বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি বেড়েছে নদী ভাঙন
১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম
ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাটসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেড়েছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় লোকজন জিও ব্যাগ ফেলাসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।
কুড়িগ্রামে চরম দুর্ভোগে বন্যার্তরা
কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহে জেলায় নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে ৪৫৮ পরিবার এবং তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গতকাল কুড়িগ্রামে ব্রক্ষপুত্র নদেও তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একই সঙ্গে পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙন। জেলা শিক্ষা অফিসার জানান, বন্যার কারণে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কলেজ মিলে ১২৮টিতে পাঠদান বন্ধ। এছাড়া ৯টিতে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভাঙন
টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। জেলার বাসাইল উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামে শুরু হয়েছে ঝিনাই নদীর তীব্র ভাঙন। নদী ভাঙনে তীরবর্তী এলাকার বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার ও ফসলী জমি, রাস্তা, কবরস্থান, মসজিদসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। গতকাল ভোরে টাঙ্গাইলে চারাবাড়ি ব্রিজের সংযোগ সড়ক ভেঙে পাঁচটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভোরে সদর উপজেলার চারাবাড়ি তোরাপগঞ্জ ধলেশ্বরীর নদীর ওপর ব্রিজের পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়।
এলাকাবাসাী জানান, এ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে ব্রিজ পাড় হয়ে চলাঞ্চলের পাঁচটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। এছাড়া সন্তোষ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ছাত্র ছাত্রীদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। এদিকে চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য, তাঁত শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা-নেওয়া করতে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, অটোভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে থাকে।
যানবাহন চালক হাসমত করিম, শহিদুল বলেন গত কয়েকদিন ধরেই একটু একটু করে পানির নীচে ধ্বস নামে। গতকাল ভোরে যাত্রী নিয়ে এসে দেখলাম ভেঙে গেছে। পরে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ভাঙনের দৃশ্য দেখতেছি। এটি দ্রুত বিকল্প ব্যাবস্থা না নিলে আমরা যানবাহন চালাইতে পারবো না। গতকাল ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে প্রবল স্রোতে যমুনা ও ঝিনাই নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া জেলার ভুঞাপুর, কালিহাতী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলায় ভাঙনে দিশেহরা মানুষ
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলায় কখনো বন্যা, আর পানি কমলে শুরু হয় ভাঙন। বন্যা আর ভাঙনে দিশেহারা তিস্তা পারের মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ১৮টি বসতভিটাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি তিস্তার বুকে হারিয়ে গেছে। আপন ঠিকানা হারিয়ে কাঁদছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলাকে দুই দিকে ঘিরে রেখেছে তিস্তা আর ধরলা নদী। জেলার উত্তর সীমান্তে ধরলা ও দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলছে তিস্তা নদী। প্রতি বছর নদী ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা আর আবাদি জমি, নানা স্থাপনা। দুই দিকের ভাঙনে জেলার মানচিত্র প্রতি বছর ছোট হচ্ছে। চরাঞ্চলের সংখ্যাও বাড়ছে লালমনিরহাটে। চলতি মৌসুমে হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ি গ্রামের ১৮টি পরিবারের আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিলীন হয়েছে তিস্তার কড়াল গ্রাসে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার মাথা গোঁজার ঘর তোলার জমি খুঁজতে নাকাল। তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও তা রাখার মতো স্থায়ী উঁচু জায়গা মিলছে না। মোটা অংকের টাকা দিলে বার্ষিক লিজ বা ভাড়ায় মিলছে। সেটাও বেশির ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাড. মশিউর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী। সব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় অর্ধশত বাড়ি বিলীন হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে ভাঙনের শিকার হচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা ও বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত
গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫
যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান
মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ
কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা
আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত
জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা
জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন
মানিকগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মদিন পালিত
ভোরের কাগজ কর্মীদের মানববন্ধন পাঁচদিনের আল্টিমেটাম সাংবাদিক নেতাদের
৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা
শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
চিকিৎসক হয়রানি যেন অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসনেরই প্রতিচ্ছবি: ডা. রফিকুল ইসলাম
৯ মাসে ইরান-কাতার বাণিজ্য ৫৩ ভাগ বেড়েছে
ইন্দুরকানীতে পাওয়ার ট্রিলারের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত
লাকসামে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা
আশুলিয়ায় হিজড়া সম্প্রদায়ের মানববন্ধন, ওরস শরীফে বাধা প্রদানের অভিযোগ
ব্যাংকের সহযোগিতা কামনা রোজার আগে বন্ধ সুগার মিল চালু করতে চায় দেশবন্ধু গ্রুপ