ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

রমজানের ঐ রোজার শেষে

Daily Inqilab রূহুল আমীন খান

০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম

‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।’ ঈদ যেমন আনন্দ উৎসবের দিন, তেমনি আত্মসমীক্ষারও দিন। আত্মসমীক্ষার বিষয় হলো, যে সকল গুণ অর্জন ও যে সকল দোষ বর্জনের জন্য এ সংযম সাধনা, তা কতটা অর্জন ও বর্জন করতে সক্ষম হলাম। প্রিয়নবী (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন: ‘বহু রোজাদার এমন আছে যাদের রোজা পানাহার বর্জন তথা উপবাস বৈ কিছুই নয়। আর বহু নৈশ নামাজী এমন আছে, যাদের নামাজ রাত জাগরণ বৈ কিছুই নয়’। মূল লক্ষ্য অনুধাবন, অনুধ্যান না করে কেবলমাত্র নিস্প্রাণ আনুষ্ঠানিকতার দ্বারা কোনো ফায়দা নেই। এরূপ ইবাদত দ্বারা বরং সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহই হয় বেশি। এজন্যই ইসলামে নিয়্যতের ওপর এতো বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

মুসলিম জাতির এই পবিত্র উৎসবটির সূচনা হয় নবী (সা.) এর মদীনা মুনাওয়ারায় হিজরতের পরে। নবীজী সা. যখন হিজরত করে মদীনা গেলেন তখন দেখতে পেলেন, সেখানকার লোকেরা বছরের দুটি নির্দিষ্ট দিনে খেল-তামাশা ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে, এদিন দু’টিতে তারা পূর্ব থেকেই খেল তামাশা ও আনন্দ উৎসব করে আসছে। নবীজী (সা.) তখন বললেন: আল্লাহ তোমাদেরকে এ দু’টি দিনের পরিবর্তে অন্য দু’টি দিনকে উৎসবের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তার একটি হচ্ছে ‘ঈদুল ফিতর’ অন্যটি ‘ঈদুল আজহা’। কেবলমাত্র খেল-তামাশা, উৎসব-আনন্দ লক্ষ্য হলে তখনকার প্রচলিত প্রথার দিন দুটিই যথেষ্ট ছিল। তা পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ইসলামের আচার-অনুষ্ঠান, ইবাদত-বন্দেগী সব কিছুই স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর। সব কিছুই আল্লাহতে নিবেদিত। সব কিছুর চূড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহর রিজামন্দি বা সন্তুষ্টি। তাই লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অন্যান্য জাতির উৎসব-আনন্দ আর মুসলিম জাতির উৎসব-আনন্দের রূপ-প্রকৃতি এক নয়। উভয়ের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক, সুস্পষ্ট পার্থক্য।

ঈদুল ফিতরের উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় শাওয়ালের চাঁদ উদয় হয়ে যাওয়ার পর থেকে। যে পাঁচটি রাতের ইবাদত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশেষভাবে মকবুল, তার একটি রাত হচ্ছে ঈদের দিনের পূর্বেকার শাওয়ালের প্রথম রাত। মুমিনবান্দাগণ, এ রাতটি কাটিয়ে দেয় আল্লাহপাকের দরবারে শোকরিয়া আদায়, ইবাদত বন্দেগী ও দোয়া-মুনাজাতের মধ্যদিয়ে। সূর্যোদয়ের পরে সামর্থ্যবানরা আদায় করে সাদকাতুল ফিতর, যাতে অভাব ক্লিষ্ট, গরীব মিসকিনরাও পানাহারে পরিতৃপ্ত হয়ে উপভোগ করতে পারে পূর্ণাঙ্গ ঈদের আনন্দ। হাদীস শরীফে এসেছে: রোজাকে বেহুদা, অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং গরীব-মিসকীনদের আহার্যের ব্যবস্থা করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) সামর্থ্যবান লোকদের জন্য সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পূর্বে তা আদায় করে দেবে আল্লাহপাক তাকে একটি মঞ্জুরকৃত (মকবুল) সাদাকার সমান সওয়াব দান করবেন। আর যে তা নামাজের পরে আদায় করবে সে একটি সাধারণ সাদাকার সমান সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতাগণ রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকেন, হে মুসলিমগণ! নেক আমলের তাওফীকদাতা ও তাতে সওয়াব বাড়িয়ে দেনেওয়ালা মহান আল্লাহর পানে তোমরা শীঘ্র এগিয়ে চল। তোমাদেরকে রাতে ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিবাভাগে রোজা রাখার হুকুম দেয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ এবং তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে আহার করিয়েছ অর্থাৎ গরীব-দুঃখীকে আহার্য দান করেছ, আজ তার প্রতিদান গ্রহণ কর। এরপর যখন তারা ঈদের নামাজ আদায় করে নেয় তখন আবার ফেরেশতা উচ্চস্বরে ঘোষণা করতে থাকেন, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা পবিত্র দেহ-মন নিয়ে ঘরে ফিরে যাও। এ দিন হল পুরস্কার বিতরণের দিন। আসমান-জগতে এ দিনের নাম পুরস্কারের দিন।’ (তিবরানি)।

ইসলামের প্রতিটি অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়েই মহান স্রষ্টার প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য এবং সাম্য-মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের মহান রূপটি ভাস্বর হয়ে ওঠে। সে কী পয অপরূপ দৃশ্য! প্রভাতে আল্লাহর নেকবান্দারা গৃহ ত্যাগ করে মৃদুস্বরে তাকবীর উচ্চারণ করে করে এগিয়ে চলছে ঈদগাহের দিকে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে ফেরেশ্তারা দাঁড়িয়ে জানাচ্ছেন তাদের স্বাগত। ঘোষণা করে যাচ্ছেন, তাদের ইবাদত-বন্দেগী কবুলের খোশখবর। শুনিয়ে যাচ্ছেন পরম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক তাদের পুরস্কার প্রদানের সুসংবাদ। এভাবে নামাজীরা পৌঁছে যায় ঈদের ময়দানে। ঊর্ধ্বে নীল আকাশের শামিয়ানা। নিম্নে অবারিত ময়দান। ধনী-গরীব, আমীর-ফকীর, শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে আদায় করছে সালাত। সালাতের পরে মিলাচ্ছে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ, বুকে বুক। সব মানুষ যে এক আদমের সন্তান, পরস্পরে ভাই ভাই- এমন দৃশ্য, তার এমন বাস্তব উদাহরণ দুনিয়ার বুকে আর কোথায় আছে!


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা