কবিতা-মর্টারশেল-বৃষ্টি
০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
ডুমুরতলি বাজারে গাড়ি রেখে নদীর পাড়ে সারবাধা ডুমুর গাছের তলা দিয়ে হাঁটতে হল অনেকটা পথ। বাঁদিকে একটা খেলার মাঠ পড়ল- মাঠ শেষে এল সাইজ টিনের চাল-বেড়ার মাঝারি আয়তনের স্কুলঘর। সে রাতে যতদূর মনে পড়ে- এখানে তল্লার ভাঙাচুরা বেড়াদেয়া দোচালা একটা স্কুলঘর দেখেছিলাম। প্রৌঢ় আলিমুদ্দিন মাস্টার সাহেব জানিয়েছিলেন সরকারি অনুমোদনহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিনি নিজেই চালিয়ে আসছেন। নায়লা আনমনে এগিয়ে যাচ্ছে- জোরে হেঁটে ওকে নিয়ে গেলাম স্কুল ঘরটার উত্তরে নদীর পাড়ে
একাত্তরের সেই রাতে আন্দাজও করতে পারিনি ডুমুরতলি বাজার থেকে কতদূর এই জায়গাÑ আন্দাজ করতে পারার কোন কারণও ছিল নাÑ বাজারটাই খেয়াল করিনি। আমরা এগিয়েছিলাম উল্টোদিকে নদীর অপর পাড় থেকে। টিপ টিপ বৃষ্টি চোখের পাতায় পড়ছে মুছে ফেলার সময়-সুযোগ নেই। শরীরের ভেতর লক্ষ্যটা ছিল বুলেটের মতÑ আর সবকিছু মিছে হয়ে গিয়েছিল ওই সময়টাতে। আজ এত বছর পর আবার ওই জায়গাটাতে ডুমুরতলি বাজার হয়ে উল্টোদিকের রাস্তায় এসেছি। তখন পূবদিকে নদীর ওপারে রাস্তার কোন চিহ্ন ছিল নাÑ বর্ষায় তিন/চার মাইল দূরের লোকেরা নৌকা করে নদী পার হয়ে ডুমুরতলি বাজারে নামতÑ এরকম একটা কথা মনে পড়ছেÑ যে রেকি করতে এসেছিল সে-ই জানিয়েছিল।
নায়লাকে নিয়ে স্কুল ছাড়িয়ে নদীর পাড়ে এগোতে গিয়ে হঠাৎ ফিরে তাকালাম। কেন তাকালাম! জানি নাÑ সত্যই জানি না। নায়লাকে এরকম চোরা চোখে দেখা তিরিশ বছরের অভ্যাস। যখনই তাকিয়েছি তখনই এবং আজকেও সেই বারুদের বৃষ্টিভেজা গন্ধ-পানিতে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পতনের শব্দ-মর্টার শেলের ঝলসান আলোÑ শাহেদের শেষ আকুতি শক্ত কাঠ হয়েওঠা শরীর বিদ্যুৎপাতের মত একের পর এক আমার চেতনায় পতিত হয়েছে। আমি হতবুদ্ধি হয়ে নায়লাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিÑ আমার বুক নিয়েই নায়লার যত আগ্রহ। ও বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারত না আমার বুকেÑ গভীর ঘুমের বৃষ্টিতে আচ্ছন্ন নায়লাকে আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম তখনই।
রক্ত পড়ছে শরীর চুঁইয়ে ফোঁটায় ফোঁটায়Ñ পানিতে শব্দ ওঠছেÑ টুউপ্ টউপ্ টুউপ্Ñ রক্ত এমন শব্দ করে ঝরে! কান পাতলামÑ টুউপ্ টউপ্ টুউপ্ তবলার বোলের মত নয় বেহালার কান্নার মত দীর্ঘলয়ের রক্ত-ঝরার এই শব্দ চারপাশে লেপ্টে যাচ্ছে। রক্তের সর্বপ্লাবী লাল রঙ আর মর্টার শেলের আগুনের মধ্যে কোনটা অধিক লাল-কোনটা অধিক আগ্রাসীÑ শক্তিতে অধিক স্ফীত এই প্রশ্ন আমাকে তাড়িত করে বারবার।
আমরা এখন রক্তের উষ্ণতায় ভাসমানÑ এ উষ্ণতা শরীরে বর্ষণ আনে নাÑ এ উষ্ণতা শক্তিমত্ত বেপরোয়া আত্মপ্রতিষ্ঠার উদ্যমে সতেজ। কিন্তু রক্তের শব্দÑ রক্তপতন ধ্বনি! মর্টার শেল-মেশিনগানের গুলি থেমে যাবার পর নেমে আসা সন্দিগ্ধ নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে ওঠছে রক্তের এই মৃদু অথচ স্পষ্ট পতনধ্বনি। নাম না জানা ছোট এই নদীÑ এমন কত নদী আছে এদেশে! সব নদী এখন রক্তপ্রবাহিণীÑ পানির নামে রক্ত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব নদীÑ পলির মত রক্ত জমবে দেশের মাটিতেÑ সেই মাটিতে ফলবে নতুন ফসলÑ আমাদের স্বপ্নের ফসলÑ
রক্তপতন ধ্বনি কত স্বাভাবিক অবলীলাময়Ñ ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরতে ঝরতে এক সময় রক্তশূন্য অসাড় হয়ে পড়বেÑ
নিষিন্দা ঝোঁপ ঘেঁষে কোমর পানিতে রক্তপতন ধ্বনি কানে নিয়ে নিশ্চল আমি। ঘন্টাখানেক আগেও মর্টার শেল-মেশিনগানের বীভৎস শব্দের ফাঁকে ফাঁকে পানি নড়ে ওঠার মৃদু শব্দ আতংকের মত দুলে ওঠেছে। সার্চ লাইটের আলো সরে যাবার পর চোখ খুললেও অন্ধকার সয়ে ওঠার আগেই ঘুরে আসে সার্চ লাইটÑ তীব্র আলোর বিচ্ছুরণ আমাদের গ্রাস করে রেখেছে। আমরা অসহায়ের মত সময় পার করছিলাম। ফিরে যাব কি যাব নাÑ এই দোটানায় প্রাণ হাতে নিয়ে অপেক্ষা যে কী রকম শ্বাসরুদ্ধকর!
আমাদের পরিকল্পনা ঠিক ছিল নাÑ প্রস্তুতিরও ঘাটতি ছিল। রেকি হয়নি ঠিকমতÑ নতুন লোকÑ অভিজ্ঞতার অভাব ছিল রেকিতেÑ শেষ পর্যন্ত টুআইসি’র জেদে এখানে এ্যাম্বুশ এবং এ্যাটাক। জেদের পেছনে যুক্তিও ছিলÑ এই ক্যাম্পটা হটিয়ে দেয়া অনিবার্যÑ মুক্ত অঞ্চল সম্প্রসারণ ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন লক্ষ্য নেই এই মুহূর্তে। পাকিস্তান-আর্মির নদীর ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা নেইÑ এটা ঠিক হলেও এই নদী বাস্তবে আমাদের তেমন সহায়ক হয়নি। কারণ আমরা যেদিক দিয়ে আক্রমণ করি সেখানে নদীর উঁচু পাড় নেইÑ ঢালু চর-ক্ষেতখলার কারণে রাতেও অপরপাড় থেকে এখানকার নড়াচড়া আঁচ-অনুমান করা সহজ।
পাকিস্তানি বাহিনী প্রথম আক্রমণটা করে ধীর লয়ে এবং থেমে থেমে। এতে বিভ্রান্ত ও দলছুট হয়ে টুআইসি-শাহেদ-আমি এবং আরও দু’জন নদীর এপাড়ে চলে এসে ওদের ফাঁদে পা দিলাম। কিন্তু আমাদের শক্তি এত কম যে ওদের প্রতি-আক্রমণের তোড়ে আমাদের আক্রমণ দাঁড়াতে পারছে নাÑ হঠাৎ ওরা আক্রমণের গতি বাড়াল। সে-ও মাত্র মিনিট পাঁচেকÑ তারপর আবার কমলÑ আগের মত ধীরলয়ে চলল এবং এভাবে কিছুক্ষণ চলে হঠাৎ চুপ মেরে গেল। প্রথম থামল মর্টার শেল আর মেশিনগানÑ তারপর থেমে গেল এসএলআর এবং রাইফেলও।
আমাদের অভিজ্ঞতায় পাকিস্তানি আর্মির আক্রমণ প্রক্রিয়া এরকম ছিল না। ওরা থামল কেন? নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে। আমরা যখন এসব ভাবছি তখনই দেখা গেলÑ সার্চ লাইটের আলো ফেলে ফেলে ওরা নদী-নদীর পাড়-বালিরচর নজরধোনা করছে। তার মানে ওরা মনে করছে আমাদের শক্তি কম এবং এতক্ষণে হয় নিঃশেষ হয়ে গেছিÑ না হয় পালিয়ে গেছি।
শাহেদের কোন সাড়া-শব্দ নেই। আমার পাশেই ছিলÑ ওকে সংকেত দেব সে সুযোগও নেই। এ রকম অবস্থায় সংকেত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
এ সময় ক্যাপ্টেন পেছন থেকে সংকেত দিল ফিরে যাবারÑ ফিরে যাব নদীর অপরপাড়ে চরের ধানক্ষেতে। তখনই শাহেদ পানি থেকে মাথা জাগিয়ে উঠল। সার্চ লাইটের আলোতে ওকে দেখে ÑশাহেদÑ বলে চিৎকার দিতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম। ও এরকম করল কেনÑ বুঝে ওঠার আগেই শাহেদ পর পর তিনটা গ্রেনেড চার্জ করে বসল। নদীর পাড়ে পাক আর্মির বাংকারে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটলÑ নদীর পানি স্ফীত হয়ে আমাদের তলিয়ে দিল। খইয়ের মত ফুটতে লাগল বাংকারের গোলা-বারুদ। আগুন ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন গোটা এলাকাÑ নদীতে ছিটকে ছিটকে পড়তে লাগল গোলা-বারুদ-স্পিল্টারÑ পানিতে জ্বলতে থাকল আগুন। আমরা কেউ আর নিজের জায়গায় থাকতে পারলাম নাÑ একেকজন ছিঁটকে পড়তে লাগলাম একেকদিকেÑ পাঞ্জাবিদের বাংকার-ক্যাম্প থেকে আর্ত চিৎকার মিশে যাচ্ছে ভয়ংকর বিস্ফোরণে রাত্রি-কাঁপান শব্দের পরতে পরতেÑ
আধাঘন্টা পর শব্দ-আগুনের বীভৎসতা কিছুটা কমে এল। ওদিক থেকে আর কোন আক্রমণ বা গোলাগুলি না আসায় বুঝলামÑ কাজ শেষ করে ফেলেছে শাহেদ একাই। খরচ হয়েছে মাত্র তিনটা গ্রেনেড। শত্রুসেনা সবাই স্কুলঘর ছেড়ে বাংকারে ঢুকেছিল। আসলে কী ঢুকেছিল! যদি ঢোকে থাকে তাহলে সব খতম। শাহেদের তিনটা গ্রেনেড বাংকারকে দোজখ বানিয়ে দিয়েছেÑ এ সবই আমার অনুমান। পাকিস্তান-আর্মির কি হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ক্যাপ্টেনের কড়া সংকেতÑ কেউ নদীর পাড়ে উঠবে না।
আমিও শাহেদকে সংকেত দিলামÑ শাহেদের কোন সাড়া নেই।
ক্যাপ্টেনের সংকেত এলÑ আর কোন শব্দ নয়Ñ
সব চুপচাপÑ হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেদ করে একটা গোঙানির শব্দ কানে এলÑ
যতটা সম্ভব মনোযোগ দিলামÑ গুলি না স্পিল্টারÑ কি এবং কোথায় লেগেছে বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ বামদিক থেকে গড়িয়ে এসে আমার হাঁটুতে ঠেকে কেউÑ টেনে তুলে দেখি শাহেদ। এসএলআর বাঁ কাঁধে ঝুলিয়ে ওকে বুকে আঁকড়ে নিলামÑ নদীর এপারে থাকার ঝুঁকি না নিয়ে ওপারে পৌঁছে যেতে হবেÑ ওখানে ধানক্ষেত অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃতÑ শাহেদকে সরিয়ে নেয়া সম্ভবÑ আশেপাশে গ্রামে কোন ডাক্তার নিশ্চয়ই পাওয়া যাবেÑ
ওকে তুলে নেয়ার পর টের পেলামÑ আমার গলা ও বুকের পাশ বেয়ে পানি আর উষ্ণ রক্ত গড়িয়ে পড়ছেÑ গুলি বা স্পিল্টার যা-ই হোক তা যে বুকে লেগেছে এবং গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্তÑ এটা টের পাচ্ছি।
শাহেদ চাপা-অস্পষ্ট উচ্চারণে বলল, আরিফ আমার খাতাÑ খাতাটা ক্যাম্পের উত্তরকোণে ঝুলনা ব্যাগেÑ নায়লাকে পৌঁছে দিসÑ আমাকে ছেড়ে দেÑ ছেড়ে দে নদীতেÑ রক্তস্রোতেÑ ওরা শেষÑ আমার কাজ শেষÑ ডুমুর-তলি মু-ক্তÑ মু-ক্তÑ
বললাম, চুপ কর তুইÑ কথা বলিস নাÑ
নদীর ধীর প্রবাহের মত শাহেদের ক্লান্ত-অবসন্ন কণ্ঠ, এখানেই আমাকে কবর দিসÑ মুক্ত মাটিতেÑ আমার কথাÑ নায়লাকে...
বললাম, শাহেদ তুই চুপ করÑ আমাকে ধরে থাকÑ আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছিÑ তোর কিচ্ছু হয়নিÑ ঠিক হয়ে যাবিÑ মনে জোর রাখÑ
শাহেদ হাসল না গোঙাল বুঝতে পারলাম না। ও হয়ত বলতে চেয়েছে, নারেÑ নাÑ
এখন শুধু ওর গোঙানির অতি ধীর চিকন শব্দ শুনছিÑ ওর কণ্ঠস্বর শিশিরের মত ভেজা মিষ্টি মিষ্টিÑ সেই কণ্ঠে গোঙানি মানায় নাÑ
চাপা কণ্ঠে ডাকলাম, শাহেদÑ শাহেদÑ
পানিতে টুউপ্ টউপ্ টুউপ্ রক্তপতন ধ্বনি ছাড়া আর কোন শব্দ নেইÑ শাহেদের কোন শব্দ নেইÑ
আমি শাহেদকে কাঁধে নিয়ে নিঃশব্দে পানি ভেঙে তীরের কাছাকাছি পৌঁছে ক্যাপ্টেনকে বললাম, শাহেদ আহতÑ রক্তপাত হচ্ছেÑ অবস্থা খারাপÑ ওকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া দরকারÑ
ক্যাপ্টেন আলগোছে আমার কাছে সরে এল, শাহেদই তো গ্রেনেড চার্জ করলÑ
আমি বললাম, হ্যাঁ শাহেদইÑ
ক্যাপ্টেন ওর নাকের সামনে হাত নাড়ালÑ ঘাড়ের কাছে আঙুল রাখলÑ তারপর কব্জির রগ চেপে ধরে বলল, নেই!
ÑনেইÑ নেইÑ শব্দ নদীর পানি উথাল-পাতাল করলÑ করতে থাকল নিঃশব্দ বেদনায় আমরা ভেঙে পড়লাম পানির উপরÑ আমাদের হাহাকার পানির স্রোতের সাথে মিশে বইতে থাকলÑ
কাঁধে সহযোদ্ধা বন্ধু শাহেদÑ যার খুব ইচ্ছে ছিল একটা পুরো সাদা খাতা যুদ্ধের-দেশের কবিতা লিখে ভরে ফেলবেÑ শেষ কবিতাটি শুধু থাকবে আজকের পৃথিবীতে একমাত্র সুন্দরী মেয়ে নায়লার জন্য এবং তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভোঁ দৌড়ে ফিরে আসবে আমার কাছেÑ এসে বলবেÑ দোস্ত একটা কুকিস আর হাফ গেলাস চা খাওয়াÑ মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। প্রতিবার নায়লার কাছ থেকে ফিরে এ রকম কথাই বলত শাহেদ।
আমি বলতাম, কিরে নায়লার কাছে মগজ রেখে এসেছিস?
ও বলত, আরে না মগজ নাÑ তার চেয়েও বেশি আত্মাÑ আত্মারেÑ
আরও কত কথাÑ ওর কথার কোন শেষ ছিল না। কথা কত সুন্দরÑ কত আনন্দময় হতে পারেÑ কথার কতটা নিষিক্তকরণ শক্তি আছেÑ তা আজ এত বছর পর আপনাদের কী করে বুঝাই বলেন!
আমি কাঁধের উপর শাহেদকে দু’হাতে আরও জোরে আঁকড়ে ধরলাম। নিঃশব্দে বললামÑ না কিছুতে নাÑ ওকে আমি ছাড়ব নাÑ
খাতাটা কী আমি দিতে যাবÑ কী বলব আমি নায়লাকে? নিটোল মেয়ে নায়লা কি আমাকে বলবে নাÑ এটা তোমার খাতা নয়Ñ সে কোথায়Ñ তাকে তুমি কোথায় রেখে এসেছ? আমি তোমাকে বিশ্বাস করি নাÑ তাকে তুমি ভয় পেতেÑ তুমি ভয় পেতেÑ সে এলে আমি তোমার দিকে তাকাব নাÑ আমি তো তাকাবই না তোমার দিকেÑ তোমার দিকে তাকালে যে আমার তাকে মনে পড়ে যাবেÑ ভীষণভাবে মনে পড়ে যাবেÑ মনে পড়ে যাওয়াটা কত যে কষ্টকরÑ
কাঁধে ধরে রাখা শাহেদের লাশ আর আমার মধ্যে এখন কোন পার্থক্য নেই। নিষিন্দা ঝোঁপের তলায় পানি এবং পলি মাটির মিলনস্থলে আমি লাশের মত স্থির হয়ে থাকলাম। এক সময় মনে হল, শাহেদের মত আমিও ÑনাইÑ হয়ে গেছি। ভাবনাসুদ্ধ সব কিছুÑ গোটা মস্তিষ্ক অসার হয়ে এল।
অকস্মাৎ বৃষ্টি পতনধ্বনি আমাকে জাগিয়ে দিলÑ মৃত্যুর কাঠিন্য থেকে আমি জেগে ওঠলাম। কখন মুষল বৃষ্টি এলÑ কখন বৃষ্টির ধূসরতায় সব বেমালুম ঢেকে গেলÑ বুঝে ওঠার আগে আমি কাঁধে হাত দিলাম। শাহেদ শক্ত করে আমার কাঁধ-ঘাড় আঁকড়ে ধরে আছেÑ ওর হাঁটু আমার পেটের কাছেÑ এত শক্ত যে আমি একটুকুও নাড়াতে পারছি না। এক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছে না। মনে হলÑ শাহেদকেÑ তার তীব্র ইচ্ছার ভেতর শাণিত প্রতিজ্ঞাকে আমি ধারণ করে আছিÑ এ ছাড়া কোথাও আর কিছু নেইÑ সব হারিয়ে গেছে মুষল বৃষ্টির আড়ালে। ওই সময়ই আমাদের কেউ একজন সাহস করে ধোঁয়া আর বৃষ্টির ধূসরতায় ঢাকাপড়া বাংকারের সামনে গিয়ে দেখলÑ মুষল বৃষ্টিতে আগুন নিভতে শুরু করেছেÑ পাকান ধূয়ায় ঢেকে আছে চারদিকÑ তার মধ্যে বাংকার-স্কুলঘর-পেছনের মাঠ থেকে গোঙানির শব্দ এসে মিশছে ধুয়ার কুন্ডলিতেÑ
ধুম্র ও গোঙানি আচ্ছাদিত দশার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে গর্জনশীল বর্ষণধ্বনি ছাপিয়েÑ জয়বাংলা ধ্বনি ওই ছোট্ট নদী-ডুমুরতলি গ্রাম ছাড়িয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লÑ আমার কাঁধে শাহেদ কী একটু নড়েচড়ে ওঠল! নড়েচড়ে ওঠেনিÑ গত তিরিশ বছরেও আমি এরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারিনিÑ
ডিসেম্বরের একুশ তারিখ মুক্ত স্বদেশে কবিতার খাতাটা হাতে তুলে দেবার সঙ্গে সঙ্গে নায়লা তীব্র চিৎকারে ফেটে পড়ল, ও কোথায়?
নায়লার তীব্র-গভীর-কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি আমিÑ যে প্রশ্নের জবাব বুকের মাঝখান থেকে দলা দলা রক্ত খুবলে নিয়ে আসেÑ তার কোন জবাব আমি দিতে পারিনি। নায়লা জবাবের অপেক্ষা করলÑ কিন্তু আর কোন প্রশ্ন করল নাÑ শূন্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকল। আদিগন্ত বিস্তৃত কুয়াশামাখা সেই শূন্যতা সামনে নিয়ে আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনিÑ চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে আলগোছে পালিয়ে এসেছিলাম।
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পর আবার নায়লার মুখোমুখি হতে হল। সব শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকল নায়লা। অনেকক্ষণ পর উঠবÑ কি উঠব নাÑ ভাবছিলামÑ
নায়লা আচমকা অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠল, আরিফ ভাই তোমার শার্টটা খুলবে একটুÑ
আমি চমকে ওঠে জিঞ্জেস করলাম, কী বললে!
অচেনা দৃষ্টি মেলে নায়লা বলল, তোমার বুক থেকেই তো শাহেদের শেষ শ্বাস-প্রশ^াস থেমে গেছেÑ তোমার বুক তাকে চিরকালের মত ধারণ করে আছেÑ তোমার বুকটা আমি একটু দেখিÑ একটু আদর করিÑ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষা দিয়ে সংবাদপত্রে স্থায়ীভাবে যোগদানের কিছুদিন পর ময়মনসিংহ এলামÑ বৃষ্টিমুখর এক সন্ধ্যায় ওদের পূবের ঘরের বারান্দায় আচমকা নায়লা বলে বসলÑ আমি ওর স্পর্শটা পেতে চাইÑ আমি তোমাকে স্পর্শ করবÑ গভীরভাবে স্পর্শ করব তোমাকেÑ
এক রকম ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলামÑ নায়লা কি বলতে চাইছেÑ বুঝতে পারলাম না। জোছনার ঢলে তলিয়ে যাওয়া আরেক রাতে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে আমাদের বসার ঘরের সামনে কামিনী গাছটার তলায় নায়লা ঘন চাপা গলায় বলে বসল, তোমার বুক স্পর্শ করে থাকার অধিকার দাও আমায়Ñ
চমকে ওঠে বললাম, এ কী বলছ তুমি!
নায়লা বলল, হ্যাঁ, ঠিকই বলছিÑ তোমার বুকে শাহেদকে ধারণ করে আছ তুমিÑ তুমি যতদিন থাকবে ততদিন তোমার বুকে শাহেদ থাকবেÑ
নাÑ এরপর ওর বেঁচে থাকার-কালের মত ঈর্ষার বিন্দুমাত্রও আর কী করে শাহেদের প্রতি লালন করব আমি!
এতকাল পর এই যে সেই নদীটির পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছিÑ আমি কী শাহেদকে ধারণ করে আছিÑ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদকে কী এভাবে ধারণ করা যায়! নাÑ এরকম প্রশ্ন বছরচারেক পরই তীব্রতর হয়ে মনে জেগেছেÑ বারবার বলেছিÑ শাহেদ আমাদের জন্য তুমি অনিবার্য বন্ধুÑ তোমার আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্ন আর আত্মার আকুতিÑ রেখে যাওয়া সমুদয় বিষয় আমাদের জীবনযাপনের অন্তর্গত অভ্যাসে পরিণত হওয়াই উচিত ছিলÑ
আমার সাথে নায়লাও হেঁটে এসে দাঁড়িয়েছে ছোট নদীটির পাড়ে। নায়লা আজ সাদা শাড়ি পরেছেÑ ওকে ভাল মানিয়েছেÑ মনে হল সাদা শাড়িই ওকে ভাল মানায়Ñ ওর ঝোঁকও সাদা শাড়ির দিকে। আগেও কখনও কখনও পরেছে এবং মাঝেমধ্যেই পরতে চেয়েছেÑ আমি ওকে পরতে দিইনি। ওর সাদা শাড়ির দিকে তাকালেই আমার স্মৃতি জুড়ে উড়েছে শাহেদের ধবধবে সাদা কাফন। ডুমুরতলি গ্রামের আলিমুদ্দিন মাস্টার সাহেব হজ্বের কাপড় কিনে রেখেছিলেনÑ সেই কাপড় দিয়ে তিনি নিজে শাহেদের কাফন পরিয়েছিলেন।
নায়লা আমার কথা রেখেছেÑ সাদা শাড়ি পরার ব্যাপারে কখনও কোন জেদ করেনি। তবে সুযোগ পেলেই ও আমার বুক দেখেছে অনেকক্ষণ ধরে গভীর দৃষ্টিতেÑ তারপর আদর বুলিয়েছে সযত্নে দীঘল আঙুলের ডগা দিয়েÑ অধরোষ্ঠ দিয়েÑ
ওই সময়গুলোতে আমরা তিনজনÑ শাহেদ আমি নায়লা সেই কৈশোর-যৌবনের ক্রান্তিকালের মত সাহেব কোয়ার্টারে নরম সবুজে-ছাওয়া এলোমেলো পথ ধরে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে গিয়ে গায়ে গা লাগিয়ে বসে থেকেছি। পানির তিরতিরে স্রোতের টানে আমাদের ভেতর গোপন-মোহন কামনাগুলো লকলকিয়ে বেড়ে ওঠেছে। শাহেদকে মাঝখানে রেখেই নায়লা আর আমি তিরিশ বছর কাটিয়ে দিয়েছিÑ কোন সংশয়-কোন প্রশ্ন-কোন ঈর্ষার প্রসঙ্গই আসেনি। দু’জন নয়Ñ এক হয়ে আছি আমরা তিনজনÑ
আমি বা হাতে নায়লার কাঁধ স্পর্শ করলাম, এদিকেÑ এই যে এইটাÑ এইটাইÑ
এক সারি ডুমুর গাছের তলায় ঝোঁপঝাড়বেষ্টিত জায়গাটার সামনে ওকে নিয়ে এলামÑ এইখানেই নায়লার প্রেমÑ আমার বন্ধুত্ব আর এই দেশটাকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসার মহিমা নিয়ে শুয়ে আছেন এক তরুণÑ শুয়ে থাকবেন যতদিন এই দেশÑ এই জাতি থাকবে।
আমিই নিস্তব্ধতা ভাঙলাম, এইখানেই আমরা ওকে শুইয়ে রেখে যাইÑ ডুমুরজোয়ার নদীর পাড়ে স্কুলের পাশে এই জায়গাটাই ছিল সবচেয়ে উঁচুÑ এরকম উঁচু ছাড়া ওর স্থায়ী জায়গা কী মানায় বলÑ
বড় ডুমুর গাছটার তলায় বাঁশের বেড়ার ভেতর সবুজ ঘাসে-ছাওয়া কবরের দিকে তাকিয়ে নায়লা মৃদু ভেজা গভীর স্বরে বলল, একটু চুপ করÑ
আমি চুপ করে গেলামÑ সেই নৈঃশব্দের মধ্যে নায়লা তিরিশ বছর আগের জানবাজি মুক্তিযোদ্ধা শাহেদকে অনুভব করছেÑ শাহেদের সঙ্গে ওর কত অনুচ্চারিত কথাÑ মনে পড়ছে সেইসব। ওর বুকের ভেতর চেপে রাখা কান্নার চোখ ফেটে এখন শাহেদের কবিতার পঙ্ক্তিগুলো বাইরে বেরিয়ে আসছেÑ যে সবে রয়েছেÑ নায়লার কথা-দেশের কথা-ঝকঝকে তকতকে স্নিগ্ধ স্বাস্থপ্রদ ভোর ছিনিয়ে আনার আকুলতাÑ সেইসব লাল-সবুজ গীতল কথারা এখন নায়লার বুকের ভেতর সারি সারি দাঁড়িয়ে যাচ্ছেÑ
শাহেদ বলত, আমি কবিতার জন্য লড়াই করছিÑ এই শ্যামল প্রকৃতির দেশটির জন্য লড়াই করছিÑ লড়াই করছি আমার নায়লার মত কবি ওমর আলীরÑ ‘শ্যামল রঙ রমণীর...’ জন্যÑ
আমার কাঁধে কারও স্পর্শে ফিরে তাকালামÑ স্মিত হাসিতে উজ্জ্বল নবতিপর এক বৃদ্ধÑ কোথায় দেখেছিÑ কোথায় দেখেছি ভাবতে ভাবতে আচমকা বুকের গহীন থেকে বেরিয়ে এল বৃষ্টির ছাটে টলমল লন্ঠনের ঘোলা আলোয় প্রৌঢ় আলিমুদ্দিন মাস্টার সাহেবের উজ্জ্বল চোখজোড়াসমেত সেই ভরাট মুখÑ
আমি সঙ্গে সঙ্গে নিচু হয়ে সালাম করতে গেলামÑ তিনি আমার দু’হাত ধরে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার স্থান এই বুকেÑ
বললাম, স্যার সে রাতে আপনি যা করেছিলেনÑ যে সাহসে উদ্দীপ্ত করেছিলেন তা এখনও আমি বুকের ভেতর লালন করছিÑ
তিনি বললেন, শহীদের এই কবর কোন সমাধিসৌধ নয় বাংলার মাটিতে বাংলার সাহসী সন্তানের কবরÑ আসুন দোয়া করিÑ আসুন মা আপনিও দোয়ায় সামিল হোনÑ
নায়লা সচকিত হয়ে স্যারকে সালাম দিল। দোয়ার পর তিনি আমাদের নিয়ে এলেন স্কুলেÑ স্কুলের গেটে মাধবীলতার উজ্জ্বল-মিষ্টি ফুলে ছাওয়া সাইনবোর্ডÑ সবুজ জমিনে লাল রঙে লেখাÑ ‘শহীদ শাহেদ উচ্চবিদ্যালয়’। সাইনবোর্ডের সামনে আমরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম!
বৃদ্ধ আলিমুদ্দিন স্যার বললেন, একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার জন্য ডুমরতলির দরিদ্র মানুষ আর কিছু করতে পারেনি বাবাÑ
নায়লা স্কুলের গেটেই স্যারের পা ছুঁয়ে কদমবুচি করে কেঁদে ফেলল, স্যার আপনার কাছে আমাদেরÑ এই জাতির কৃতজ্ঞতার শেষ নেইÑ আপনার মত অভিভাবকÑ মহান মানবÑ
আলিমুদ্দিন স্যার বললেন, না মাÑ এই গ্রামের মানুষরাই সব করেছেÑ আমি শুধু তাদের বলেছিÑ বুঝিয়েছি। আমরা কারও কাছে যাইনিÑ কোথাও গিয়ে হাতও পাতিনিÑ ফসলের মওসুমে বাড়ি বাড়ি ধান তুলেছি-মহিলাদের মুষ্ঠির চাল তুলেছি আর ছোট ব্যবসায়ী-দিনমজুররাও প্রতি সপ্তাহে আটআনা-একটাকা করে দিয়েছেনÑ এভাবেই একুশ বছর আগে শহীদ শাহেদ উচ্চবিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছেÑ এই দায়িত্বটা পালন করতে পেরে খুব তৃপ্তি পেয়েছি মাÑ
ফেরার পথে নায়লা বলল, আমরা শাহেদকে বুকের ভেতর যত্নে রেখেছিÑ এর কোন মূল্য নেই তা বলছি নাÑ তবে বৃদ্ধ আলিমুদ্দিন স্যার যা করেছেন তা স্থায়ী কাজ এবং মর্যাদাবান জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণÑ
বললাম, আমরা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যতটা ভেবেছিÑ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিরক্ষাÑ তাদের আত্মত্যাগকে নজির হিসেবে উপস্থাপনÑ এসব জরুরি বিষয় সে তুলনায় খুব কমই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পেরেছিÑ এই দীনতা জাতিকে পিছিয়ে দেবে!
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাঙামাটির সাজেকে দিনভর গোলাগুলি: ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জেলা প্রশাসনের
'বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য' জবিতে ১২ ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ
শেরপুরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেপ্তার-৭
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী