এক বিস্ময়কর অনুসরণীয় ও অতুলনীয় মহা সম্রাট
২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০০ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩০ পিএম
প্রকৃত পক্ষে রাজা-বাদশাহ্ তথা শাসক সম্প্রদায় যে জনগণের সেবক তা যথাযথ বাস্তবায়ন করে প্রায় অর্ধ পৃথিবী ব্যাপী সা¤্রাজ্য সীমাহীন সততা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা ও উন্নতি-সমৃদ্ধির মাধ্যমে পরিচালনা করে কিয়ামত অবধি পৃথিবীর বুকে সকল ধর্মের এবং সকল জাতির রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সকল নেতৃবর্গের জন্য এক অনুপম ও শ্রেষ্ঠ মডেল হিসেবে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রা)। তাঁর পূর্বাপর ন্যায়পরায়ণ সকল যুগশ্রেষ্ঠ শাসকদের ইতিহাস ম্লান হয়েগেছে তাঁর বিষ্ময়কর পরিচালনার সামনে। মাইকেল এইচ হাট, উইলিয়াম মূর, এম,এন রায় ও মহাত্ম গান্ধিসহ অসংখ্য প্রসিদ্ধ অমুসলিম ঐতিহাসিক এবং রাষ্ট্রপ্রধানগণও হযরত ওমর (রা)’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন এবং সকল প্রকার নেতৃবর্গকে তাঁকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করার জোর পরামর্শ দিয়েছেন।
চরিত্র, মেধা, বিচক্ষণতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা, উদ্ভাবনতা, নেতৃত্ব, স্পৃহা, আত্মবিশ্বাস, প্রেম-প্রীতি এবং চিন্তাশক্তিসহ যোগ্যতার সমস্ত উপকরণ সঙ্গে নিয়ে ৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা নগরীতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। সংসারের অভাব এবং শিশুকাল হতে পিতা খাত্তাব ও অন্যদের উট চরানোর দায়িত্বভার যোগ্যতা অর্জনে তাঁর উপর কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। দায়িত্ব আদায়ের পাশাপাশি দেশি-বিদেশী জ্ঞানীদের সান্নিধ্য এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে লুকায়িত প্রতিভা দ্রুত প্রমাণ করতে লাগলেন। অতি অল্প বয়সে স্বগোত্র আদী, স্বীয় বংশ কোরাইশ এবং স্বদেশ আরবের শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী এবং প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল প্রতিযোগিতায় তিনি বিজয় ছিনিয়ে আনতেন। কূটনৈতিক উন্নয়নে ও সমস্যার নিরসনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিনিধি। অল্প সমেয় সমগ্র আরবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
তাঁর সৃষ্টি ইসলামের জন্যই। তাই নবুয়তের দূরবীন তাঁর দিকে নিবদ্ধ হলো। রাসুলুল্লাহ (দ:) তাঁর মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট বিশেষ দোয়া করলেন। সবচেয়ে বড় শত্রু এখন ইসলামের সবচেয়ে বড় বন্ধু।
নবীর ছোঁয়ায় হয়েছে অসংখ্য প্রাণহীন প্রাণী, মৃত জীবিত, চরিত্রহীন চরিত্রবান, মূর্খ জ্ঞানী। আর হযরত ওমর (রা) হয়েছে যোগ্যতার প্রতিটি স্তরে শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ঠতম। নবী করিম (দ:)’র বাম বাহু এবং ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা)’র ডান বাহুর ভুমিকায় প্রায় বিশ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সার্বিক যোগ্যতার একক ও অদ্বিতীয় মযার্দায়। ফলে দ্বিতীয় খলিফা যে তিনিই হবেন তা সকলের পূর্ব হতে জানা ছিলো। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) কোন রকমের দ্বিমত ছাড়াই তাঁর খেলাফত চূড়ান্ত করে মতামত গ্রহণের জন্য জনগণের নিকট প্রেরণ করেন। ঘোষকের ঘোষণা শুনে সকলে আনন্দচিত্তে স্বীয় সমর্থন প্রকাশ করেন। হযরত আলী (রা)সহ অনেকে শুনার পূর্বে বলে উঠলেন, ‘চুক্তিপত্রে লেখা ব্যক্তি হযরত ওমর হলে আমার সমর্থন’। শুরু হলো রাজনৈতিক ইতিহাসে সোনালি অধ্যায়ের শুভযাত্রা। সিদ্বান্ত গ্রহণের জন্য যোগ্য ও সিনিয়র সাহাবায়ে কেরামের ‘উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন পূর্বক ইতিপূর্বে সৃজিত ব্যবস্থাপনাকে পূর্নাঙ্গ রূপদান এবং সৃজনহীন প্রয়োজনীয় অসংখ্য ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করে একটি সুপরিকল্পিত কার্যকর ও পূর্ণাঙ্গ শাসন ব্যবস্থা প্রস্তুত করেন। তাই ঐতিহাসিকগণ বলেন, ‘হযরত ওমর নি:সন্দেহে বিশ্বে প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।’ বর্তমান উন্নত বিশ্বে প্রচলিত অনেক ব্যবস্থাপনা হযরত ওমর (রা)ই সর্বপ্রথম অস্তিত্বে আনেন। পৃথক পৃথক মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগার, রাষ্ট্রীয় ভবন, বিষয়ভিত্তিক অধিকতর যোগ্যদের নির্বাচন, শর্তাবলী সম্বলিত নিয়োগপত্র প্রদান, শপথ বাক্য পাঠ, সম্পদের তালিকা গ্রহণ, দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, জেলখানা নির্মাণ, পৃথক পৃথক সেনাবাহিনী ও পুলিশবাহিনী গঠন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিশেষ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা, ফৌজি রেজিষ্টার, রাষ্ট্রীয় সম্পদের রেজিষ্টার, এলাকাভিত্তিক কর নির্ধারণ, নির্ধারিত করে শুনানীর ব্যবস্থা, বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্য শুল্ক, চাষাবাদের শর্তে অনাবাদী জমি মালিকানায় হস্তান্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা, আদম শুমারী, জ্ঞানী-গুণীদের সম্মানী, বয়স্ক ভাতা, নাবালেগ ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, তদন্ত কমিটি ও হিসাব অডিট সহ আরো অনেক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা সেকালে মানুষের ধ্যান-ধারণার অনেক দূরে ছিলো।
সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল পেশার মানুষের অধিকার ও মর্যাদা যথাযথ সংরক্ষণ পূর্বক রাজা-প্রজা থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষকে এক কাতারে এনে মদিনা সরকারের অধীনে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে অর্ধ পৃথিবী ব্যাপী রাজ্যকে প্রয়োজনানুসারে প্রদেশে বিভক্ত করে শাসন ব্যবস্থাকে বিন্যাস করেন। এলাকাভিত্তিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যাদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিচালনা করতে থাকেন।
বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী মারফত সরকারি ব্যক্তিবর্গের গতিবিধি লক্ষ্য, হজ্ব সমাপান্তে গভর্ণর ও জনগণকে একত্রিত করত: অবস্থা যাচাই, দূত মারফত তথ্য সংগ্রহ, যে কেউ খলিফার দরবারে অভিযোগ পেশ করার সুযোগ এবং খলিফা নিজে ছদ্মবেশে ঘুরা ইত্যাদির মাধ্যমে সমগ্র রাজ্যের উপর খলিফা গভীর দৃষ্টি রাখেন। গভর্ণর থেকে শুরু করে উযির-মন্ত্রী, সরকারি ব্যক্তিবর্গ, এমনকি নিজ ছেলেও শাস্তি থেকে রেহায় পেতোনা। সততার মাধ্যমে স্ব স্ব দায়িত্ব আদায়, আমানতের হেফাজত, রাষ্টীয় সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ, পরিকল্পিত উন্নয়ন, ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত ব্যবস্থাপনা, বিলাসিতা ও অপচয় মুক্ত জীবন ও কর্ম এবং খলিফার নিরলস আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাত্র দশ বছরে সুখী-শান্তি, উন্নতী-সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির এক স্বর্ণ রাজ্যে পরিণত হয়েছিলো অর্ধ পৃথিবী ব্যাপী মুসলিম জাহান। তাই মুসলিম অমুসলিম সকল ঐতিহাসিক এক সুরে বলেছেন, বিশ্বের শাসকগণ হযরত ওমর ফারুক (রা)কে মডেল বানিয়ে স্বীয় রাজ্য পরিচালনা করলে তাঁর ন্যায় তাদেরও মানব হৃদয়ে সম্মান, ভালবাসা ও স্মরণের যে ভাস্কর্য তৈরি হবে তা কোনদিন ক্ষয় হবেনা, মুছা হবে না এবং ভাঙ্গাও হবে না। হৃদয় থেকে হৃদয়ে থাকবে চিরকাল।
লেখক: আরবি প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন