সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতা কেন জরুরি
২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
সবদলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপ, সমঝোতা ও ঐকমত্যে পৌঁছার কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও তা প্রধান দুই দলের শর্তের মধ্যে আটকে রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে অনড় অবস্থান নিয়েছে। বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সংলাপ হওয়া এখন দূর অস্ত। এর ফলে নির্বাচনের আগে যে, রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হতে পারে, ইতোমধ্যে সে ব্যাপারে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়ও সংলাপ ও সমঝোতার কথা বলা হয়েছিল। তা সফল হয়নি। নির্বাচন দুটি ক্ষমতাসীন দল তার ইচ্ছামতো করেছে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া নিয়ে বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এই ইস্যুতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা কার্যকর করা শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে ও পরে আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া নিয়ে দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিলেও দেশগুলো আশ্বস্ত হতে পারছে না। তারা আক্ষরিক অর্থে নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কিনা, তা দেখতে চাচ্ছে। সুষ্ঠু ও স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলছে। ’১৪ ও ’১৮ সালের মতো নির্বাচন তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। ফলে সরকার এ নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপিও যে স্বস্তিতে আছে, তা নয়। সেও চাপে আছে। এই দুই দলের চাপ প্রায় একই রকম। অস্তিত্বের প্রশ্ন এখানে জড়িত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাহারা হলে প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার আশংকা করছে কিংবা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, বিএনপি তার চেয়েও বেশি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আওয়ামী লীগেরও যেমন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, বিএনপিরও তাই। আওয়ামী লীগের নির্বাচন করা ছাড়া গতি নেই, বিএনপিরও নির্বাচন ঠেকানো ছাড়া উপায় নেই। দুই দলের এই অস্তিত সংকট কিংবা দমন-পীড়নের শিকার হওয়ার বিষয়টি আগামী নির্বাচন কিভাবে ও কেমন হয়, তার ওপর নির্ভর করছে। অন্যদিকে, সব উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ যদি আগের মতো যেনতেনভাবে নির্বাচন করে ফেলে, তবে সে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এবার সহজ হবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এমন এক জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, একটি মাত্র উপায় হচ্ছে, দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হওয়া। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে পাঁচটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, কার্যত তা সরকারের পক্ষে যায়নি। দলটির পর্যবেক্ষণে অর্থবহ সংলাপের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ থেকে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে বাহাস চলছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপ হলে তা হতে হবে শর্তহীন। অর্থাৎ বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি বাদ দিতে হবে। বিএনপি তার দাবিতে অটল থেকে বলেছে, এ নিয়েই সংলাপ হতে হবে। এ থেকে বোঝা যায়, সংলাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সংলাপের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সেই নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকেই নির্বাচনী জটিলতা নিয়ে সংলাপের বিষয়টি উঠে আসছে। এবারও সে প্রসঙ্গ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদেশ ও জাতিসংঘ অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বারবার তাকিদ দিচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র বারবার তার অবস্থান জানান দিচ্ছে। দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিরা ঘন ঘন সংবাদ সম্মেলন করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্র চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষে নয়। যুক্তরাষ্ট্র চায়, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। এজন্য গণতন্ত্র ও জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে, এমন একটি নির্বাচন আয়োজনের কাঠামো খুঁজে বের করতে কার্যকর সংলাপ অনুষ্ঠানের তাকিদ দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যে অবস্থান, তাতে সংলাপ ও সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচন একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
দুই.
উন্নয়নকামী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও দাতাগোষ্ঠীর মাথা ঘামানো নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে, কিভাবে চলবে, এ নিয়ে তাদের মাথাব্যাথার শেষ নেই। প্রশ্ন আসতে পারে, তাদের এত মাথাব্যাথার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তর দুইভাবে হতে পারে। এক. আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার অনৈক্য তাদেরকে মাথাঘামানোর সুযোগ করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারা এবং তা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলে এ সুযোগ সৃষ্টি হতো না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে, গণতন্ত্রকে সংকুচিত করে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়। স্বাধীনতার পর থেকেই এ প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। বাকশাল ছিল, তেমন একটি প্রক্রিয়া। তারপর সামরিক শাসনসহ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রকে কমবেশি সংকুচিত করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার প্রয়াস চালিয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, গণতন্ত্র আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে রাজনীতি এ সমস্যার মধ্য দিয়েই আবর্তিত হচ্ছে। ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা তাদের মতো করে কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়, সে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা তার বিরোধিতা করে আন্দোলন করে। তাদের এ বিরোধিতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে। বর্তমানে বিরোধীদল যে দাবিতে আন্দোলন করছে, তার যৌক্তিকতা বেশ জোরালো। একই দাবিতে আওয়ামী লীগও ’৯৬ সালে আন্দোলন করেছিল। তখন বিএনপি সংবিধানের মধ্যে থেকে নির্বাচন করতে চাইলেও বিরোধীদলগুলো মানেনি। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তাদের সে আন্দোলন তখন যৌক্তিকতা পেয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, দেশের মানুষের মধ্যে এই মত প্রতিষ্ঠিত, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। গত দুইটি নির্বাচন থেকে তাদের এ মত আরও দৃঢ় হয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের মাথা ঘামানোর বিষয়টি যৌক্তিকতা পাচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলো সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে ক্ষমতায় থাকা এবং আরোহন করার জন্য সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করতে একমত হতে পারেনি। পারস্পরিক সমঝোতা, সহাবস্থান ও ঐকমত্যের ব্যাপারে তারা খুবই অনমনীয় মনোভাব পোষণ করে। একে অপরকে দোষারোপ করে। সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে এবং আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও দাতাগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ, এমনকি হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়। দুই. পুরো বিশ্ব একটি গ্রামে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। প্রভাবশালী দেশসহ সব দেশের সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। ফলে প্রভাবশালী দেশ ও দাতাগোষ্ঠীর উপযাচক হয়ে আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হাজির হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশ্বের যে দেশেরই অসীম সম্ভাবনা এবং তাদের স্বার্থ রয়েছে, সেখানেই তারা নাক গলিয়েছে এবং গলাচ্ছে। সরল দৃষ্টিতে দেখলে, পরিবারের কোনো সদস্যর সমস্যা হলে, তা দেখার দায়িত্ব অন্যান্য সদস্যের উপর বর্তায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভাবনার বাংলাদেশের সমস্যায় তাদের উদ্বিগ্ন হওয় অস্বাভাবিক নয়। এ বাস্তবতা উপেক্ষার সুযোগ নেই। বক্র দৃষ্টিতে দেখলে বিষয়টি অনেকটা সতীনের ছেলেকে সবসময় কোলে রাখার মতো, যাতে সে হাঁটা শিখতে না পারে। পরনির্ভরশীল হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে এমনটি হচ্ছে না, তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রভাবশালী দেশগুলোর এখানে অনেক স্বার্থ রয়েছে। তাদের স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য বাংলাদেশকে তাদের খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার ভৌগলিক অবস্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ। ভৌগলিক অবস্থান ও সম্পদ-এই দুইটি এড়িয়ে যাওয়া প্রভাবশালী দেশগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মারার জন্য বাংলাদেশ তাদের কাছে অপরিহার্য। বাস্তবতা হচ্ছে, এসব দেশ বাংলাদেশের দুঃখে যতটা না দুঃখিত হয়, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয় নিজেদের স্বার্থহানি ঘটার আশঙ্কায়। ফলে বাংলাদেশকে তারা কেমন দেখতে চায়, কেমন হলে ভালো হবে, তা নিয়ে মাথাঘামায়। এজন্য রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতায় যারা থাকে, তারাই বেশি দায়ী।
তিন.
বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও দাতাগোষ্ঠী বরাবরই বলে আসছে, এখনও বলছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিও মজিনা বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া এত ভালো যে, এখানে বছরে তিনবার ফসল ফলানো যায়। এখানে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনিজপদার্থ মজুদ রয়েছে। আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখেছি। অন্তর থেকে বলছি, বাংলাদেশই সবচেয়ে ভালো। এখানের মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো, কর্মঠ, পরিশ্রমী ও উদ্দীপ্ত। বাংলাদেশ অনন্ত সম্ভাবনার দেশ। আমি দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ বিশ্বের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে স্থান করে নেয়ার পাশাপাশি ওষুধ, চিংড়ি, জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের বৃহৎ রফতানিকারক দেশে পরিণত হচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’ মজিনা এ কথাও বলেছিলেন, এশিয়ার পরবর্তী অর্থনৈতিক উদীয়মান টাইগার হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার একজন বিশিষ্ট নাগরিক (হেনরি কিসিঞ্জার) বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, এরই মধ্যে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিদেশীরা যেখানে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, সেখানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এ সম্ভাবনার চেয়ে ‘ক্ষমতা’কে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। উন্নয়নকে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতিতে পরিণত করেছে। উন্নয়ন দেখিয়ে রাজনীতি করছে। বিগত একদশকে ক্ষমতাসীনদের আচরণে তা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। উন্নয়নের রাজনীতি যতটা না হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য উন্নয়নকে ব্যবহার করা। ফলে অসীম সম্ভাবনার বাংলাদেশের যে গতিতে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সে গতিতে এগুতে পারছে না। টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে উঠছে না। স্থাপত্যগত ও মনুমেন্টাল উন্নয়নই প্রাধান্য পেয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে ক্ষমতা ও গোষ্ঠীগত উন্নয়নে বেশি মনোযোগী হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়নে মনোযোগী হলে তাতে যেমন ভারসাম্য থাকত, তেমনি সবার উন্নতির সাথে ঐ গোষ্ঠীরও উন্নতি হতো। অর্থাৎ সামষ্টিক অর্থনীতি দৃঢ় ভিত্তি লাভ ও টেকসই হতো এবং এর সুফলে দেশও এগিয়ে যেত। বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট, তা এত তীব্র হতো না। কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র হতো না। অথচ এই দরিদ্রদের মাঝেই কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। ২০০৮ সালে ব্যক্তি পর্যায়ে কোটিপতির সংখ্যা যেখানে ছিল ১১ হাজার ২৪৪ জন এখন তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের হাতেই দেশের বেশিরভাগ সম্পদ। এদের অনেকে আবার তাদের অর্থ দেশে রাখছে না, বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এমন ভারসাম্যহীন উন্নয়নের ফলে দেশে এখন নানা অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। এক সুষ্ঠু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকার পরিচিতি পাচ্ছে ‘নিপীড়ক’ হিসেবে। গণতন্ত্রের সংকোচন ও অনুপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। সরকারের ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়ন’ নীতি সমর্থন পাচ্ছে না। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার মধ্যে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো দেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন দৃঢ় হওয়া দেখছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না, এটা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন দল তাতে অনড় অবস্থান নিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, আগামী নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও ব্যাপক সংঘাতের আশঙ্কা জনমনে বিরাজ করছে।
চার.
বিরোধীদলের তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি যে ক্ষমতাসীন দল মেনে নেবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপিকে দমন-পীড়ন করে হলেও সে নির্বাচন করবে, সরকারের এ মনোভাব প্রকাশিত হচ্ছে। এ নিয়ে যে, সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সংঘাত ও সহিংসতা হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। নির্বাচনকেন্দ্রিক এই সংঘাত দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে যে আরও গভীর করে তুলবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এ অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার বিকল্প দেখছেন না। তারা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো সমঝোতা, সংলাপের পথ খোলা আছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্রের সংজ্ঞাই হচ্ছে সংলাপ, সমঝোতা ও আলোচনা। এর কোনো বিকল্প নেই। সাউথ আফ্রিকাতে সাদা-কালোর মধ্যে যে বিরোধ রয়েছে, আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এত বিরোধ নেই। কালো-সাদার যে বিভেদ, যেটা কোনো দিন মোচন করা সম্ভব না বলে মনে করা হতো। সেখানে নেলসন ম্যান্ডেলা সমঝোতা ও আলোচনা করে সমাধান করেছেন। কাজেই রক্তপাত কোনো সমাধান হতে পারে না। সবাইকে আলোচনার টেবিলে এগিয়ে আসতে হবে। সংলাপ ব্যর্থ হলে আবারো সংলাপ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে, সংলাপ না হলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে মানুষ মারা যাবে। সংঘাতে কলকারখানা বন্ধ হবে। রিজার্ভের পতন ঘটতে থাকবে। রেমিট্যান্স আরও কমে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে। সার্বিকভাবে রাষ্ট্র ও জাতি ক্ষতির মুখে পড়বে, যা কাম্য হতে পারে না। প্রধান রাজনৈতিক দল দুইটিকেও উপলব্ধি করতে হবে, মতাদর্শ যাই হোক না কেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তাদের একটি কমন অবস্থানে থাকতে হবে। একে অপরকে উড়িয়ে দেয়া, অস্বীকার বা নির্মূল করার চিন্তা বাদ দিতে হবে। কিভাবে পারস্পরিক সমঝোতা ও সহাবস্থান এবং জনগণের রায়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর, সর্বোপরি বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেয়া যায়, এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যই যদি হয় দেশ ও জনগণের কল্যাণ, উন্নয়ন ও অগ্রগতি, তবে তাদের মধ্যে ঐক্য, সমঝোতা এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তার পক্ষে ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্যদলকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইন্টারপোল সম্মেলন শেষে দেশে ফিরলেন আইজিপি
ইসরাইলি নাগরিকরা হামাসের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ করেছে
প্লে অফের প্রথম রাউন্ডেই মেসির মায়ামির বিদায়
গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় আর থাকছে না কাতার
বুধবার হোয়াইট হাউসে মিলিত হবেন বাইডেন-ট্রাম্প
শিশু মুনতাহার কি অপরাধ?
ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারলে নোবেল পাওয়া উচিৎ : মাত্তেও সালভিন
গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত, নিহত আরও ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত
আজ থেকে রাজধানীর ১৩ স্থানে সুলভমূল্যে মিলবে ডিম
আজ শহীদ নূর হোসেন দিবস
অসুস্থ পলক ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি
যশোর আর্মি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দম্পতিকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়, আটক ১
কাউন্সিলর কাশেম মোল্লা ৯ বছরে শতকোটি টাকার মালিক
শেখ হাসিনার কথিত অডিও ক্লিপের নির্দেশনা বাস্তবায়নকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর আ. লীগ কার্যালয় থেকে আটক ১
রাজধানীর জিরো পয়েন্টে ছাত্রদলের মিছিল
যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীসহ দু’জন নিহত
মধ্যরাতে হানিফ ফ্লাইওভারে চলন্ত ট্রাকে আগুন
যশোর জেনারেল হাসপাতালে টেন্ডার নিয়ে তত্বাবধায়ক লাঞ্ছিত, ২ নেতা বহিষ্কার
সল্টের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল উইন্ডিজ