নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তে অস্থিরতা
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
নগদ সহায়তা প্রত্যাহারের পূর্ব ঘোষিত সার্কুলারে সংশোধনী এনে কিছু পরিবর্তন করেছে সরকার। এতে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতকে আবারো নতুন বাজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে এসব বাজারে রপ্তানিতে ৩ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। গতকাল নতুন এক সার্কুলারে এই সংশোধনীর কথা জানানো হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে আলোচিত এই তিনটি রপ্তানি গন্তব্যকে প্রচলিত বাজারের আওতাভুক্ত করা হয়েছিল, যেখানে রপ্তানিতে দেওয়া হয় মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ সহায়তা। এর দুই সপ্তাহ পার না হতেই আজকে নতুন প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। আগের প্রজ্ঞাপনটি চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছিল। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে সেটি পেছানো হয়েছে। এতে জানানো হয়, এটি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর করা হবে। এছাড়া, ৩০ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে যেসব পোশাক পণ্যকে নগদ সহায়তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, নতুন সার্কুলারে আবারো তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫ এইচএস কোডের পোশাক রপ্তানিতে আর নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না বলে আগে জানানো হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে, পুরুষ ও বাচ্চা ছেলেদের জন্য নিট বা ক্রশেট শার্ট, টি শার্ট, ভেস্ট, জার্সি, পুলওভার, কার্ডিগান, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, স্যুট ও সমজাতীয় পণ্য। পণ্যগুলোর এইচএস কোডগুলো হলোÑ৬১০৫, ৬১০৭, ৬১০৯, ৬১১০ এবং ৬২০৩।
বিজিএমইএ’র তথ্যমতে, এই পাঁচটি হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোডভুক্ত আইটেম ২৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনে ভূমিকা রেখেছে, যা গত অর্থবছরে হওয়া মোট রপ্তানির ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির মধ্যে যা ছিল ৫৫ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। এই লক্ষ্যে, পর্যায়ক্রমে সব ধরনের রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা হ্রাস করার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা ৩০ জানুয়ারিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। তবে এই উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন রপ্তানিকারকরা। এত দিন বাংলাদেশ মোট ৪৩ খাতে নগদ সহায়তা দিয়ে আসছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নগদ প্রণোদনার ৬৫ শতাংশ বা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার মূল সুবিধাভোগী হলো তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প। এই বাস্তবতায়, নগদ সহায়তা প্রত্যাহার নিয়ে ব্যবসায়ী মহল তাঁদের উদ্বেগ তুলে ধরে। তৈরি পোশাক প্রস্তত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন - বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান নতুন বাজারের ক্যাটাগরি থেকে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে সেসময় বলেন, আমরা এই তিনটা দেশে খুব কষ্ট করে মার্কেট ডেভলপ করেছিলাম। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আমাদের পুরো শিল্পকে ব্যাপক ঝুঁকির মুখে ফেললো।
বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেছিলেন, একদিকে সরকার আমাদের মূল্য সংযোজনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্যদিকে, অন্যদিকে মূল্য সংযোজিত পণ্যের জন্য নগদ সহায়তা তুলে নিচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পোশাক রপ্তানি আয়ে সিংহভাগ অবদান রাখে নিটওয়্যার খাত, কিন্তু এই ধরনের জটিল শর্তেে অর্থ হলোÑখুব বেশি নগদ সহায়তা পাব না। ফলে বিশ্ববাজারে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাব। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক অর্ডার চলে যাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে- যোগ করেন বিকেএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, করদাতাদের টাকায় রপ্তানিতে দেওয়ার প্রণোদনার দিনশেষে সুফল পায় পশ্চিমা ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও তাঁদের ভোক্তারা। পশ্চিমা ব্র্যান্ড ও বায়াররা প্রণোদনার হিসাব করেই দাম ঠিক করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানÑপলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এলডিসি গ্রাজুয়েশন নীতির আলোকে, গত কয়েক বছর ধরেই পর্যায়ক্রমে রপ্তানিতে প্রণোদনা বন্ধের আলোচনা হয়ে আসছে। রপ্তানিকারকরা এখন সুবিধাজনক এক্সচেঞ্জ রেট (বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় দর)- এর সুবিধা পাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে কোন ধরণের নগদ সহায়তার প্রয়োজন নেই- বলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
ধাপে ধাপে রপ্তানি প্রণোদনা প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেনÑসেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা রপ্তানিকারকদের শুধুমাত্র প্রণোদনার মাধ্যমেই সহায়তা করি না। আরও অনেক জায়গা রয়েছে। সেসব জায়গায় অসুবিধাগুলো কমিয়ে আনতে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন- আমাদের অধিকাংশ রপ্তানিকারককে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের অসুবিধা পোহাতে হয়। নানান কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যায়, চাঁদাবাজির কারণেও তাদের খরচ বাড়ে। এসব জায়গাতে কাজ করতে হবে সরকারকে। আমলাতান্ত্রিক সমস্যা দূর করে ব্যবসার বিকাশকে প্রণোদিত করতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই