রাষ্ট্রভাষার দাবি এবং জিন্নাহর দু’টি ভুল
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024February/2-20240220213334.jpg)
১৯১৮ সাল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নটি ফের সামনে এসে যায়। আগে থেকেই দাবিটি উঠেছিল। বিশ্বযুদ্ধের কারণে জোরদার হতে পারেনি। স্বাধীন ভারতের শাসন কাঠামো কেমন হবে, এর সাধারণ ভাষা বা লিঙ্গুয়াফ্রাংকা কী হবে। এসব নিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলে আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হয় সঙ্গত ও স্বাভাবিক কারণেই। ১৯১৮ সালের ডিসেম্বরের দিকে এম কে গান্ধী প্রশ্ন রাখলেন, ভারত স্বাধীন হলে এমন একটি ভাষার প্রয়োজন হবে, যাকে সাধারণ ভাষা বা লিঙ্গুুয়াফ্রাংকা বলা যায়। গান্ধীজী এই প্রশ্ন রেখে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চিঠি লিখলেন। জবাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন : ‘ঞযব ড়হষু ঢ়ড়ংংরনষব খধহমঁধমব ভড়ৎ ঃযব রহঃবৎ ঢ়ৎড়ারহপরধষ রহঃবৎ পড়ঁৎংব রং ঐরহফর রং ওহফরধ.’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই উত্তরে গান্ধীজী আর কোনো চিঠি লিখে তার মতামত জানিয়েছিলেন কিনা জানা যায় না।
এর দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯২০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তি নিকেতনে সাধারণ ভাষা বিষয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় ভারতের ভাষা-বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বিশিষ্ট ভাষাবিদরা তাদের অভিমত তুলে ধরেন। তাদের প্রায় সকলেই হিন্দীর পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সভায় একটি মূল্যবান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি তার প্রবন্ধে ভাষাত্বাত্তিক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করে তিনটি ভাষাকে সাধারণ ভাষা হওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করেন। সে তিনটি ভাষা হলো উর্দু, বাংলা ও হিন্দী। হিন্দু ভাষাবিদরা যেখানে একমাত্র হিন্দীকে সাধারণ ভাষার গৌরব প্রদান করেন, সেখানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হিন্দীকে তৃতীয় নম্বরে রাখেন। তিনি হিন্দী ও উর্দুর মাঝখানে স্থান দেন বাংলাকে। বাংলার সাধারণ ভাষা হওয়ার পক্ষে অকাট্য যুক্তিতথ্য উপস্থিত করেন তিনি।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জ্ঞান, মনীষা, বিদ্যাবত্তা ও দূরদর্শিতার উচ্চ প্রশংসা না করে পারা যায় না। তিনি স্বাধীন অবিভক্ত ভারতে যে তিনটি ভাষাকে সাধারণ ভাষা হওয়ার যোগ্য বলে সাব্যস্ত করেন, সেই তিনটি ভাষাই এখন তিনটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রভাষা বা সাধারণ ভাষা। উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা, হিন্দী ভারতের এবং উর্দু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য এ দেশের মানুষকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করতে হয়। ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে এ ভূখ-ের স্বাধীনতা। বাঙালিই প্রথম জাতি যারা রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আর বাংলাদেশ বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের অন্যতম, যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে।
ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যখন বাংলাকে সমগ্র ভারতের সাধারণ ভাষা হওয়ার পক্ষে নির্দ্বিধায়-নিসংকোচে জোর দাবি তোলেন, তখন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও একমাত্র নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার সাধারণ ভাষা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখেননি।
স্বাধীন অবিভক্ত ভারতে সাধারণ ভাষা কী হবে, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক অব্যাহত থাকে। কংগ্রেস মহল ও হিন্দু বিদ্ব্যৎসমাজের অধিকাংশ হিন্দীর পক্ষ নিলে মুসলিম রাজনৈতিক মহল ও অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী উর্দুর পক্ষে অবস্থান নেয়। দুই তরফই যুক্তিজাল বিস্তার করে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এর মধ্যে ১৯২৮ সালের দিকে ‘নেহেরু রিপোর্ট’ পেশ করা হয়। এটি ছিল ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের রূপরেখা। দেখা যায়, এতে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য করা হয়েছে। মুসলিম লীগ এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে। কিছু সংশোধনী এনে শর্ত দেয় যে, সংশোধনীগুলো গ্রহণ করা হলে রিপোর্ট সমর্থন করা হবে। কংগ্রেস মহল সংশোধনী গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে কার্যত হিন্দু-মুসলমানের চলার পথ আলাদা হয়ে যায়। মুসলমানদের মধ্যে স্বতন্ত্র হোমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার চেতনার উন্মেষ ঘটে অনিবার্যকারণেই। ওদিকে নেহেরু রিপোর্টের সময়কালে এম কে গান্ধী হিন্দী-উর্দুর পরস্পরবিরোধী দাবির একটা মীমাংসা করে দেন। বলেন, আমাদের রাষ্ট্রভাষা হইবে হিন্দুস্থানী। আরবী বর্ণমালায় লিখিত হইলে যাহার নাম হইবে উর্দু এবং দেবনগরী বর্ণমালায় লিখিত হইলে যাহাকে বলা হইবে হিন্দী’। কিন্তু নেহেরু রিপোর্টের ফলাফল নেতিবাচক হওয়ার প্রেক্ষিতে গান্ধীজী তার এ অভিমত বিনাদ্বিধায় বদলে ফেলেন। বলেন, ‘ভাব রাষ্ট্রভাষা হইবে হিন্দী-হিন্দুস্থানী’। বলা বাহুল্য, তিনি হিন্দী হিন্দুস্থানী বলে হিন্দীর পক্ষেই রায় দেন।
॥ দুই ॥
১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে ভারতে মুসলমানদের জন্য একাধিক হোমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে উত্তর-পশ্চিমে একটি এবং পূর্বাঞ্চলে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। পরে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে দুটির বদলে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। অতঃপর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পাকিস্তান দুই অংশে বিভক্ত হয়। পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমে পশ্চিম পাকিস্তান। স্বাধীন ভারতে হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়, যদিও দক্ষিণে হিন্দী বিরোধিতা ছিল, এমন কি এখনো সে বিরোধিতা জারি আছে। সেই ৪৭ সালেই যদি মূল লাহোর প্রস্তাব মতে, পূর্ব-পশ্চিমে দুই মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে রাষ্ট্রভাষার মীমাংসাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যেতো। পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হতো বাংলা এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতো উর্দু। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ করা যেতে পারে, এভাবে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে ভাষা আন্দোলন হতো না এবং ’৭১ সালে যুদ্ধ করে, রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠারও প্রয়োজন হতো না।
যখন এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, দুই অংশে বিভক্ত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি বা অফিস-আদালতের ভাষা, শিক্ষার ভাষা কী হবে, তা নিয়ে বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবী ও কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে কোনো সংশয় ছিল না। সেটা যে বাংলাই হবে, তা ছিল নিশ্চিত।
কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসক গোষ্ঠী যখন রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পক্ষে জোর তৎপরতা শুরু করে, তখন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া বাঙালিদের আর কোনো উপায় থাকে না। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক মাসের মধ্যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠিত হয়। এ সংস্থাই ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। সংস্থার তরফে ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। এর পর এ আন্দোলনে গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ প্রভৃতি সংগঠন একে একে শামিল হয়। এক পর্যায়ে আন্দোলন এতটাই উত্তুঙ্গে ওঠে যে, পূর্ববঙ্গের (পূর্ব পাকিস্তানের) মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন আন্দোলনকারীদের সাথে একটি চুক্তি করতে বাধ্য হন। চুক্তিতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, অফিস-আদালতের ভাষা করার জন্য পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদে প্রস্তাব তোলা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এটা ১৯৪৮ সালের মধ্য মার্চের দিকের কথা। তার আগে ১১ মার্চ আন্দোলনকারীদের ডাকে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব বাংলা বা পূর্বপাকিস্তান সফরে আগমন করেন। এটা গভর্নর জেনারেল হিসাবে ছিল তার প্রথম সফর। ২১ মার্চ ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে তিনি এক জনসভায় ভাষাণ দেন। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তন উৎসবে ভাষণ দেন। দুই ভাষণেই তিনি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
রেসকোর্সের ভাষণে বলেন: But let me make it very clear to you that the state Language of Pakistan is going to be Urdu and no other Language.
mgveZ©‡bi Drm‡ei fvl‡Y e‡jb: There can be only state Language of the component parts of the state are to march forward in unison and that Language, in my opinion can be only Urdu.
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর এই বক্তব্য শ্রোতাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। অনেকে প্রতিবাদ জানান।
রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তার এ বক্তব্য যে সঠিক ছিল না, সেটা তিনি পরে বুঝতে পারেন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এলাহী বখশের কাছে এ ব্যাপারে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রখ্যাত সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাব্বের তার ‘ইতিহাস কথা কয়’ গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন : জিয়াবত-এ থাকাকালে মিস্টার জিন্নাহ মাঝে মাঝে ডাক্তার এলাহী বখশ-এর সাথে আলাপ করতেন। তাও তার নিজের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে নয়। পাকিস্তানের ভাষা নিয়ে। ডাক্তার এলাহী বখশ-এর মুখে শুনেছি, মিষ্টার জিন্নাহ তার সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলেন: ‘দেখ ডাক্তার, আমি জীবনে দুটি ভুল করেছি, তাও পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে। প্রথম ভুল করেছি লাহোর প্রস্তাবকে সংশোধন করে, যা একজন দেশের নেতা হিসাবে আমার পক্ষে আদৌ করা উচিত হয়নি। আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কর্র্তৃত্ব মানবে না। তারা নিশ্চয়ই স্বাধীন হয়ে যাবে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ওদের ওপর বিমাতাসূলভ আচরণ। পাকিস্তান ওদের ত্যাগের জন্যই এসেছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা ওদের প্রতি অবিচার করছে।
আমার দ্বিতীয় ভুল আমি ঢাকায় গিয়ে করেছি। গভর্নর জেনারেল হিসাবে ভাষা সমস্যা নিয়ে কথা বলা আমার উচিত হয়নি। আসলে ভাষা প্রশ্নে মীমাংসা পার্লামেন্ট করতে পারত। কিন্তু আমি কয়েকজন পূর্ব পাকিস্তানি নেতার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ভাষার প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলাম। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানি ছাত্র ও জনগণের যে দৃঢ় মনোভাব লক্ষ করেছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি অযৌক্তিক নয়।’
মিস্টার জিন্নাহ আরো বলেছিলেন ‘উর্দু পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণের ভাষা নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত। অথচ পূর্ব পাকিস্তানে যার সংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। সেখানে শতকরা ১০০ জনই বাংলাভাষী। সুতরাং, বুঝতেই পারছ, বাংলা ভাষার দাবি কত জোরালো। আর এ জন্যই আমি ভাষা সম্পর্কে আর কোনো কথা কোনোদিন উচ্চারণ করিনি।’
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার ঢাকা সফরের পর খুব বেশি দিন বেঁচে ছিলেন না। এর মধ্যেই তিনি প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করেছিলেন এবং অনেকটা স্পষ্টভাবে তার দীর্ঘ ও অনমনীয় সংগ্রামের ফসল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ দেখতে পেরেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর অন্ধত্ব ও আত্মঘাতী জেদ ও বিদ্বেষ এতই প্রবল ছিল যে, তারা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ন্যায্যতা বুঝতে চায়নি।
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিম উদ্দীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ১৯৫২ সালে ২৭ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় দেয়া ভাষণে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু। এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে গোটা পূর্ব পাকিস্তান বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এতদিনের ঢিমে তালে চলা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপে আবির্ভূত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল-বিক্ষোভের কর্মসূচি দেয়া হয়। সরকার কর্মসূচি বানচাল করতে ১৪৪ ধারা জারিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসে না। ঢাকায় ছাত্র-জনতা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ গুলিবর্ষণ করে, যাতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার প্রমুখ শাহাদত বরণ করেন।
অতঃপর ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী ইতিহাস কারো অজানা নেই।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার চিকিৎসক এলাহী বখশের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির বিষয়ে যে মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তার সবই সত্যে পরিণত হয়েছে। তিনি যে তার দুটি ভুলের উল্লেখ করেছেন যদি তা না করতেন, তাহলে ইতিহাস ভিন্ন রকম হতো।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![‘খান ইউনিসে’ ৪ দিনে বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ লাখ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727095441.jpg)
‘খান ইউনিসে’ ৪ দিনে বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ লাখ
![পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের সামনে শ্রীলঙ্কা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/srilanka-acc-20240727094925.jpg)
পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের সামনে শ্রীলঙ্কা
![ইসরাইলকে বোমা সরবরাহের নীতি পরিবর্তন করেনি যুক্তরাষ্ট্র](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727094833.jpg)
ইসরাইলকে বোমা সরবরাহের নীতি পরিবর্তন করেনি যুক্তরাষ্ট্র
![১ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে লোকসান ৬ কোটি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727094633.jpg)
১ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ে লোকসান ৬ কোটি
![বিজিবির নিরাপত্তায় ট্রেনে জ্বালানি তেল পরিবহন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727094352.jpg)
বিজিবির নিরাপত্তায় ট্রেনে জ্বালানি তেল পরিবহন
![বাংলাদেশে সহিংসতা প্রসঙ্গে মমতা, ‘আমাকে শেখাবেন না, বরং আপনারা শিখুন’](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727093432.jpg)
বাংলাদেশে সহিংসতা প্রসঙ্গে মমতা, ‘আমাকে শেখাবেন না, বরং আপনারা শিখুন’
চোটজর্জর বার্সাকে নিয়ে চিন্তিত ফ্লিক
![বছরের প্রথমার্ধে বিদেশি বিনিয়োগে দারুণ প্রবৃদ্ধি চীনে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727091817.jpg)
বছরের প্রথমার্ধে বিদেশি বিনিয়োগে দারুণ প্রবৃদ্ধি চীনে
![জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240727085854.jpg)
জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে
জন্মভূমির বিপক্ষে মুরের ফিফটি, মাডান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
![ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/4634-20240727032845.jpg)
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড
![পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও
![বেতাগী দরবারে ওরশ আজ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
বেতাগী দরবারে ওরশ আজ
![সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা
![কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/common/-default.jpg)
কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে
![নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/5-20240726212443.jpg)
নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি
![বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212448.jpg)
বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ
![শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726212737.jpg)
শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী
![মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213356.jpg)
মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড
![গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024July/SM/500-321-inqilab-white-20240726213707.jpg)
গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা