আলোচনা সভায় নাগরিক প্রতিনিধিরা বলেন

ভারতের মনোভাব এমন যে ছোট রাষ্ট্র হিসেবে কারো বেঁচে থাকার অধিকার নেই

Daily Inqilab ইনকিলাব

১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ এএম

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, ভারতের মনোভাব এমন যে, ছোট রাষ্ট্র হিসেবে কারো বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ভারতের আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনে সফল হতে হলে ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে। ভারত আমাদের আকাশসীমার আয় তুলে নেয়, সীমান্তে মানুষ হত্যা করে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। সরকার তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। তাদের হস্তক্ষেপে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাও ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে গতকাল এসব কথা বলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
ভারতের সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি ও সমঝোতায় নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নতা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘আগ্রাসন বিরোধী নাগরিক সমাজ’। এতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্টজনরা অংশ নেন।
সভায় অধ্যাপক ড. মাহবুবুল্লাহ বলেন, ভারত রাষ্ট্রের চরিত্রটা যদি আমরা না বুঝি তাহলে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সফল হবে না। তাই ভারতের চরিত্রটা বুঝতে হবে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ভারতের লোক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই। ভারত তাদের ভৌগোলিক সীমানাকে কালচারাল ভারত হিসেবেও বিবেচনা করে, তার পরিধি অনেক বড়। ভারতের মনোভাব এমন যে, ছোট রাষ্ট্র হিসেবে কারও বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এমন মনোভাব পোষণ করা একটি দেশের আগ্রাসন থেকে আমরা কীভাবে রক্ষা পাবো সেটা চিন্তার বিষয়।
ড. মাহবুবুল্লাহ বলেন, ভারত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই মূলত চেয়েছিল পাকিস্তান ভাগ হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হোক। ভারত তাদের চিকেন-ন্যাককে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই করিডোর সমঝোতা বিপৎজনক, কেননা এই সমঝোতায় মাধ্যমে তৃতীয় রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের মাধ্যমে এই দেশ বিরোধী চুক্তি বাতিলের জন্য গণভোটের আয়োজন করতে হবে। আশাকরি দেশের মানুষ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণভোটে অংশ নিবে।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, কোটা বিষয়টা একটা মীমাংসিত ইস্যু, সেটা সরকার আবার সামনে কেন নিয়ে আসলো? এর পিছনে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে। আজিজ-বেনজীরদের দুর্নীতির খবর ঢাকতে এসব নাটক। এসব করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে চায়। একটা রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটা রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ খেয়াল রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু বাংলাদেশ কি সেই স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে? পারেনি। মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করেছে সেটা ঠিক, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা জরুরি ছিলো ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য।
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এমন চুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা শেখ হাসিনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কারা এমপি মন্ত্রী হবে সেটা ঠিক করে দিতে পারেন, কে প্রধান বিচারপতি হবেন সেটা ঠিক করে দিতে পারেন, কিন্তু দেশের জনগণকে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। মোদি তো টেনেটুনে পাশ করে সরকার গঠন করেছে, কিন্তু আমাদের দেশে তো নির্বাচন ব্যবস্থাই ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ১৯৭২ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তখনই মানুষ বলেছিল এটা গোলামির চুক্তি। ভারত বাংলাদেশকে কখনো মর্যাদা দেয় না। এমনকি ভারত তাদের স্বাধীনতা দিবসে নেপাল ভূটানের মতো রাষ্ট্র প্রধানদের অতিথি করলেও বাংলাদেশের কাউকে অতিথি করে না। বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করার জন্য যে ফি দেওয়ার কথা, সেটাও পায় ভারত আর কিছুটা নেপাল পায়। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে ভারতের লোক রয়েছে, ভারত তাদের গোলাম সরকারকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশ আরেকটা ফিলিস্তিন বানাতে চায়। কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশকে পুরো ব্লকেড করেছেন শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে নুর আরও বলেন, এই কোটা সংস্কারের মাধ্যমে কেবল সবার চাকরি নিশ্চিত হবে না, তাই রাষ্ট্র সংস্কারে মাধ্যমে একটি সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
প্রফেসর ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, দেশটা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত বাংলাদেশকে কোনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিতে চায় না। তারা চায় আমরা তাদের গোলামি করে বাঁচি। কিন্তু দেশের জনগণ কারো কাছে গোলামি করবে না। আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই দেশে শুরু হয়েছে, এই লড়াই থেকে আমাদের পিছনে যাওয়ার সুযোগ নেই। এই লড়াইকে আমাদের ছাত্র-তরুণদের অংশ নিতে হবে।
বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের শক্ত প্রতিবাদ করতে হবে। বাংলাদেশের বুক চিড়ে ভারতীয় ট্রেন চলবে, সীমান্তে নাগরিক হত্যা হবে, সেটি আমরা মানতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু ভারতকে দিয়ে যাচ্ছে বিনিময়ে কিছু আনার সক্ষমতা রাখেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, আমরা জীবন বাজি রেখে আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ভারতের পণ্য আমাদের বর্জন করতে হবে। যে দেশ আমার দেশের নাগরিককে মূল্য দেয় না, গণতন্ত্র হরণে ভূমিকা রাখে, একতরফাভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যায়, সেই দেশের পণ্য আমরা কিনবো না।
আগ্রাসন বিরোধী নাগরিক সমাজের সদস্য মু. নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, আইনজীবী ও কলামিস্ট সাইমুম রেজা পিয়াস, লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মুর্শেদ, সাবেক ছাত্রনেতা আবু হানিফ, মনজুর মোর্শেদ, এডভোকেট নাজিম উদ্দীন, মিজানুর রহমান ভূইয়া প্রমুখ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা
শহীদ আসাদের চেতনা শানিত করতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
জিয়াউর রহমান চিরদিন মানুষের হৃদয়ের মাঝেই বেঁচে থাকবেন   ঃ রিজভী
জাতীয় কবির নাতি বাবুল কাজীর ইন্তেকাল
প্রবাসীর সাথে দুর্ব্যবহারের ভিডিও ভাইরাল, নেপথ্যে সবজি নিয়ে প্লেনে ওঠার চেষ্টা
আরও

আরও পড়ুন

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ  আহত-৫

গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫

যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান

যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান

মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ

মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ

কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব -  আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা

আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন  রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা

জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা

জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে  - খোকন

জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন

মানিকগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মদিন পালিত

মানিকগঞ্জে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মদিন পালিত

ভোরের কাগজ কর্মীদের মানববন্ধন পাঁচদিনের আল্টিমেটাম সাংবাদিক নেতাদের

ভোরের কাগজ কর্মীদের মানববন্ধন পাঁচদিনের আল্টিমেটাম সাংবাদিক নেতাদের

৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা

৬ শতাধিক কৃষকের জমিতে সরকারি পেয়াজের বীজ গজায়নি, লোকসানের ঘানি টানছেন কৃষকেরা

শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

শিগগিরই ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

চিকিৎসক হয়রানি যেন অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসনেরই প্রতিচ্ছবি: ডা. রফিকুল ইসলাম

চিকিৎসক হয়রানি যেন অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসনেরই প্রতিচ্ছবি: ডা. রফিকুল ইসলাম

৯ মাসে ইরান-কাতার বাণিজ্য ৫৩ ভাগ বেড়েছে

৯ মাসে ইরান-কাতার বাণিজ্য ৫৩ ভাগ বেড়েছে

ইন্দুরকানীতে পাওয়ার ট্রিলারের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত

ইন্দুরকানীতে পাওয়ার ট্রিলারের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত

লাকসামে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা

লাকসামে তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা

আশুলিয়ায় হিজড়া সম্প্রদায়ের মানববন্ধন, ওরস শরীফে বাধা প্রদানের অভিযোগ

আশুলিয়ায় হিজড়া সম্প্রদায়ের মানববন্ধন, ওরস শরীফে বাধা প্রদানের অভিযোগ