, সড়ক পর্যন্ত। ময়লা পানির দুর্গন্ধে টেকা দায়। নগরীর খাল-নালা-নর্দমাগুলো ভরাট ও বেদখল হয়ে গেছে। গতকালও বন্দরনগরীর বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, শোলকবহর, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, চাক্তাই, রাজাখালী, হালিশহরসহ বিভিন্ন স্থানে পানিবদ্ধতা কাটেনি। এরফলে নাগরিক যন্ত্রণা অবর্ণনীয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পঙ্গু করে ফেলছে : শিক্ষা উপদেষ্টা
উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে সোমবার রাষ্ট্রীয় শোক
আরও

আরও পড়ুন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ১

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

কামালপুর সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

মেয়েদের ক্রিকেটে যুক্ত হলো যেসব সুযোগ-সুবিধা

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

বাড়ছে শীতের প্রকোপ, সাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয়

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

যুব এশিয়া কাপজয়ীরা পাচ্ছেন আর্থিক পুরস্কার

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

আদমদিঘীতে বিএনপি কার্যালয় উদ্বোধন

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

গোপালগঞ্জে বিএনপির বহিস্কৃত ও আ. লীগ কর্মীদের নিয়ে বিএনপির ২ জেলা কার্যালয়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

আশুলিয়ায় স্ট্যান্ডে চাঁদার দাবীতে হামলার অভিযোগ; আহত-১৩

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সউদী আরবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দুই নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

শুটিংয়ে গিয়ে আপত্তিকর আচরণ করায় নির্মাতার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর

সালাম মুর্শেদীর ৪ মামলার জামিন নামঞ্জুর

সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সম্প্রীতির জন্য রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা

গবিসাসের নতুন সভাপতি সানজিদা, সম্পাদক ইভা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

খুবির উৎকর্ষ সাধনে পাশে থাকবে ইরান

খুবির উৎকর্ষ সাধনে পাশে থাকবে ইরান

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর নাম বদলে হলো ‘যমুনা রেলসেতু’