জিনের আছর ও শারীরিক মানসিক রোগ
১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম
আর আমি যখন অসুস্থ হই, তিনি (মহান রব) আমাকে সুস্থতা দান করেন। - সুরা শুয়ারা আয়াত-৮০
মানুষ মহান রবের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষ এবং জ্বীনকে মহান রব একমাত্র তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আমরা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে গর্ববোধ করি। কিন্তু এই শ্রেষ্ঠত্ব কোন কাজে আসবে না যদি মহান মনিবের ইবাদাত না করি। কেননা ইবাদাতের কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ। ইবাদাতহীন মানুষ সকল সৃষ্টি থেকে নিকৃষ্ট। মহান রব আমাদের দেহ দিয়েছেন। এই দেহের দুটি অবস্থা রয়েছে, সুস্থতা এবং অসুস্থতা। সুস্থতা মহান রবের মহা নেয়ামত। রোগ ব্যাধি, বিপদ আপদও পাপ তাপ ক্ষমার জন্য অথবা মহান রবের প্রিয় পাত্রদের পরীক্ষা হিসেবে নেয়ামত। এই রোগ ব্যাধি আমাদের শরীরে নানা কারণে তৈরী হয়। কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, অসাস্থ্যকর পরিবেশ, কোন বিষাক্ত পোাকামাকড় সাপ বিচ্ছুর আক্রমণ, জ্বীনের আছর, জাদুর প্রভাব, বদ নজর ইত্যাদি। আজ আমরা জ্বীনের আছর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব:
জ্বীন শব্দটি আরবী। এর অর্থ হল, গোপন থাকা, গোপন হওয়া, অন্তরাল হওয়া, অদৃশ্য, গুপ্ত, লোকায়িত, আবৃত ইত্যাদি। জ্বীনরা আমাদের কাছ থেকে আড়ালে থাকে অদৃশ্য থাকে লুকিয়ে থাকে বলেই জ্বীনদের জ্বীন বলা হয়। মহান রব মানুষে আদম আঃ কে সৃষ্টির আগেই জ্বীন জাতি সৃষ্টি করেন। সুরা হিজরের ২৭ নং আয়াতে তিনি বলেন, আমি জ্বীনকে আদমের আগে অতুষ্ণ স্ক্ষু আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছি।
মানুষ যেমন মানুষের ক্ষতি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বীনেরাও মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আবার মানুষের দ্বারা জ্বীনেরাও ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে। অন্যদিকে মানুষ মানুষের উপকার করতে পারে, জ্বীনেরাও মানুষের উপকার করতে পারে। মানুষের দ্বারা জ্বীনদেরও অনেক উপকার হতে পারে।
জ্বীনের আছর: মহান রব মানুষ এবং জ্বীনকে একমাত্র তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে মানুষ আসার আগে জ্বীনেরা পৃথিবী আবাদ করেছিল। কোরআনুল কারীমে সরাসরি জ্বীন শব্দ ব্যবহার করে জ্বীনদের সম্পর্কে ৩৪ খানা আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। মহান রব কোরআনুল কারীমে সুরা জ্বীন নামে একটি সুরা নাযিল করেছেন। জ্বীন আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের মত তাদেরকেও আল্লাহর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এর প্রতি বিশ্বাস ইমানের অংশ। এখন যদি আমরা জ্বীনদের সৃষ্টিকে খামখেয়ালী মনে করি, বা জ্বীন আছে কি নেই ইত্যাদি প্রশ্ন ছুড়ে দেই বা এটাকে অবান্তর বিশ্বাস মনে করি। তবে আমাদের ইমানেও খামখেয়ালী এসে বাসা বাঁধবে। কোরআনুল কারীমে সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও জ্বীনদের আলোচনা, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জ্বীনদের আলোচনা এসেছে। জ্বীনদের বিষয় নিয়ে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতী রাহঃ জ্বীন জাতির ইতিহাস নিয়ে একটি অমূল্য গ্রন্থ রচনা করেছেন।
জ্বীনদের দ্বারা মানুষের রোগ সৃষ্টির ব্যাপারে আমরা কয়েকটি হাদিস দেখতে পারি:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, শয়তান মানুষের দেহে তার রক্তের মত প্রবাহিত হয়- ফতহুল বারী। জ্বীন বা শয়তানের আছরে মানুষের নানাবিধ রোগ হতে পারে।
মতর ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উম্মে আবান বিনতে আল ওয়াজি বিন যারি বিন আমির আল আবদি তার পিতা থেকে আমাদের বর্ণণা করেছেন যে, তার দাদা আল যারি তার নিজের অথবা তার বোনের এক ছেলেকে নিয়ে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে আসলেন। তার দাদা বলেন, আমরা মদিনায় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার সাথে আমার অথবা আমার বোনের ছেলে রয়েছে, তার মস্তিস্ক বিকৃত। আমি তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। যাতে আপনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। তার মুখ খোল। সে তার মুখ খোলল এবং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলেন আর বললেন, দূর হও হে আল্লাহর শত্রু কারণ আমি আল্লাহর রাসুল বলছি। এই কথা তিনি তিন বার বললেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এবার তোমরা ছেলেকে নিয়ে যাও। তার মধ্যে খারাপ কিছু ন্ইে এবং সে যেই সমস্যায় ভুগছিল তা আর কখনো ফিরে আসবে না।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রেখো, পান করার পাত্রগুলো বন্ধ করে রেখো, ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে রেখো আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদেরকে ঘরে আটকে রেখো। কারণ এ সময় জ্বীনেরা ছড়িয়ে পড়ে। - বোখারী ৩০৭৯
আবু মুসা আশয়ারী রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত আন্ত্রিক ও প্লেগের দ্বারা ধ্বংস হবে। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরাতো আন্ত্রিক রোগকে জানি, কিন্তু প্লেগ রোগ কি জিনিস? তিনি বলেন, তোমাদের শত্রু জিনদের হামলা বিশেষ। -মুসনাদে আহমাদ।
আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্লেগ রোগে প্রচন্ড কষ্ট আছে। যা আমার উম্মতকে চাপিয়ে দেয়া হবে তাদের শত্রু জ্বিনদের তরফ থেকে। সেই জ্বিনদের কুঁজ হবে উটের কুঁজের মতো। যে ব্যক্তি প্লেগ-পীড়িত এলাকায় থাকবে, সে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষী (মুজাহিদের মতো) হবে। প্লেগে ভুগে যে মারা পড়বে, সে শহীদের মর্যাদা পাবে। এবং যে মানুষ প্লেগ প্রভাবিত এলাকা ছেড়ে পালাবে, সে ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ময়দান ছেড়ে পলায়নকারীর মতো অপরাধী বলে গণ্য হবে। - তাবরানী।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার এক মহিলা তার ছেলেকে হযরত রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে এসে বলে- ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার এই ছেলেটি পাগল এবং এর পাগলামি জাগে সকালে ও সন্ধ্যায়। এ আমার জীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে হযরত। তখন নবীজী ছেলেটির বুকে হাত বুলিয়ে দেন এবং তার জন্য দু’আ করেন। ফলে সে বমি করে ফেলে। বমির সাথে তার পেট থেকে একটি কালো কুকুর ছানা বের হয়ে পালিয়ে যায়। (যেটি আসলে ছিল কুকুরছানারূপী জ্বিন)।- মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকী।
হযরত উম্মে আব্বান বিনতে আল-ওয়াযাহ্ (রহঃ)-এর পিতামহ জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে নিজের একটি পাগল বাচ্চাকে নিয়ে যেতে নবীজী বলেন, ওকে আমার কাছাকাছি নিয়ে এসো এবং ওর পিঠটি আমার সামনে কর। তারপর নবীজী তার উপর নীচের কাপড় ধরে পিঠে মারতে মারতে বলেন- ওরে আল্লাহর দুশমন! বেরিয়ে যাও। ফলে বাচ্চাটি সুস্থ হয়ে চোখ খোলে।- মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ।
হযরত উসামা বিন যাইদ (রাঃ) বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে হজ্জের জন্য (মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে) রওয়ানা হয়েছি। ‘বাতুনে রওহা’ নামক স্থানে এক মহিলা নিজের বাচ্চাকে সামনে এনে বলে- “হে আল্লাহ্র রসূল! এ আমার ছেলে। যখন থেকে আমি ওকে প্রসব করেছি তখন থেকে এখন পর্যন্ত এর রোগ সারেনি। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) মহিলাটির কাছ থেকে বাচ্চাকে নিয়ে নিলেন। এবং তাকে নিজের বুক ও পায়ের মাঝখানে রেখে, তার মুখে থুথু দিয়ে বলেন- ওহে আল্লাহর দুশমন! বেরিয়ে যা। আমি আল্লাহ্র রসূল। এরপর নবীজী বাচ্চাটিকে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বলেন- একে নিয়ে যাও। এখন ওর কোন কষ্ট নেই।- বায়হাকী।
জ্বীনের আক্রমণে মানুষের মনে এবং শরীরে দুই জায়গায়ই ক্ষতি হতে পারে। মানসিক আক্রমণে মানসিক রোগ দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আক্রমনের বা আছরের ফলে বিভিন্œ রোগ দেখা দেয়। অনেক সময় স্বাভাবিক চিকিৎসায় রোগ ভাল হয়ে যায়। বিষয়টা হলো যে জ্বীনের মাধ্যমে রোগের আক্রমণ দেখা গেছে সে যদি চলে যায় এমনিতেই রোগটি ভাল হয়ে যায়। আর সে যদি না যায় তবে চিকিৎসার পর চিকিৎসা তারপরও রোগ ভাল হয় না। বা একটি রোগ সেরে অন্যটি দেখা দেয়। আবার দীর্ঘ মেয়াদী আছরের ফলে শরীরে যে রোগের সৃষ্টি হয়। তখন সে এখান থেকে সরে গেলেও সাধারণত ঔষধী চিকিৎসা ছাড়া রোগ ভাল হয় না। তাছাড়া জ্বীনেরা কারো ঘরের জিনিস পত্র নষ্ট করে। জিনিস পত্র সরিয়ে ফেলে। সম্পদের ক্ষতি সাধন করে।
আবার অন্য দিকে জ্বীনদের মধ্যে জাদুকর জ্বীন রয়েছে এরা মানুষের উপর জাদু করে থাকে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইদ বিন উমাইর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গইলান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, গইলান হল জাদুকর জ্বীন। এছাড়া জ্বীনদের বদ নজরেও মানুষ অসুস্থ হয়। উম্মে সালমাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার তাঁর ঘরে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখেন, যার জিনের বদনজর লেগেছিল। তিনি বলেন - একে অমুকের কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক করিয়ে নাও, এর বদনজর লেগেছে। - বুখারী।
জ্বীন মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মানুষের শরীরে চলাচল করতে পারে। মানুষের শারিরিক মানসিক ক্ষতি সাধন করতে পারে। জ্বীনের আছরের কারণে সাধারণত যে সব রোগ হয় আমরা এসব নিয়ে একটু চিন্তা করতে পারি। (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন