অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
দীর্ঘদিন ধরেই নানা সংকটে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। প্রতিটি সূচক নি¤œগামী। যতই দিন যাচ্ছে অবনতি ঘটছে। চারপাশ থেকে সংকুচিত হয়ে আসছে। সাধারণ মানুষের হাতে যেমন টাকা নেই, তেমনি সরকারও টাকার সংকটে ভুগছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ধার করে চলছে। এতে ব্যাংকগুলোও তারল্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। এতে মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের ঊর্ধ্বগতিকে আরও বেগবান করছে। সাধারণ মানুষ ভয়াবহ বিপাকে পড়েছে। বাজারে গিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এমনও সংবাদ দেখা গেছে, মানুষ বাজারে গিয়ে প্রয়োজনের অর্ধেকও কিনতে পারছে না। তাদের জীবনযাপনকে শোচনীয় বললেও কম বলা হবে। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ছে। যে শিল্পকারখানা প্রতিদিন ৪০-৫০ টন পণ্য উৎপাদন করত, তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারার পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুত সংকট উৎপাদন ব্যবস্থাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এসব সংকটের মধ্যেই বৈরি আবহাওয়া কৃষি খাতে আঘাত করেছে। এবার বিগত বছরগুলোর মধ্যে শীত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব কৃষি উৎপাদনে পড়েছে। দেশের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়ায় তাদের জীবনযাপন ও কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যঘাত ঘটলে তা উৎপাদন ব্যবস্থা ও কর্মজীবন ব্যাহত করে, যার প্রভাবে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ে।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির মন্দাবস্থার কথা সরকারের তরফ থেকে সরাসরি স্বীকার করা না হলেও, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রফতানি সংকুচিত হওয়া, উৎপাদন ব্যবস্থায় স্থবিরতা, জ্বালানি সংকট, ঋণাত্মক রেমিট্যান্স প্রবাহ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। অর্থমন্ত্রী যখন বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সময় লাগবে, তখন বোঝা যায় কতটা খারাপ অবস্থা চলছে। দেশ আমদানিনির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে, উৎপাদন ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটায় রফতানি কমে যাওয়ায় কাক্সিক্ষত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে না। সব ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে গ্যাস ও বিদ্যুত অপরিহার্য। দেশে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপাদিত হয়, তা চাহিদা পূরণ করতে না পারায় আমদানি করতে হয়। ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় গ্যাস আমদানি করতে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদামতো গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কলকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ করতে না পারায় লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মকর্তাদের বেতন ঠিকমতো দিতে না পারায় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক ছাঁটাই প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। এতে বেকারত্বের হার হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেকে দিনের পরিবর্তে ঘন্টা হিসেবে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি কতটা শোচনীয় হলে এ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়, তা সহজেই অনুমেয়। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী আর্থিক সংকটে পড়ে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বলতে কিছু থাকবে না। এতে সমাজে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা কম। তারপরও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। শীত কমে যাওয়ার সাথে সাথে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা যখন বাড়তে থাকবে, তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে, তা কল্পনাও করা যায় না। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা রয়েছে। খাদ্য আমদানি করে যে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে, ডলার সংকটের কারণে সে সম্ভাবনাও কম।
দেশের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিটি খাতই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি। কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় অর্থের সংস্থান হবে, তার সন্ধান করতে হবে। সরকারকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এ খাতে যত ধরনের সমস্যা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে, তা দূর করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে দ্রততায়িত করতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে যেসব বাধা রয়েছে, তা দূর করতে হবে। টাকার সংকট কাটাতে অর্থনীতিবিদরা বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কাজ দুই বছর পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। কোন কোন আর্থিকখাতে সংস্কার ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন তা দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারের উচিৎ এসব বিষয় আমলে নেয়া। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, দেশের অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে একটা ব্যাপকভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যত দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা হবে, ততই মঙ্গল হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই