জননিরাপত্তা রক্ষায় যে কোনো অশুভ তৎপরতা মোকাবিলা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের (আনসার) ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জননিরাপত্তা রক্ষায় যে কোন অশুভ তৎপরতার মোকাবিলা করতে হবে এবং সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে আপনারা সেটা রুখে দাঁড়াবেন। গতকাল সোমবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমবেশ -২০২৪’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। এ সময় সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সততা ও সাহসিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিধানে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের বলবো আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ ও বিনিয়োগের শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। সেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় যে কোন প্রয়োজনে আনসার বাহিনীর সদস্যদের আহবান করা হয় এবং তারা দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ এবং ২০২৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে যখন অগ্নি সন্ত্রাস, রেলে আগুন দেয়া, রেল লাইন কেটে ফেলা, মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি জামায়াত যে ধ্বংসাত্মক কাজ করেছিল তখন জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। এ জন্য আমি সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ৯৬ সালে প্রথম সরকারে আসার পর থেকেই এই বাহিনীর উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে আজকে এই বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাহিনী গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত কাজ করে থাকেন। আমরা গ্রাম উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দুটি নারী ব্যাটালিয়ানসহ এতে ৪২টি ব্যাটালিয়ান রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন উত্তোরণ’ এ দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, অববকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্ম বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। যেটা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কারণ আত্ম বিশ^াস ছাড়া কোন জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আর সেটা তাঁর সরকার আজকে করতে পেরেছে। যে কোন অবস্থা মোকাবিলা করার মত সক্ষমতা আছে আমাদের।

আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করাই সরকারের কাজ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় অব্যাহত থাকবে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন।
ইতোমধ্যে সরকার আনসার বাহিনীর কল্যাণে পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ পাশ করা হয়েছে। সেখানে চাকরির শুরু থেকেই স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বার্ষিক সম্মানি ভাতা বৃদ্ধি, রেশন বৃদ্ধি, নারী সদস্যদের পোষাক পরিচ্ছদ পরিবর্তনসহ বাহিনীর আধুনিকায়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০০৮ থেকে টানা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে আসতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমাদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সেখানে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও সেভাবেই স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলোও স্মার্ট গ্রাম হিসেবেই গড়ে উঠবে। সেখানে কোন মানুষ দরিদ্র থাকবেনা, ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, আমরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি।

ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। ‘বাংলাদেশ গেমস’ এ পর পর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এই বাহিনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কারণ সরকার চায় এখান থেকে উদীয়মান এবং খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ তৈরী হবে। তারা যেন দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেন অব্যাহত থাকে তারও ব্যবস্থা করতে চাই। কারণ মানুষের পেটের ভাতের সাথে সাথে তাদের মনোরঞ্জণের ব্যবস্থা করা এবং খেলাধুলা, শরিরচর্চার মাধ্যমে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য।

ভাষা আন্দোলনের এই মাসে আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারসহ ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের তিনি শ্রদ্ধভরে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৬৭০ জন আনসার সদস্যের আত্মাহুতিকে এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন মুজিনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় তাদের উপস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানেও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার আহবানে বহুত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে তাঁর সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদী অনসার একাডেমীর অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। সুসজ্জিত প্যারেড তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। পরে তিনি কোরিওগ্রাফি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

রঙচটা বাস চলছেই

রঙচটা বাস চলছেই