হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) হুজুরের অবদান কখনো ভোলার নয়
২২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:১৮ এএম
ইসলাম ধর্ম যে-কয়টি ইলম অর্জনের তাগিদ প্রদান করে এর বাইরে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্বীনি ইলম চর্চার সময় ও ইচ্ছার অভাব সাধারণত অনেক আলিমগণের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। যেমন কেউ শুধু ইলমুল আকাঈদ নিয়ে ব্যস্ত, কেউ শুধু ইলমুল ফিকহ, আবার কেউ শুধু ইলমুত তাসাউফ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু বিশুদ্ধ তরিকা হল, ইসলাম ধর্ম-সংশ্লিষ্ট ইলম উক্ত তিন ইলমের সমষ্টির নাম। হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব (রহ.) এমন এক সৌভাগ্যবান মুত্তাকী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনিষী ছিলেন সমকালীন সময়ে যার তুলনা বিরল। ইমাম মালেক (রহ.) বলেন- যে ব্যক্তি শুধু ফিকহ-এর ইলম শিখলেন কিন্তু তাসাউফ হাসিল করলেন না, সে ফাসিক। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু তাসাউফের ইলম হাসিল করলেন কিন্তু ফিকহ শিখলেন না, সে ধর্মদ্রোহী। আবার যিনি উভয় বিষয়ের ইলম লাভ করলেন, তিনি যথার্থ কাজ করলেন। অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে তিনিই হলেন ওরাসাতুল আম্বিয়া।
আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) ইলমে কুরআন, ইলমে হাদীস, ইলমে ফিকহ, ইলমে আকাঈদ, ইলমে তাসাউফ তথা শরীয়ত ও মারিফতের প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার ইলম অর্জন করে ব্যবহারিক জীবনে সফলতার সাথে বাস্তবায়নে নজির স্থাপন করেছেন। আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাযুল মুকাররম হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী হুজুরের অবদান কখনো ভুলার নয়। সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসায় অধ্যয়নকালে হুজুরের সাথে যে মধুর স্মৃতি রয়েছে তা আজও স্মরণ আছে। খেয়াল করলে হুজুরের নসিহত, কথাবার্তা, পাঠদান ইত্যাদি চোখের সামনে এখনো ভেসে উঠে। এমন বিজ্ঞ ও পাÐিত্যের অধিকারী উস্তাযের ফয়েজ প্রাপ্তি সৌভাগ্যের ব্যাপার। যেসব মনীষাগণের অবয়ব দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ আসে তারাই হলেন ওলীআল্লাহ। হযরত আল্লামা দুবাগী হুজুর (রহ.) ছিলেন এমন উঁচু মার্গের এক বুযুর্গ। তিনি বেশ জবরদস্ত আলিমে দ্বীন হিসেবে তখনও মশহুর ছিলেন। আপাদমস্তক সুন্নতে নববীর পাবন্দ, মুখাবয়বে আশিকে রাসুলের ছাপ তথা ছিরতে ছুরতেও তিনি-যে একজন আল্লাহর ওলী তা প্রকাশিত ছিল। তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়েছিলেন। আকিদা ও আমলে ছিলেন সত্যের প্রতিবিম্ব। আমল-আখলাক, নম্রতা-ভদ্রতা, ইবাদত-বন্দেগী ইত্যাদিতে ছিলেন অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসা তখন ছিল খ্যাতিসম্পন্ন এক দারসে হাদীসের বাগান। মাদরাসার মুহতারাম আসাতিযায়ে কিরাম যেমন ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ ও যোগ্য উস্তায তেমনি তাদের নেক সোহবতে সৃষ্টি হয়েছিলেন অসংখ্য যোগ্য আলিমে-দ্বীন। বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদরাসা থেকে ১৯৬৭ সালে দাখিল জামাত উত্তীর্ণের পর সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়। আলিম, ফাজিল ও কামিল জামাত সৎপুর মাদরাসা থেকে সম্পন্ন করি। আমার সহপাঠীগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মাওলানা মো. রইছ উদ্দিন হামজাপুরী (প্রাক্তন শায়খুল হাদীস, সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসা), মাওলানা মো. ইমাদ উদ্দিন (ওরফে সাজিদুর রহমান), মাওলানা মো. তৈয়্যিবুর রহমান (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, বিশ্বনাথ দারুল উলুম ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা) মাওলানা মো. মাশুক আহমদ (প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদরাসা), মাওলানা মো. শফিকুর রহমান (প্রাক্তন সুপার, থানাবাজার দাখিল মাদরাসা, জকিগঞ্জ), মাওলানা মো. আব্দুশ শহীদ ঘোরী (প্রাক্তন সুপার, দিনারপুর আইনগাঁও দাখিল মাদরাসা, নবীগঞ্জ), মাওলানা মো. আব্দুল আলি (প্রাক্তন ইমাম ও খতিব, শাহজালাল জামে মসজিদ, ওয়ালসল, ইউকে), মাওলানা মো. আব্দুল মালিক (প্রাক্তন আরবি প্রভাষক, ফতেহপুর কামিল মাদরাসা, সিলেট), মাওলানা মো. হুছাইন আহমদ, মাওলানা মো. হবিবুর রহমান, মাওলানা মো. নূরুল ইসলাম ও মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ (নেত্রকোনা) প্রমূখ।
সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসায় পাওয়া পরম শ্রদ্ধাভাজন উস্তাযমÐলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.), হযরত মাওলানা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী হুজুর, হযরত মাওলানা মো. হবিবুর রহমান রারাই’র মুহাদ্দিস ছাহেব, হযরত মাওলানা আব্দুল জব্বার গুটারগ্রামী মুহাদ্দিস ছাহেব, হযরত মাওলানা মো. মোতাহির আলী বাল্লাহ’র মুহাদ্দিস ছাহেব, হযরত মাওলানা মো. ফজলুল করীম টাংগাইলের হুযূর, হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান রারাই’র হুজুর, হযরত মাওলানা মুফতি মো. হারিছ উদ্দিন আটগ্রামী হুজুর, হযরত মাওলানা ইরশাদ হোসেন গুয়াহুরির হুজুর এবং হযরত মাওলানা মো. আব্দুছ ছালাম তেলিকোনা’র হুজুর।
১৯৭৩ সালে প্রথম বিভাগে কামিল পাশের ঘটনায় আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) হুজুরের অবদান বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। সে বছর মাদরাসার কামিল জামাতের ফলাফলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম তিনটি ‘প্রথম বিভাগ’ এসেছিল। এর একটি আমার সৌভাগ্যে ঘটেছিল এবং বাকি দু’জন হলেন মাওলানা মো. রইছ উদ্দিন হামযাপুরী (রহ.) ও মাওলানা ইমাদ উদ্দিন ওরফে সাজিদুর রহমান (রহ.) (ছাতক থানার ধারণ নিবাসী)। এছাড়া সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় ১টি এবং গাছবাড়ী কামিল মাদরাসায় ১টি প্রথম বিভাগ এসেছিল। তখন কামিলে প্রথম বিভাগে পাশ করা বেশ সম্মানের বিষয় ছিল। তাই প্রথম বিভাগ পাওয়ার সংবাদ মশহুর হয়ে গেলো। প্রথম বিভাগ কিভাবে লাভ করা যায় এব্যাপারে আমার কাছে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, লেখাপড়ায় অধ্যবসায়ী হওয়ার পাশাপাশি হস্তলিপি সুন্দর করতে হবে। তখনই উদাহরণ টেনে আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) হুজুরের নাম বলতাম। (চলবে)
লেখক: প্রাক্তন শায়খুল হাদীস- বুরাইয়া কামিল মাদরাসা এবং ইছামতি দারুল উলূম কামিল মাদরাসা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন