বিশ্ব মুসলিম অশান্তির দাবানলে
২৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০১ পিএম | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৪ পিএম
আজকের বিশ্ব-পরিস্থিতির দিকে তাকালে আমরা যে চিত্র দেখতে পাই তা সত্যিই হতাশাজনক। বিশ্ব শান্তি আজ হুমকির মুখে। সামাজিক ন্যায়বিচার এখানে সুদুর পরাহত। জাহেলী যুগের মত ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই নীতিই যেন সারা বিশ্বে বিরাজমান। ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন, আন্তজাতিক অঙ্গন-সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের অনেক অভাব। অনেক মারাত্মক অপরাধী ক্ষমতার বলে শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। আবার দুর্বল হওয়ার কারণে লঘু অপরাধে অনেকে গুরুতর শাস্তি ভোগ করছে। এমনকি অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও দেয়া হচ্ছে মারাত্মক শাস্তি। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডনে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করছে। তাদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করছে। সহজে তা মেনে না নিলে শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি কখনো কখনো অন্যায়ভাবে তাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিথ্যা অজুহাতে গোটা দেশ ধক্ষংস করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুসলিমদের ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থা আরো ভয়ানক। সারা পৃথিবীতে আজ তারা নানা জুলুম-নির্যাতনের স্বীকার। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলায় তারা জর্জরিত। ইসলাম বিদ্বেষী সম্প্রদায় মুসলিম ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর নানামূখী নির্যাতন চালাচ্ছে। কোথাও তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে, কোথাও আবার পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে। কোথাও আবার প্ররোচনা দিয়ে মুসলিমদের বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত করছে। এর মধ্যে কোন এক দলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে অন্য দলের ওপর লেলিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য মুসলিম সম্প্রদায়ও এক্ষেত্রে কম দোষী নয়। তারা আজ ইসলামের শিক্ষা থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে। সঠিক ইসলাম থেকে তারা বিচ্যুত। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত। আল-কুরআনের এই শিক্ষা তারা নিজেদের সমাজে বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আল্লাহ বলেছেন-যদি মুমিনদের দুটি দল মারামারি করে তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। অতঃপর যদি তাদের এক দল অন্য দলের উপর বাড়াবাড়ি করে তাহলে যে দল বাড়াবাড়ি করবে তোমরা তার বিরুদ্ধে লড়বে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে তোমরা উভয়ের মাঝে ন্যায়ের সাথে মীমাংসা করে দিবে এবং সুবিচার করবে। আল্লাহ তো সুবিচারকারীদেরকেই ভালবাসেন।
এ কারণে বর্তমানে বিশ্বে দেখা যায়, বেশিরভাগ অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সংঘটিত হচ্ছে হয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর, না হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শাসিত এলাকায়। আমরা যদি মিয়ানমারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় সংখালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত গুদ্ধি অভিযানের নামে গত পঞ্চাশ বছর ধরে অমানবিক জুলুম-নির্যাতন পরিচালনা করছে। মুসলিমদের ব্যাপারে তারা যেন গৌতম বুদ্ধের বাণী ‘প্রাণী হত্যা মহা পাপ’ এবং জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ ভুলে গেছে। তারা সেখানে মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সকল মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা করছে। ধ্বংস করছে তাদের ঘর-বাড়ী।
অন্যায়ভাবে তাদের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে। সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে তেমন কিছু যেন অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতা থাকলে সবকিছু করা বৈধ মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব-নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীসমূহ সেখানে কার্যকর ভূমিকা রাখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। জোর করে সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উৎখাত করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষনা “ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেম্স্ বেলফোর তাঁর দেশের ইহুদী নেতা ব্যারন রথচাইন্ডকে নিখিত এক পত্রের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনের আরব ভূমিতে একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রিুতি দেন। যাকে ঐতিহাসিক বেলফোর ঘোষণা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।” অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী ইঙ্গ-মার্কিন অন্যয়ভাবে অসহায় ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখন্ড থেকে উৎখাত করে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পরাজিত হওয়ার পর ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইসরাইল কর্তৃক একের পর এক ফিলিস্তিনি ভূখন্ড জোরপূর্বক দখলের মাধ্যমে বহু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এরপর প্রায় সাত দশক পেরিয়ে গেলেও উদ্ধাস্তু ফিলিস্তিনিরা আজো তাদের নিজ আবাসে ফিরতে পারেনি। বরং ইসরাইলের নির্যাতনে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু নিহত হচ্ছে। নির্বিচারে বর্ষিত বোমার আঘাতে তাদের ঘর-বাড়ি চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে। ইসরাইলী দখলদার বাহিনী নানা অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের তাদের আবাস থেকে উচ্ছেদ করছে। তাদের জায়গা-জমি দখল করছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয়সহ বহু পশ্চিমা দেশ নীরবে তাদের এসব অন্যায় কর্মকান্ডের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাককে ধ্বংস হয়েছে। সেখানে নির্বিচারে হাজার হাজার নিবীহ ও নিরপরাধ নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক ও বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানও একই পরিণতি ভোগ করেছে। একজন ব্যাক্তিকে শাস্তি দিয়ে গিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা হরা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বহু জনপদ। বন্দী করা হয়েছে বহু মানুষকে। শুধু বন্দী করেই ক্ষান্ত দেয়া হয়নি। বন্দীদের উপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। গুয়াতানামো কারাগারের কথা আমরা জানি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার, যা বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। এই কারাগারে বন্দীদের বিনাবিচারে আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে ওয়াটার বোর্ডিংসহ বিবিধ আইন বহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে এই কারাগারকে মর্ত্যের নরক বলে করা হয়েছে। ইরাক, আগগানিস্তান, ফিলিস্তিন ও লিবিয়ার ন্যায় সিরিয়া, মিসর ও ইয়ামেনেও যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে। অন্যায়-অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সেখানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। সেখানে অমুসলিমদের চেয়ে মুসলিমদের দ্বারাই অন্য মুসলিম নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীর মুসলিমরা এ সব বন্ধে সেখানে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিগুলো দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। মুসলিম নামধারী কিছু অত্যাচারী শাসক দ্বারা তারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সাহায্যে-সহযোগিতা করছে অমুসলিমরা।
এছাড়া বর্তমানে সারা বিশ্বের অমুসলিম সমাজেও চরম অশান্তি বিরাজমান। বর্তমানের পরিবর্তিত ও কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষের বানানো বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ মানুষের সামগ্রিক জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ তাওহীদ ও আখিরাত বিমুখ কোন জড়বাদী নীতি কখনো সমাজে সার্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করতে পারে না। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ইনসাফপূর্ণ কোন কর্মসূচী নেই। এ কারণে আমরা দেখতে পাই, পাশ্চাত্যের পারিবারিক জীবনে আজ হুমকির মুখে। সেখানে পিতা তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে না। একইভাবে সন্তানও পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ কর্তব্য পালন করছে না। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের হক আদায় করছে না। ফলে সেখানে এক আশান্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়া পাশ্চাত্যের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নানাভাবে বিশ্বের দূর্বল রাষ্ট্রগুলোর ওপর তাদের অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে বিশ্বশান্তি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ স.-এ দাওয়াতী জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল, আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে এমন এক ইনসাফপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ করা, যেখানে প্রত্যেক নিজ নিজ অধিকার ভোগ করবে সাথে সাথে অপরের অধিকার আদায়ে অগ্রগামী হবে। কোন রকম জুলুম-নির্যাতনের আশ্রয় নেবে না। আর এ কাজে তিনি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি যেমন প্রদ্ধাশীল ছিলেন, তেমনি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্যও সংগ্রাম করেছেন। আর এটা সম্ভব করেছিলেন সমাজের বিভিন্ন শেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এক সৌহার্দ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে। তিনি শরীয়তের বিধান পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং এ ক্ষেত্রে কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করেননি। আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, সম্পদের সুষম বন্টনব্যবস্থা, জীবন সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সকলের স্বাভাবিক স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তিনি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা আনয়ন করেন। সর্বোপরি তিনি সকলকে পরকালীন চেতনায় জাগ্রত করেন। আখিরাতের কঠিন আযাবের ব্যাপারে সতর্ক করেন এবং চিরস্থায়ী জান্নাতের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেন। বিশ্বে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকলকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ স.-এর শিক্ষা সমাজের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়ন করতে হবে।
লেখক: কলামিস্ট ও গবেষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন