সত্যালোকের সন্ধানে মুসলিম পরিবারের রূপরেখা ও বর্তমান অবস্থা
২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
মাতার চারিত্রিক পবিত্রতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মাতা সন্তান জন্ম দায়িনী। মায়ের উদর পবিত্র হলে সন্তানও পবিত্র হয়ে জন্ম নেয়। অপবিত্র মায়ের উদর হতে যে সন্তান জন্ম নেয়, সে হয় পিতা মাতার অবাধ্যকারী এবং মানুষ হন্তারক। ইসলাম নারীর প্রতি অর্পিত পর্দার মধ্যে তার সতীত্বের ঐশী গ্যারান্টি প্রদান করেছে। সন্তানের চোখে লজ্জাশীলতার কাজল পড়ানো এবং বিনয় নম্রতার চাদর গায়ে জড়ানোর দায়িত্ব মাতার। যে মাতা তার এ পরম দায়িত্ব থেকে গাফেল থাকে , সে মায়ের সন্তান তো জাহান্নামের দিকে দৌড়াবেই। অনৈতিক কাজের চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রেরণা সন্তান তার মায়ের নিকট থেকেই পায়। সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া মাতা পিতার প্রধান কর্তব্য। দুনিয়ার জীবনে মানুষের জন্য সম্পদ অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি বান্দাকে নির্দিষ্ট হায়াত ও তদানুযায়ী রিজিকের ব্যবস্থা করে দুনিয়াতে পাঠিয়ে থাকেন। মানুষ রিজিক সন্ধানে বিশ্বাসী হয়ে তা উপার্জন করতে চরম ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বান্দার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহ গোপন রেখে থাকেন। তার সন্ধান করতে আল্লাহ পাক তার বান্দাকে পথ নির্দেশ দিয়েছেন। সুরা আরাফের ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন “আমি তো তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং জীবিকার ব্যবস্থা করেছি।” আল্লাহ তায়ালা তার এ বাণীতে প্রমাণ করেছেন বান্দার রিজিক স্বয়ং তার কুদরতি হাতে। সুতরাং সন্তানকে রিজিক সন্ধানের কর্মপথ ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক হালাল উপায়ে অর্জনের শিক্ষা দেয়া পিতা মাতারাই করণীয় কাজ। হারাম ও হালাল উভয় পথেই সম্পদ অর্জনে আমাদের পরিশ্রম করতে হয়। তবে কেন আমরা হালাল উপায়ে সম্পদ উপার্জন না করে হারাম পথে সম্পদ করে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবো! সন্তানের মধ্যে এ অনুভূতি জন্মানো পিতা মাতার দায়িত্ব।
সন্তানের জন্য নৈতিক শিক্ষাই বড়, সম্পদ বড় নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা তার অনুগত বান্দার জন্য রিজিকের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। সন্তানের সাথে কখনো মিথ্যা কথা এবং ফাঁকিমূলক আচরণ করা যাবে না। সন্তানকে ছোট থেকেই সত্য বলা এবং সততার শিক্ষা দিতে হবে পিতা-মাতাকেই। সূরা আহযাবে ৭০ নং আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেন “হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বলো।” মানুষ যা বলে এবং যে কাজ করে আল্লাহ তাআলা তা শুনেন এবং দেখেন। এ বিশ্বাস সন্তানকে শিশুকাল থেকেই দিতে হয়। পক্ষান্তরে যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের সমাজে বিদ্যমান এবং সন্তানকে যে উপায়ে লালন পালন করা হচ্ছে তা তো বদদ্বীনি কাজ। আজ চোদ্দ পনের বছরের ছেলে মেয়েদের অনৈতিক কাজ এবং মানুষ হন্তার প্রমাণ সমাজে সর্বত্র ঘটছে, তার মূল কারন নৈতিক শিক্ষার অভাব। সুরা হুদের ৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন - “ওয়ামা মিন দাববাতিন ফিল আরদ্বি ইল্লা আল্লাল্লাহি রিযকুহা” অর্থাৎ পৃথিবীর প্রত্যেক জীবের জীবিকার দায়িত্ব মহান আল্লাহরই। মানুষ ব্যতীত সকল প্রাণীর মধ্যে তার উত্তরসুরীর জন্যে কোন সম্পদ রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই অথচ আল্লাহপাক তাদের খাদ্য ঠিকই যোগান দিয়ে থাকেন। মানুষের বেলায় পিতা-মাতা তার সন্তানের জন্যে সম্পদের ব্যবস্থা করে যাওয়ার চেয়ে নৈতিক শিক্ষা দেয়া আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় কাজ।
মুসলমানের ঘরে ঘরে আজ গান-বাজনা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। অনুষ্ঠান মাত্রই গান-বাজনা-নাচ। অথচ গান-বাজনাকে ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। গান মানুষকে গাফেলে পর্যবসিত করে। গান শ্রবণে মানুষ জাগতিক ভোগ মোহে মত্ত হয়ে পরে। গান-বাজনা শয়তানের কাজ। গান বাদ্যযন্ত্র ও রঙতামাশা এগুলো শয়তানী অভ্যাস। গান লেখা, শোনা, গাওয়া ও পরিবেশন ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। গান মানুষকে সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে অশ্লীলতার চরম পর্যায়ে ব্যভিচারে লিপ্ত করে। সূরা আরাফের ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন “কুল ইন্নাল্লাহ লা ইয়ামুরু বিল ফাহশায়ি আতাকুলু না আনাল্লাহি মালাতালামুন।” অর্থাৎ বল আল্লাহ অশ্লীল আচরণের নির্দেশ দেন না। এখানে অশ্লীলতার চরম রূপ বলতে ব্যভিচারকে বোঝানো হয়েছে। আর ব্যভিচার হচ্ছে এমনই কঠিন পাপ যার পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
কোরান পাকে সুরা বনি ইসরাইলের ৩২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন “ওয়ালা তাকরাবুজ জ্বীনা ইন্নাহুকানা ফাহিশাতান ওয়াছা আছাবীলা” অর্থাৎ “তোমরা অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তী হয়ো না, ইহা অশ্লীল ও চূড়ান্ত পর্যায়ের নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কাজ।” শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলে প্রকাশ্যে ব্যভিচার চলছে। হোস্টেল গুলোতে অবাধ যৌনাচার অর্থাৎ খরাব ঞড়মবঃযবৎ বিদ্যমান। সমাজের অনেক পরিবার আজ যৌন ক্ষেত্রে পরিনত। আদিম যুগের মানুষ নদীর তীরে, পাহাড়ের গুহায়, বনে-জঙ্গলে উলঙ্গ ও অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় জীবন যাপন করত। ধর্মীয় বিয়ে বন্ধন বলতে তারা কিছু বুঝতো না। অথচ তাদের মধ্যে সন্তান জ¤œ হতো, তাই তাদের বর্বর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আজকের ভোগবাদী বিশ্বের উন্নত সমাজে ভদ্রতার পরিচয় ফ্রিমাইন্ড এবং স্মার্ট নামে আখ্যায়িত দেহটাকেও বন্ধুর মাঝে বিকিয়ে দিচ্ছে, এ বন্ধুর সংখ্যাও আবার একাধিক। বিষয়টা কি চরম পৈশাচিকতা নয়? সমাজে এরাই বাহবা পাচ্ছে তাহলে এতে প্রতীয়মান হয়, আদিম যুগের গুহাবাসী ও আজকের সমাজের অট্টালিকা বাসীর মধ্যে মূলত কোন পার্থক্য নেই। আজকের সমাজের মানুষের মধ্যে ভালো মন্দের পার্থক্যজ্ঞান নেই। জাহেলী যুগেও মানুষের মধ্যে ন্যায় অন্যায় বোধ ছিল না সেদিন জাহিলিয়াত বলে আখ্যায়িত করা হতো বিশেষ বিশেষ এলাকাকে। আজ সে জাহেলিয়াত ফিরে এসেছে সারা বিশ্বের প্রতিটি ঘরে ঘরে।
“গৃহের বাইরে নারী নিরাপদ নয়” সর্বজন স্বীকৃত এ ধর্মীয় বাণী আজকের সমাজে মূল্যায়ন হয় না। কেননা বর্তমানে নারীর নিজ গৃহই তার অনৈতিক কাজের জন্য নিরাপদ। অপবিত্র উদর-ঔরশে জন্ম দেয়া সন্তানকে হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ দিয়ে হারাম উপায়ে লালন পালন করে সন্তানকে জাহান্নামের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এতে কারো মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। জ্বীনা-ব্যভিচার যেভাবে সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে তাতে এ সমাজবাসীর নিকটে মনুষ্যত্বের ধারক বাহক পয়দা হওয়ার আশা করা বৃথা। নগ্নতা ও বেহায়াপনামূলক আচরণ আজ ভদ্রতা নামে সমাজে মূল্যায়ন হচ্ছে। সরলতা ও নৈতিকতা আজ চরমভাবে উপেক্ষিতই শুধু নয় অনেক ক্ষেত্রে পদদলিত। নাইট ক্লাবে, ডিজে, আবাসিক হলে, আবাসিক হোস্টেলে, পার্কে সমাজের অভ্যন্তরে বহু পরিবারে ব্যভিচার বিদ্যমান। পত্র পত্রিকা এবং অন্যান্য প্রচারের মাধ্যমে লোমহর্ষক, হৃদয়বিদারুক ও মর্মন্তুদ যে ঘটনাগুলো আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে এর মূলে রয়েছে নারীর অবাদ বিচরণ। পুরুষ মহল হতে নারীকে আত্মরক্ষা করে চলাটা নারীর নৈতিক ধর্ম, এ বোধগম্যতা আজ নারীর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। বরং নারী তার গৃহহতে বাইরে পুরুষ মহলে চুম্বক আকর্ষণে ধাবিত হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে আবার বহুগামীতা। নারী আজ নিজেকে আশ্লীলতার প্রতিযোগিতার পণ্যে পরিণত করেছে। বহু নারী আজ অশ্লীলতার ভোগপণ্যে আত্মাহুতি দিচ্ছে তবু তা থেকে শিক্ষা নেবার ও দেবার যেন কেউ নেই। আগে মানুষ মিথ্যা বলতে ভয় পেত পাপ হয় বলে আজ মানুষ সত্য বলতে ভয় পায় জীবন যাবে বলে। সুতরাং সততা যখন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশ হতে উঠে যায় তখন সে জাতির বুকে নেমে আসে মহাদুর্যোগ। আজ আমরা সেই মহাদুর্যোগের মধ্যে কালাতিপাত করছি। এ দুর্যোগ হতে উদ্ধারের উপায় হচ্ছে খোদায়ী সংস্কার। এ সংস্কারের অধিনায়ক হবেন ইমাম মাহাদী আ.। তাঁর আগমনের পদধ্বণি শোনা যাচ্ছে। (সমাপ্ত)
লেখক: শিক্ষাবীদ গবেষক ইসলামী চিন্তাবীদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে ১শ’ ৫০ শিক্ষার্থী

বিক্ষোভের নামে সহিংসতা আইনের শাসনের অবমাননা: প্রেস উইং

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনকারী জকিগঞ্জের জয়িতাদের জয়ী হওয়ার গল্প

নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িতে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা

ইসরাইলী পণ্য বয়কটের দাবিতে রাজবাড়ীতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

গাজীপুরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে দোকানে হামলা গ্রেফতার ৪

ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ

লৌহজংয়ে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষে আলোচনা সভা সড়ক ও নৌ-র্যালী

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার প্রতিবাদে চাঁদপুরে ল'ইয়ার্স কাউন্সিলের বিক্ষোভ মিছিল

কৃষ্ণসাগরে বিশাল রুশ যুদ্ধ জাহাজ, স্যাটেলাইট ছবি দেখেই কাঁপছে ইউরোপ!

সুপ্রীম কোর্টের রায়ে ট্রাম্পের বিতাড়ন নীতি বহাল

ফরিদপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ৩৫

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা: ট্রাম্পের হুমকির জবাব দিলো চীন

কারিনা সুবিধার মেয়ে নয়,যা করবে, ভেবেচিন্তে কোরো

দাউদকান্দিতে শিক্ষার মানউন্নয়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

দাউদকান্দিতে মাছ ধরা নিয়ে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ -৩

সার্বজনীন স্বাস্থ্য-কল্যাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান: অধ্যাপক সায়েদুর রহমান

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে দৌলতখানে ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

ব্যাংকিং সেবার আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ও দ. কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি