শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক
২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭ এএম
দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এক বা একাধিক শিক্ষার্থী আত্মঘাতী হচ্ছে। আঁচল ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে গত বছর ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী, ৪০ শতাংশ পুরুষ। ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা : পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে, আত্মহত্যাকারীদের ৬৭ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর। স্কুল পর্যায়ের ২২৭ জন শিক্ষার্থী গত বছর আত্মহত্যা করছে, যা আত্মহননকারী মোট শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী ১৪০ জন (২৭ শতাংশ), বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯ শতাংশ) এবং মাদরাসা শিক্ষার্থী ৪৮ জন (৯ শতাংশ)। ২০২২ সালে, আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার মোট ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল। সংবাদ সম্মেলন আত্মহত্যার কারণ হিসাবে অভিমান, প্রেম, পড়াশুনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মানসিক সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিমান ও প্রেমের সম্পর্কের মতো আবেগের কারণে আত্মহত্যার হার বেশি। এই হার ৪৭ শতাংশ। অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে ৩২ শতাংশের বেশি এবং প্রেমঘটিত কারণে প্রায় ১৫ শতাংশ। এছাড়া মানসিক কারণে প্রায় ১০ শতাংশ, পারিবারিক কলহের কারণে ৬ শতাংশ, পড়াশুনার চাপের কারণে প্রায় ৫ শতাংশ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে প্রায় ৪ শতাংশ, কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে প্রায় ২ শতাংশ, যৌন হয়রানির শিকার হয়ে প্রায় ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার এই সংখ্যা, প্রবণতা ও কারণ ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। যে পর্যায়ের শিক্ষার্থীই হোক, তারা জাতির ভবিষ্যৎ। তারাই যদি এত বিপুল সংখ্যায় প্রতিবছর আত্মহত্যা করতে থাকে, তবে জাতির অবস্থা আগামীতে কী দাঁড়াতে পারে, সহজেই তা অনুমান করা যায়। আত্মহত্যার পেছনে আবেগীয় কারণ, মানসিক কারণ, ব্যর্থতা, হতাশা ইত্যাদি যা কিছুই থাক, তার জন্য প্রধানত আত্মনিয়ন্ত্রণের অক্ষমতাই দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা, সামাজিক বন্ধন, ও মানসিক শক্তিবৃদ্ধি পেলে আত্মহত্যার হার ও সংখ্যা কমে আসতে পারে।
আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি কোনো দেশের জন্যই ভালো নয়, শুভ নয়। এর মধ্যে নীতি-নৈতিকতা, পারিবারিক-সামাজিক শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব বা ঘাটতির দিকটিই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। এজন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচালকরা দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। নীতি-আদর্শ ও ধর্মচর্চা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কমে গেছে। মূল্যবোধের প্রতি আস্থা হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়াদি বিদায় করে দেয়া হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী, এমন কি একজন বয়স্ক মানুষও আত্মরক্ষার জন্য শক্তি, সাহস, অনুপ্রেরণা ও নির্ভরতা লাভ করে এসবের মাধ্যমে। বাস্তবতা এই, এখন তারা বস্তুত নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শোষণ, বঞ্চনা মানুষকে অস্থির, অসহিষ্ণু, বিব্রত ও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এসবের প্রতিক্রিয়া নানাভাবে, নানাক্ষেত্রে পড়ছে। আত্মহত্যাও এমনই একটি প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, দেশের বিভিন্ন বয়সী মানুষ অবলীলায় আত্মহত্যা করছে। এক পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছরে দেশে অন্তত ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও যুবকরা কেন আত্মহত্যা করে, ইতোপূর্বে এ প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠেছে। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বৈষম্য, অবিচার এর প্রধান কারণ। অভাব-দারিদ্র্যে অতিষ্ট হয়ে যেসব যুবক, যাদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতও আছে, অবৈধ পথে ইউরোপ-আমেরিকায় উপযুক্ত কর্মপ্রাপ্তির আশায় উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সলিল সমাধি লাভ করছে, তারা কি এক অর্থে আত্মহত্যা করছে না?
আঁচল ফাউন্ডেশনকে সাধুবাদ দিতে হয় এ কারণে যে, এই সংস্থাটি প্রতিবছরে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন জাতির সামনে উপস্থাপন করে। আত্মহত্যাকারীদের সংখ্যা আত্মহত্যার কারণ এবং প্রতিকারের সম্ভাব্য উপায় ইত্যাদি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরে। তার এই প্রয়াস-প্রচেষ্টা জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তা বলাই বাহুল্য। প্রশ্ন হলো, সরকার বিষয়টি দেখছে না কেন? আত্মহত্যার প্রবণতা ও ঘটনা কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? সরকার উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পেটাতেই অধিক ব্যস্ত। এই উন্নয়ন যাদের জন্য তাদের হাল-অবস্থা বিবেচনায় নেওয়ার গরজ দেখাচ্ছে না। আত্মহত্যা মহাপাপ। ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অন্যান্য ধর্মেও। ধর্মপ্রাণ মানুষের এই দেশে আত্মহত্যা বাড়বে কেন, যদি ধর্মের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসারীরা যথযথভাবে অনুসরণ করে? আত্মহত্যা প্রতিরোধ বা কমাতে হলে তাই ধর্মের অনুশীলন, চর্চা ও অনুসরণ বাড়াতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রতিফলন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধর্মই ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উৎস। সরকারকে এই কাজটি সর্বাগ্রে করতে হবে। এর পাশাপাশি আত্মহত্যার অন্য যেসব কারণ আছে তা অপনোদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রে সুশাসন সুবিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে আত্মহত্যা নিরোধে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর সব উদ্যোগ জোরদার ও ফলপ্রসূ করে তুলতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই