সাহিত্য ও ভাষায় : রাসূল (দ.) আমাদের আদর্শ
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিশ্বব্যাপী জাহেলি বা আন্ধকার যুগ বিরাজমান।ঐতিহাসিকগণ ঐ যুগকে ‘আল আয়্যামুল জাহিলিয়াহ’ নামে অভিহিত করেন। জাহেলি যুগে ধর্মীয় অবস্থা ছিল অতীব শোচনীয়। এক ইলার ইবাদত না করে তারা বস্ত উপাসক,তারকা পুজক,মুর্তি পুজক ইত্যাদি বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল। আবার কিছু লোক কোন ধর্মেই মানত না।ধর্মীয় বিশ্বাস না থাকলেও সাহিত্য ও ভাষার ছিল সোনালি যুগ।সে সময় অসংখ্য প্রতিভাবান কবিÑসাহিত্যিক কবিতা রচনায় নিয়োজিত ছিল। সাহিত্যের সাথে মানুষের সর্ম্পক ছিল সেতু বন্ধন।মানুষ প্রেমিক,কবিতা প্রেমিকা।সাহিত্যের জ্ঞান,বিবেক,বৃদ্ধি,মাধুরী,ছন্দ,শব্দমালা,কথার উপমা,নান্দনিকতা, জ্ঞানময় কবিতার সুন্দর সচিত্র প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান হতো। চলত কবিতার প্রতিযোগিতা।সে সময় মহান আল্লাহ অন্ধকারকে দুর করার নিমিত্তে মোহাম্মদ (দ) কে দুনিয়ায় প্রেরন করেন। বিশ^ নবী (দ) বিশুদ্ধ ভাষা ও আরবের শ্রেষ্ঠ কুরাইশ বংশে আব্দুল্লাহর জীর্ণ কুটির,মা আমেনার কোলে পুর্নিমার চাদঁ রুপে জন্ম গ্রহন করেন।আরব দেশে কুরাইশ বংশ ছিল সাহিত্য ও বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী।
আরবী সাহিত্যের ইতিহাস,একটি প্রাচীনতম ইতিহাস।সাহিত্যের ইতিহাস জানা ছাড়া সাহিত্যে অধ্যায়নে মজা আসে না।ইতিহাস জানার পুর্বে বলতে হবে,‘সাহিত্য ও ভাষায়,রাসুল (দ) আমাদের আর্দশ’। মহান আল্লাহ তাআলা সর্ব শেষ আসমানী কিতাব মহা গ্রন্থ আল কোরআন হযরত রাসুল (দ) এর প্রতি নাজিল করেন। আল কোরআন মুসলিম জাতির জীবন্ত সংবিধান।শুধু সংবিধান নয়,একটি সাহিত্য ও মহান কাব্যে ভান্ডার। এ গ্রন্থ কাব্য,ছড়া,গল্প,উপনাসে ভরপুর। এখানে যে ধরনের কাব্য,ছড়ার উপকরণ সন্নিবেশিত,মানুষ রচিত কাব্য ও ছড়ায় সে ধরনের উপকরনের প্রচুর অভাব ।বিশ্ব নবী (দ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল (দ)। তিনি ছিলেন উম্মি। অথচ বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তিনি কবি ছিলেন না,ছিলেন সাহিত্যে অনুরাগী,সাহিত্যে প্রেমিক একজন আর্দশ মহা মানব। এ কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমান করে যে, বিশ্ব নবী (দ) সাহিত্য ও ভাষায় অগ্রজ ভুমিকা পালন করে ছিলেন। তিনি (দ) কাফেরÑমুশরিক কবিকে নিন্দা ও ঘৃনা করেন। আল কোরআনের কাব্য রস,ভাষা,শৈলী,ছন্দমালা দেখে কাফের মুশরিকরা কিংকর্তব্য বিমুঢ হয়ে পড়ে। তারা নিজের বুদ্ধিÑজ্ঞানে,অনুভবে বিশ^ নবী (দ) কে কবি মনে করেন। মহান কবি আল্লাহ তাআলা তাদের ভ্রান্ত ধারনার জবাবে বলেন, ‘আমি তাকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং এরুপ কাজ তার পক্ষে শোভনীয় নয়’(সুরা ইয়াসিন)। অন্য জায়গায় ঘোষনা করেন,‘এবং কবিদের সমন্দে বলা যায়,বিভ্রান্ত লোকেরাই তাদের অনুসরন করে। তুমি কি দেখতে পাও না,তারা উপত্যকায় উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়,তদুপরি তারা মুখে যা বলে,কাজে তা করে না। তবে যারা ইমান এনেছে,সৎকাজ করেছে এবং আল্লাহর স্মরনে অতি মাত্রায় তৎপর রয়েছে এবং অত্যাচারিত হলে নিজেদের আতœ রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে তাদের সমন্দে এ কথা প্রযোজ্য নয়। জুলুম বাজরা সত্বর জানতে পারবে তাদেরকে কি বিপর্যয়ের সম্মুখিন হতে হবে’। মহান আল্লা তাআলা আরোও বলেন, ‘এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র সাধন। এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে”(সুরা রুম)।
বিশ্ব নবী রাসুল (দ) ছিলেন সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রেমিক। তারঁ হৃদয় ছিল সাহিত্যে প্রেমে ভরা এক মহা সাগর। তিনি সত্যেবাদি মুসলিম কবিকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরেন। সাহাবী কবিকে কবিতা লিখার প্রতি উৎসাহ ও প্রেরনা দিতেন।উৎসাহ-প্রেরনা পেয়ে মুসলিম কবি,সাহিত্যিকরা কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে বিরতিহীন ভাবে কবিতা লিখা শুরু করেন।মুসলিম কবিদের কবিতার ধরন,রচনা ভঙ্গি,ভাষাশৈলী,বুদ্ধি-জ্ঞান,কৌশল ছিল বিষাত্ব তীর।অতুলনীয় সাহিত্য সম্ভভার।তারা মুসলিম কবির সমাদর দেখে, হিংসার আগুনে জ¦লে পুরে সাই। বিশ^ নবী (দ) বলেন,‘যারা হাতিয়ার দ্বারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের সাহায্য করেছে,কথার(কবিতা) দ্বারা আল্লাহর সাহার্য্য করতে কে তাদের বাধা দিয়েছে’? প্রতি উত্তরে কয়েক জন সাহাবী কবি সুন্দর থেকে সুন্দরতম কবিতা উপস্থাপন করেন। ‘প্রিয় রাসুল (দ) ছিলেন,একজন কাব্য প্রেমিক’ মানুষ।নবী (দ) বলেন,‘কবিতা কথার মতই। ভালো যেমন সুন্দর,ভালো কবিতাও তেমন সুন্দর। মন্দ কবিতা মন্দ কথার মতোই অসুন্দর’(মিশকাত)। বিশ্ব নবী (দ) আরো বলেন,নিশ্চয় কোন কোন কবিতায় রয়েছে জ্ঞানের কথা(মিশখাত)।বিশ^ নবী (দ) এর মুখে নিসৃত কবিতার শোনিত ধারা নদীর ¯্রােতের মত প্রবাহমান ছিল। প্রিয় রাসুল (দ) এর মাতা আমেনা বিনতে ওয়াহাব ছিলেন একজন স্বভাব কবি। বিশ্ব নবীর বাবা আব্দুল্লাহর পরলোক গমনের পর মা আমেনা যে সব মার্চিয়া রচনা করেন তা ইতিহাস বিখ্যাত। প্রিয় চাচা আবু তালেবের কবিতা খ্যাতি ছিল জগৎ বিখ্যাত।হাসসান ইবনে সাবিত,ক’ব ইবনে মালিক,ও আবদুল্লাহ ইবনে রভহা (রা) ছিল রাসুল (দ) রাজ কবি। হাসসান ইবনে সাবিতের জন্য মসজিদে নববীতে বিশ^ নবী (দ) একটি মিম্বার স্থাপন করেন। যেখানে দাড়িয়ে হাস্সান ইবনে সাবিত কবিতা আবৃতি করেন। বিশ^ নবী (দ) এর শৈশব কাল অতিবাহিত হয়েছে বিশুদ্ধ ভাষা আর সাহিত্যের রস ¯িœগ্ধ পরিবেশে। যার কারনে নবুয়ত লাভের পুর্বে তিনি (দ) বিশুদ্ধ ভাষাÑভাষি ও সাহিত্য বুঝে উঠার জ্ঞানে জ্ঞানী ছিলেন।‘আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন,হযরত রাসুল (দ) বলেন,তোমরা আরবদের তিন কারনে ভালবাসবে,যেহেতু আমি আরব,আল কুরআনের ভাষা আরবী এবং জন্নাতিদের ভাষাও আরবী’।
সাহিত্যে রয়েছে জ্ঞান ও কৌশল। জ্ঞান ও কৌশলের সাহার্য্যে বিশ^ বাসীকে আলোর পথে ডাকা প্রত্যেক মোমেন বান্দার দায়ীত্ব ও কর্তব্য।‘হযরত উবাই ইবনে কাব (রা) হতে বর্নিত,তিনি বলেন, রাসুল (দ) বলেছেন,নিশ্চয় কোন কোন পদ্যে রয়েছে জ্ঞান ও কৌশল’।সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জ্ঞান ও কৌশল। ইলমে ওহি ছাড়া সত্যে পথে চলা মোমেন জীবনে অসম্ভব।কেউ যদি তরবারি দিয়ে আঘাত করে তবে তাকে তরবারি দ্বারা প্রতিহত করা,কেউ কলম দ্বারা ইসলামের সৌন্দর্য্যে কে আঘাত করলে তাকে কলম দ্বারা জবাব দেয়ার প্রয়োজন ।এরশাদ হচ্ছে,‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) হতে বর্নিত তিনি বলেন,হযরত রাসুল (দ) বলেন,তোমরা জান,মাল এবং জবান দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো’।আমরা মুসলিম।সাহিত্যের ক্যাম্পাসে ইমাম,আমরা মুক্তাদি হতে পারি না। অথচ আমরা অধ্যায়ন করি নাস্তিকবাদী কবি সাহিত্যিকদের লিখা বই। যা পড়ে অন্তর কে অসুস্থ করে ফেলেছি।মুখে মুখে হযরত রাসুল (দ) কে আর্দশ নেতা মানি,বাস্তব জীবনে ইয়াহুদি খ্রিষ্টানের অনুস্মরণ করি। বাস্তবে ইসলামের স্বকীয়কতা ধরে রাখতে পারছি না। সাহিত্য ও ভাষা চর্চায়, অন্যান্যদের আর্দশ অনুস্মরন করছি। অথচ বিশ^ নবী (দ) ভাষা ব্যবহারে ছিলেন সজাগ। সাহিত্যের প্রতি ছিলেন অনুরাগী। একজন মুসলিম হিসাবে কোরআনের তাফসির,হাদিস,ইলমে ফিকাহ,বিশ^ নবীর জীবনী,সিরাতুন নবী, ইসলামী সাহিত্য অধ্যায়নে কঠোর মনোযোগি হওয়া উচিৎ।ইসলামী চিন্তা ধারার কবি সাহিত্যিকের জ্ঞান, গর্বময় কাব্য,প্রবন্ধ,গল্প,উপনাস মনোযোগ সহকারে অধ্যায়ন করার প্রয়োজন।ইসলামী চিন্তাশীল লেখকের কিতাব,বই বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখি। মোট কথা চিন্তা,চেতনা,ভাবনা,কাজ ক্রমে ইসলামী শক্তির কোন বিকল্প নেই।
পরিশেষে বলতে চাই ,ইসলাম শুধু মাত্র একটি ধর্মের নাম নয়,একটি পরিপুণ জীবন বিধান। ধর্মের পাশা পাশি‘ সাহিত্য ও ভাষায় রাসুল (দ) কে আমাদের আর্দশ’হিসাবে গ্রহন করি। সে আলোকে জীবন গড়ি। অধ্যায়ন করি ইসলামী জ্ঞান,কৌশল বুদ্ধি সম্পুর্ণ কিতাক ও বই। ইসলামের পরশে চর্চা করি ইসলামী সাহিত্য এবং লালন করি ইসলামী সংস্কৃতি। আমাদের সমাজ জীবন থেকে অপসংস্কৃতি ও অবিশ^াসের দেয়াল ভাঙ্গি। সাহিত্যের ক্যাম্পাসে নির্মাণ করি ইসলামী সাহিত্যের মহা সাগর।গড়ে উঠুক আমাদের জীবনে রাসুল (দ) এর মহান আর্দশ।এই হোক সবার প্রত্যাশা।
লেখক পরিচিতিঃ সহকারী অধ্যাপক আরবী, গ্রন্থকার।
[email protected]
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন