দেশে দেশে রোজার উৎসব
১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৮ পিএম
প্যালেষ্টাইন : বিশ্বের মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হলো প্যালেষ্টাইন। মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মাসজিদুল আকসা’ এখানেই অবস্থিত। এই মাসজিদকে ‘আল-কুদ্স’ও বলা হয়। আল কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈল প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা ঘোষণা করেন, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দাহকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদের হারাম থেকে মাসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’’। এদেশে ইফতারে প্রথমে খেজুর দিয়ে শুরু হয়। তারপর বিভিন্ন ধরনের সুপ, এরপর ভাতের সাথে ফুলকপি ও মটরশুটি দিয়ে তৈরী মুরগীর মাংস খায়। তাছাড়া ভাত, মাংস ও শাক-সবজি মিশ্রিত খাবার ‘মাকবুলা’ তৃপ্তির সাথে তারা খায়। বিভিন্ন পাতার আরক সস এবং নাবাধি ফল ফলাদির জুস এরা খেয়ে থাকে। তবে রামাদ্বান মাসের জন্য স্পেশাল তৈরী ‘কামারিদ্দীন’ নামক জুস তারা পছন্দ করে। সেহরীতে এরা হালকা পানীয় পাস করে থাকেন। পনির ও দই জাতীয় খাবার ‘লাবান’ মিষ্টিদ্রব্য, চা ইত্যাদি সাহরীতে খায়। প্যালেষ্টাইনীরা খুব ঘটা করে এবং আনন্দের সাথে ঈদ উৎযাপন করে থাকে।
অস্ট্রেলিয়া : খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশটিতে সবাই শিক্ষিত। মোট জনসংখ্যার ২% হলো মুসলমান। এখানকার মুসলমানগণ ইফতারীতে স্যান্ডউইচ, পনির, মাখন, দুধ জাতীয় খাবার, নানাবিধ ফল ও ফলের রস খেয়ে থাকে। সেহরীতে বার্গার খেয়ে তারা সিয়াম রাখেন। অমুসলিম দেশটিতে রামাদ্বান মাসের ধর্মীয় পরিবেশ থাকার কথা নয়। সিয়াম ও ঈদ উপলক্ষে সরকারী সুযোগ সুবিধার প্রশ্নই উঠে না। তবে এ সময় এখানকার মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায় এবং মজবুত হয়।
দক্ষিণ কোরিয়া : এশিয়া মহাদেশের চীন ও জাপানের মধ্যস্থানে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়া দেশটির রাজধানী হলো সিউল। দেশটিতে বেশীরভাগ অধিবাসী হচ্ছে খৃষ্টান ও বৌদ্ধ। মোট জনসংখ্যার ৩% হলো মুসলমান। ইফতারীতে এখানকার মুসলমানগণ নুডলস, সুপ, ফলের রস, বিভিন্ন প্রকারের ফলফলাদি খেয়ে থাকেন। সেহরীতে মাংস ও রুটি তারা খায়। অমুসলিম দেশ হলেও ঈদের দিন মাত্র দু’ঘন্টা ছুটি দেন সেখানকার সরকার বাহাদুর।
পাকিস্তান : দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ হলো পাকিস্তান, যার ৯৭% অধিবাসী হচ্ছে মুসলমান। বাকী ৩% হলো খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়। পাকিস্তানীরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রামাদ্বান মাসকে স্বাগত জানায় এবং যথাযথ ভাবে পালন করে। এ মাসে অফিস, আদালত, ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে নতুন সময়সূচী বেঁেধ দেয়া হয়। দিনের বেলায় হোটেল রেস্তোরা সমূহ বন্ধ থাকে তবে ইফতারীর পূর্বে খোলা হয়। পাকিস্তানীরা সচরাচর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এক সাথে ইফতারী করে থাকেন। ইফতারীতে থাকে খেজুর, খোরমা ও শরবত। অনেকেই হামদর্দ এর ঐতিহ্যবাহী শরবতে ‘রূহ আফজা’ দুধ বা পানির সাথে মিশিয়ে পান করেন। তাছাড়া খেজুর, দুধ ও নুডলসের সমন্বয়ে তৈরী ‘শির-খুরমা’ জাতীয় মুখরোচক খাবার ইফতারীতে তারা খায়। সেহরীতে মসলাযুক্ত খাবারই তারা খেয়ে থাকেন। সাধারণত: তরকারীতে তারা পিয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, লবঙ্গ, এলাচি, মরিচ ইত্যাদি বেশী ব্যবহার করেন। ধনীদের অনেকেই উমরাহ করার জন্যে রামাদ্বান মাসে মক্কায় যেয়ে থাকেন। গত বছর মুসলমানদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে পাকিস্তানে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত উয়েনডি চেম্বারলিন উপবাস করেছিলেন। ঈদ উপলক্ষে পাকিস্তানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন। ঈদের পূর্বেই ফেতরা আদায় করে থাকে এবং রামাদ্বান মাসেই যাকাত দিতে থাকে। ঈদ উপলক্ষে মেলার আয়োজন হয় এবং শিশু কিশোররা এতে অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে সুপরিচিত বাংলাদেশটিতেও রামাদ্বানে বেশ সাড়া জাগে। এ দেশের বেশীরভাগ মুসলমানগণ রোযা রাখেন। যারা রোযা রাখে না তারাও মজাদার ইফতারী খেয়ে থাকে। বাংলাদেশীরা বরাবর ভূড়ি ভোজনে অগ্রগামী। তাই ইফতারীতে নানাবিধ মুখরোচক খাবারের বাহারের আয়োজন চলে। গ্রামে ও শহরে ইফতারীর আয়োজনের একটু পার্থক্য বিদ্যমান। শহরে সাধারণত: খেজুর, হালিম, ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি, পাকুড়া, জিলাপি, মুড়ি, পরোটা, বিফ বুনা, আলুর চপ, চটপটি, পাটিসাপটা পিঠা, চিকেন রোলস, দইবড়া, লাচ্ছি সহ আরও কত কি। ছাড়াও শরবত এবং নানাবিধ ফল ও ফলের রসের সমাহার কিছুই বাদ নেই। বাংলাদেশের ফাইভ স্টার হোটেলে প্রায় পঞ্চাশ আইটেমের ইফতারীর সাথে প্রায় তের রকমের সালাদের আয়োজন চলে। পল্লী এলাকায় মুড়ি, ছোলা, পিঁয়াজু, ফল, তরকারী, ভাত ইত্যাদি দিয়ে ইফতারী পর্ব শেষ করা হয়। অনেকেই শরবত এবং ফলের রসও তৃপ্তির সাথে খায়। সেহরীতে আমাদের দেশে শহর ও গ্রামে প্রায় একই রকম খাদ্য। সাধারণত: ভাত, মাছ অথবা মাংসের তরকারী, ডাল, দুধকলা। শহরে অনেকেই সেহরীতে রুটি কিংবা পরোটা মাংস দিয়ে খেয়ে থাকেন। গ্রামে অনেকে সেহরীতে ঘি-ভাত-চিনি-কলা মিশ্রিত সুসাধু খাবার তৃপ্তির সাথে খায়।
বাংলাদেশে ঈদ খুব ঘটা করে এবং উৎসবের আমেজের মধ্যে উৎযাপিত করা হয়। চাকুরীজীবিরা উভয় ঈদে উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন বিধায় ঈদ উৎযাপনের সুবিধা হয়েছে। তাছাড়া কমপক্ষে তিন দিন সরকারী ছুটি থাকে বলে সবাই আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের নিকট দেখা সাক্ষাত করার সুযোগ পায়। রাজনীতিবিদগণ ভালভাবে গণসংযোগ করতে পারে এই ঈদ উপলক্ষে।
লেখক: মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠানপাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন