সীমান্তহত্যা বন্ধ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ এএম

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম সীমান্তে এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। গত রোববার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্তের ১ নং মেইন পিলারের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তের ধান্যখোলা সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির এক সদস্যকে বিএসএফএ গুলি করে হত্যা করে। সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটলো। সীমান্তে বিএসএফের ঘাতক ভূমিকা কতটা বেপরোয়া রূপ নিয়েছে বিজিবি সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থেকেই তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। বিজিবির মতো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের প্রতি বন্দুক তাক করতে এবং অবলীলায় গুলি চালিয়ে হত্যা করতে যাদের বাধে না, সেই বিএসএফ নিরস্ত্র-নিরিহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে যে এতটুকু দ্বিধা করবে না তা সহজেই বুঝা যায়। সীমান্তে বিএসএফের বাংলাদেশি হত্যা এখন অতিসাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত হিসাবে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানীকে কাঁটাতারের বেড়ায় গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশি হত্যা করে তাদের বন্দুকের নিশানা ইস্তেমাল করে বলে অনেক আগেই মন্তব্য করেছে বিশ্বের কোনো কোনো মিডিয়া। ফেলানী হত্যার বিচার হয়নি। কোনো সীমান্তহত্যারই বিচার হয়নি। বিচার না হওয়া এবং ঘাতক বিএসএফ সদস্যরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়ায় সীমান্তহত্যা বন্ধ হচ্ছে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। আমাদের সরকারকে কখনোই সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে জোর প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় না। ক্ষেত্র বিশেষে না করলেই নয়, এমন ধরনের প্রতিবাদ করে দায় সারে। বিএসএফ সদস্যের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও এটা প্রত্যক্ষ করা গেছে। সরকারের এরকম নিম প্রতিক্রিয়া কিংবা প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকা বিএসএফের স্পর্ধা এতটা বৃদ্ধি করেছে। নতুন বছরে ইতোমধ্যে বিজিবি সদস্যসহ একাধিক বাংলদেশি বিএসএফের শিকার হয়েছে। বিগত বছরে অন্তত ২২ জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে। এপর্যন্ত বিএসএফ কতজন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। তার ইয়ত্তা নেই।

সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা আমাদের জন্য একটা গুরুতর সমস্যা। এটা বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান রয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে পর্যন্ত এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানানো হয়েছে। জবাবে ভারতের তরফে এই আশ্বাস দেয়া হয়েছে যে, সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করা হবে, হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু এ আশ্বাস ও প্রতিশ্রতি রক্ষিত হয়নি। এমন নজিরও আছে, বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ের আলোচনা চলাকালেও বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষীয় কিংবা রাজনৈতিক পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত কেন সীমান্তে কার্যকর হয় না, এ প্রশ্নের আজ অবধি কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে ধরেই নিতে হয় ওই আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে, একথা আমরা অনেক দিন ধরে শুনছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত চুক্তি হয়নি। আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে প্রবেশ বাধাহীন হবে, শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করা হবে, এমন কথাও আমরা শুনছি দিনের পর দিন। এমন কথাও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো বাধার প্রচীর আরো উঁচু হয়েছে। বিপরীতে ভারতীয় পণ্যের অবাধ বাজারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে উৎপাদিত হয় এমন কোনো পণ্য নেই, যা বৈধ বা অবৈধ পথে বাংলাদেশে না আসছে। ভারতের বিনিয়োগের সহজ ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ। ভারতীয় কর্মীদের কর্মসংস্থানের একটা বড় সুযোগ ও ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এখানে। এখাত থেকে বাংলাদেশের কোটি কোটি ডলার চলে যাচ্ছে ভারতে। ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় স্বতর্স্ফূত সহযোগিতা ছাড়াও বাংলাদেশের বন্দরসহ সড়ক, নৌ ও রেলপথ ব্যবহারের নির্বাধ সুবিধা লাভ করেছে ভারত। এত কিছুর বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি।

বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সব সময় বড় গলা করে বলে থাকে, দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক রোল মডেল। এ সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণ, আন্তরিক ও গভীর। কিন্তু বাস্তবতা এসব কথার সাক্ষ্য বহন করে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একপক্ষিক। এতে বাংলাদেশের কোনো হিস্যা নেই। গোটা সম্পর্কের ধারা ভারতীয় স্বার্থের অনুকূলে প্রবাহিত। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে ভারতকে সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছে। লাভ করেছে তার সমর্থন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রীর ভারতের প্রতি স্বকৃতজ্ঞ বচন শুনলেই সেটা বুঝা যায়। পর্যবেক্ষকরা অনেক দিন ধরেই বলছেন, সরকারের নতজানু নীতির কারণেই সীমান্তহত্যা বন্ধ হয় না, তিস্তাচুক্তি হয় না, বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় না, কোনো কিছুই বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূলে আসে না। এই বিষম ও একপাক্ষিক সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের একেবারেই কাম্য নয়। ভারতের নীতি-আচরণে বাংলাদেশের মানুষ যারপরনেই অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ। এটা উভয় সরকারকে আমলে ও বিবেচনায় নিতে হবে। সার্বভৌম সমতাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আমরা আশা করবো, সীমান্তহত্যা বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে। ভারতের সরকারও শান্তির সীমান্ত নির্মাণে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা দেবে। সীমান্তহত্যা বন্ধ করবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

লোকসানে দিশেহারা খামারিরা

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

চুল রাঙিয়ে বিপাকে

রঙচটা বাস চলছেই

রঙচটা বাস চলছেই