বনভূমি উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বিশ্বের বৃহত্তম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। এখানকার ভূপ্রকৃতি, মাটি ও জীবনযাত্রার সাথে কৃষি, বনভূমি ও জলবায়ুর নির্দেশক পরিবেশের চিরায়ত প্রভাব রয়েছে। দক্ষিণে সমুদ্র বিধৌত লবণাক্ত জলাভূমিতে গজিয়ে ওঠা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, উত্তর-মধ্যাঞ্চলের শাল-গজারি বন, কক্সবাজার ও পার্বত্যাঞ্চলের বৈচিত্রময় বনভূমি এ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও বনজ সম্পদের অবারিত ভান্ডার হিসেবে বরাবরই দেশের অর্থনীতি ও মানুষের কর্মসংস্থানে বিশাল ভূমিকা রেখে এসেছে। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ক্রমবিস্তৃতির সাথে সাথে দেশের বনভূমি, কৃষিজমি ও জলাভূমি নানাভাবে বেদখল হয়ে টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনাকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দেশের বনভূমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার মূল উপাদানগুলো সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। মূলত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির ছত্রছায়ায় এক শ্রেণীর দখলবাজ বনভূমি, নদনদী এবং জলাভূমি দখল করে নিজেদের সম্পদ বাড়িয়েছে। দশকের পর দশক ধরে বনভূমি দখলের প্রতিযোগিতা দেশকে এখন বনশুন্য করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে আমাদের বাস্তবতায় কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়, সেখানে সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে ১৫ শতাংশ বনভূমি রয়েছে বলে জানা যায়। তবে সরকারি এ পরিসংখ্যানে সাম্প্রতিক জরিপ বা তথ্য রয়েছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রতিনিয়ত বনভূমি বেদখল ও উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বর্তমানে দেশের ২লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর বনভূমি বেদখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। আড়াই লক্ষাধিক হেক্টর বনভূমি নানাভাবে বেহাত হওয়ার খবর সত্যিই উদ্বেগজনক। তবে এটি হঠাৎ করে উঠে আসা কোনো তথ্য নয়। এক-দুইমাস বা বছরে এত বিপুল পরিমান বনভূমি বেদখল হয়নি। মন্ত্রী নিজেই বলেছেন, সারাদেশে বছরের পর বছর ধরে এটি ঘটেছে। এ বিষয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় রয়েছে, বনবিভাগ আছে, বনরক্ষক জনবল রয়েছে। তারপরও এত বিপুল পরিমান বনভূমি কিভাবে বেদখল হয় এবং দশকের পর দশক ধরে তার পরিধি বাড়তে থাকে তা বিষ্ময়কর। শরিষার ভেতরেই ভূতের বসবাস। ইতিপূর্বে যে সব বনখেকো রাঘব-বোয়ালের তথ্য গণমাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে, তারা সবাই সরকারি মহলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশ ও সহায়তা ছাড়া বনভূমি দখল করে রাখা সম্ভব নয়। এক-এগারো জরুরি সরকারের সময় প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গণী বনখেকো রাঘব বোয়াল হিসেবে চিহ্নিত হয়। অবৈধ সম্পদের মামলায় তার ১২ বছরের সাজার রায় সর্বোচ্চ আদালতেও বহাল থাকলেও তার সহযোগী, পৃষ্ঠপোষক ও অন্য সব বনখেকো এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই আছে। তাদের সকলকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার সাথে সাথে বেদখল হওয়া বনভূমি পুনরুদ্ধারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে দিয়ে খাদ্যোৎপাদনের জন্য যখন আরো বেশি কৃষি জমি প্রয়োজন, তখন ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। সেই সাথে অধিক ব্যবহার এবং মাত্রাহীন রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে কৃষিজমির স্বাভাবিক উর্বরতাও হ্রাস পাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় কৃষিজমি ও বনভূমি বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বনভূমি পুনরুদ্ধার করে বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে তা বনায়নের আওতায় নিয়ে আসা। প্রভাবশালী বন খেকোদের দ্বারা বেদখল হওয়া ২ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর বনভূমি থেকে সরকারের উদ্ধার তৎপরতায় ইতিমধ্যে ২৭ হাজার হেক্টর বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদকে জানিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব লাভের পর বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তার ইতিবাচক ভূমিকা এ ক্ষেত্রে মানুষকে আশার আলো দেখাচ্ছে। এ সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজায়নের উদ্যোগ সারাবিশ্বে একটি অগ্রগণ্য ইস্যু হিসেবে বিবেচিত। টেকসই উন্নয়নের প্রশ্নে বেদখল হওয়া বনভূমি, নদনদী, জলাভূমি ও সরকারি ভূমি উদ্ধারের কার্যক্রম জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় লাখ লাখ হেক্টর বনভূমি ও সরকারি জমি দখলদারদের আইনের আওতায় এনে জমি পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে সরকারি জমি ভোগ-দখলে রাখার সঠিক ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ থেকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ আদায় এবং কিছু জমি লিজ দিয়ে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। দেশে চলমান অর্থনৈতিক সংকটকালে এ অর্থ কাজে আসতে পারে। বেদখল বনভূমি, নদনদী, জলাভূমি পুনরুদ্ধারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্প উন্নয়নের নামে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বনভূমি দখলের চলমান সব প্রক্রিয়া অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দেশের সার্বিক কাজে হিজড়া সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রয়োজন-সিলেট জেলা প্রশাসক
জাপানে শিশু সংখ্যায় সর্বনিম্ন রেকর্ড
গৌরনদীতে লোডশেডিং ও তীব্র গরমে কদর বেড়েছে হাতপাখার
নির্বাচনে কঙ্গনার বিরুদ্ধে লড়তে চান রাখি
সিসিকে ভৌতিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ : বিএনপির নিন্দা ও প্রতিবাদ
‘সারেগামাপা’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
বিশ্রামে যাচ্ছেন বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান!
শেনচেনে গ্যাস স্টেশন ছাড়িয়ে ৩৬২টি সুপারচার্জিং স্টেশন
অপকর্ম ঢাকতে ইসরাইলে আল জাজিরার সম্প্রচার নিষিদ্ধ
কনসার্টে সুনিধিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারলেন দর্শক
চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন আমান উল্লাহ আমান
ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার শুভেচ্ছাদূত হলেন কারিনা
নেপালের মানচিত্রে বিতর্কিত তিন এলাকা! মুখ খুললেন জয়শংকর
আমদানির খবরে হিলিতে কমেছে পেঁয়াজের দাম
ম্যাডোনার কনসার্টে হাজির ১৬ লাখ দর্শক
আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জোতানো কিংবদন্তি কোচের চিরবিদায়
কেনিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২২৮
গাজায় পানিশূন্যতায় ভুগছেন দেড় লাখের বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী
স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল পরাজয়, বড়সড় অস্বস্তিতে ঋষি সুনাক