আমার নামাজ আমার অনুভুতি
১৪ জুন ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

আমার পবিত্রতা থেকে শুরু করে আমি এতক্ষন পর্যন্ত নামাজে বিভিন্ন পর্যায় শেষ করলাম। আমি আমার মাওলার সামনে চুড়ান্ত বিনয় প্রকাশে পূর্বে আমার মাথা অবনত করতে চাই। এই মাথা নোয়ানোর আগে আবার তাঁর বড়ত্ব শ্রেষ্ঠত্য ঘোষনা করতে চাই। শয়তানকে আরো একবাব কাবু, নাস্তানাবুদ করে দিতে চাই। তার হিম্মত ও কোমড় ভেঙ্গে দিতে চাই। আমি তাই মাথা নত করার সময় আবার বলে উঠি আল্লাহু আকবার। আমার আল্লাহ সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে বড় তাঁর ক্ষমতা। তিনি বড় আলিশান। কোন প্যারামিটারে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি রাজাধিরাজ। আমি যখন মাথা নোয়াতে যেতে চাই শয়তান আমাকে মন্ত্রণা দিতে পারে। আমার মনে ওয়াওয়াসা তৈরী করতে পারে। আমার কাজে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে। আমার মন ছুটাছুটিতে নিয়ে যেতে পারে। তার সব পথ আমি মহান রবের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা দিয়ে থামিয়ে দিতে চাই। রুকুতে যাওয়ার আগে আমার মনে এরূপ জ্ঞান ধ্যান থাকা জরুরী নয় কি? আমি প্রতিনিয়ত প্রতিবার নামাজে বিভিন্ন কাজে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষনার পর ঘোষনা করে যাচ্ছি। কিন্তু এই ঘোষনা আমার অনুভুতিকে জাগ্রত করে না। আমার অনুভুতিকে শানিত, তেজদিপ্ত করে না। নামাজের আগের ও নামাজের পরের অবস্থার মধ্যে কোন প্রার্থক্য হয় না। নামাজের আগে যেই আমি ছিলাম নামাজের পরেও সেই আমিই রয়ে যাই। প্রভুর সাক্ষাতের জান্নাতি আভা আমার চেহারায় ভেসে উঠে না। চোখজোড়া ছলছল করে না। প্রভুর সাথে সাক্ষাতের আনন্দ অশ্রু চোখ বেয়ে পড়ে না। এমনকি দুটো হাত তাঁর দরবারে আলিশানে উঠানে চোখে পানির ধারা প্রবাহিত হয় না। এ কেমন আমি?
হ্যাঁ প্রিয় ভাই, আমি এখন রুকুতে যাব। তার দরবারে আলিশানে মাথা নোয়াব। কই আমার ভাবান্তর। কই আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন। রুকু মানে মাথা নোয়ানো। সব মাথা নোয়ানোকে কি রুকু বলা হয়। না হয় না। কেবলমাত্র নামাজে দাঁড়িয়ে মাওলার সামনে মিনতি আর চরম বিনয়ের সাথে যে মাথা নোয়ানো হয় তারই নাম রুকু। এই মাথা নোয়ানোই কিন্তু শেষ নয়। সেখানে আমার শ্রেষ্ঠ রবের প্রশংসা পবিত্রতা ঘোষনা করতে থাকি। একবার নয় কমপক্ষে তিন তিন বার। তাঁর সামনে মাথা নত করে তাঁর প্রশংসা উচ্চারণ। একটু অন্তর চক্ষু মেলে, অন্তরের চোখ লাগিয়ে একটু দেখুনতো এ অবস্থাটা কেমন হওয়া উচিত! একবার কল্পনার জগতে সাতড়িয়ে আসুন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, যুগে যুগে আল্লাহর প্রিয়গনের রুকু কেমন ছিল? এই কল্পনার জগতে সাতড়ানো থেকে আমি যদি কিছু শিখতে পারি তবেতো আমি সফলকাম। আর যদি এখানে আমি বেখেয়াল, বে দিশার মত থাকি। শত হাজার লক্ষ রুকু আমার কী কাজে লাগবে? কতটুকু কাজে লাগবে?
আমি রুকুতে যাওয়ার সময় নামাজে দ্বিতীয় বার রবের বড়ত্ব শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা দিচ্ছি। তারপর মাথা নত করেই রবের পবিত্র ঘোষনা করছি। আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, রুকুকারীদের সাথে রুকু করতে। নামাজের প্রত্যেকটি রুকনই গুরুত্বপূর্ণ। রুক আর সেজদা নামাজের সবচেয়ে রবের প্রিয়। কিন্তু এই দুটি কাজেই আমার সবচেয়ে তাড়াহুড়া। যেন এই দুটু কাজে তাড়াহুড়া করে সময় না বাঁচালে পৃথিবী অচল হয়ে যাবে। আমার জীবন থেকে অনেক কিছু হারিয়ে যাবে। না না প্রিয় ভাই এখানের তাড়াহুড়ার কারনেই আমার সব অচল হয়ে যাচ্ছে। এমন কি নামাজের মাধ্যমে আমার মহান মালিকের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়তে পারছি না। বছররে পর বছর নামাজ পড়ে যাচ্ছি। আমার আমলে, আমার জীবিকায়, আমার রুটি রুজিতে এখনো অনেক সমস্যা লেখেই আছে। নামাজ আমার আমলী জীবনে, সামাজিক জীবনে, অর্থনৈতিক জীবনে কোন প্রভাব ফেলছে না। আসুন না রুকুর তাসবীহ পড়ার সময় একটু সময় নেই। হৃদয়ের গভীর থেকে পড়ি সুবহানা রাব্বিয়াল আ’জীম- আমার রব আমার মালিক মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করছি, যিনি সব দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত। দেখুন কত সুন্দর আর হৃদয়গ্রাহী ঘোষনা। কত ওজনদার আর কত বড় ঘোষনা। আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাওয়ার পর এই ঘোষনা আমার মনের অবস্থা কী হওয়া উচিত? আমি কী ভাবছি? আমার চিন্তার দুয়ারে কেন ঝড় তুলে না? আমার কেন ভাবান্তর হয় না? আসুন আমরা একটি বার হলেও ভেবে দেখি।
রুকু হলো মহান রবের সামনে মাথা পেতে দেওয়ার পূর্ব প্রস্ততি। চুড়ান্ত আনুগতে, চুড়ান্ত দাসত্ব, নিজেকে সপে দেওয়ার পূর্বের একটি মহড়া। কিন্তু এ নিয়ে ভাবার আমার সময় নেই। কত তাড়াতাড়ি রুকু শেষ করা যায় এই যেন বিষয়টা হয়ে দাড়িয়েছে।
রুকুতে বান্দা তার অসহায়ত্বের কথা, সীমাবদ্ধতার কথা, দুর্বলতার কথা, নিজের ক্ষুদ্রতার কথা, নির্ভরতার কথা ঘোষনা করে সাথে সাথে আল্লাহর বড়ত্ব শ্রেষ্ঠত্বের কথা, পূর্ণতার কথা, মহত্বের কথা, সর্বক্ষমতার কথা, পবিত্রতার কথা ঘোষনা করে। আল্লাহর শান মান ইজ্জতের কাছে নিজের তুচ্ছতা নগন্যতা ঘোষনা করে। অন্তরের গভীর থেকে তার এই ঘোষনাই তাকে সফলতা এনে দেয়। তাই যারা এভাবে রুকুকারী তারা সফলকাম। তারা আল্লাহ ওয়ালা। তারা আল্লাহর প্রিয়। আল্লাহর অনুগত।
রুকু নিজেও একটা ইবাদাত। এই ইবাদতে তেলাওয়াত করা নিষেধ। এখানে শুধু বান্দা মাওলার প্রশংসা ঘোষনা করতে থাকবে, নিজেকে হীন নগন্য ভাবতে থাকবে। এই হীনতা দীনতা নগন্যতার বিপরীতে মহান রবের শান মান ঘোষনাই এই রুকুতে পূর্ণতা এনে দেবে। বান্দা রুকুতে যত বেশি দীনহীন ভাবতে থাকবে আল্লাহর ভয় আর ভালবাসা ততবেশি তার অন্তরে প্রবেশ করতে থাকবে। মহান মালিক তত বেশি খুশি হবেন। আর এই খুশিইতো আপনার আমার চাওয়া।
আসুন আমরা আমার রুকুকে সুন্দর করি। ইবাদাতকে প্রাণবন্ত করে তুলি। মহান রব আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক: গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে ১শ’ ৫০ শিক্ষার্থী

বিক্ষোভের নামে সহিংসতা আইনের শাসনের অবমাননা: প্রেস উইং

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনকারী জকিগঞ্জের জয়িতাদের জয়ী হওয়ার গল্প

নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা

ইসরাইলী পণ্য বয়কটের দাবিতে রাজবাড়ীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

গাজীপুরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে দোকানে হামলা গ্রেফতার ৪

ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ

লৌহজংয়ে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা সভা সড়ক ও নৌ-র্যালী

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে চাঁদপুরে ল'ইয়ার্স কাউন্সিলের বিক্ষোভ মিছিল

কৃষ্ণসাগরে বিশাল রুশ যুদ্ধ জাহাজ, স্যাটেলাইট ছবি দেখেই কাঁপছে ইউরোপ!

সুপ্রীম কোর্টের রায়ে ট্রাম্পের বিতাড়ন নীতি বহাল

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ৩৫

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি