মদ্যপানের ক্ষতি অপূরণীয়
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯ এএম
মদ্যপানের ফলে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে প্রধান হলো অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিস, যার নাম এএলডি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব পুরুষ নিয়মিতভাবে ৪০ থেকে ৮০ গ্রাম এবং যেসব মহিলা ২০ থেকে ৪০ গ্রাম মদপান করেন, দশ বছরের মধ্যে তাদের এএলডি রোগের জন্ম হয়।
এ রোগ হলে লিভারের কোষসমূহ আক্রান্ত হয় বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়ায়। যেসব লোক নিয়মিতভাবে মদ্যপান করেন তাদের এই অবস্থা হবেই। মদ পাকস্থলি বা মূত্রাশয়ে জমা হয় না। সরাসরি রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। মদ কতটা সেবন করা হয়েছে, তা ধরা পড়ে লিভার কতটা নষ্ট হয়েছে তার উপর। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় রক্তের সঙ্গে মদের পরিমাণ ০.০২ শতাংশ পাওয়া গেলেই ব্যক্তি বিশেষের উন্মাদনা বৃদ্ধি পায়। এরপর মদের পরিমাণ ০.০৪ শতাংশ হলে শরীরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং মনোসংযোগের ব্যাঘাত জন্মে। এরপর মদের পরিমাণ যদি ০.০৬ শতাংশ দেখা যায়, তখন মদ্যপায়ীকে স্ফূর্তি করতে দেখা যায়। পরিমাণ যদি ০.০৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তখন ব্যক্তি বিশেষের আচরণের উত্তেজনা দেখা যায়। পরিমাণ ০.১২ শতাংশ হলে কথায় জড়তা আসে। তারপর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় যখন মদের পরিমাণ ০.১৫ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। পরিমাণ ০.২০ শতাংশ হলে ব্যক্তিটি বমি করতে বাধ্য হয়। মদ্যপায়ী লোকটির মাথা ঘুরতে থাকবে যখন মদের পরিমাণ ০.৩ শতাংশ হয়। পরিমাণ ০.৪ শতাংশ হলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরিমাণ ০.৬০ শতাংশ হলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াতে প্রচন্ডভাবে আঘাত হানে। এই অবস্থায় মদ্যপায়ীর মৃত্যুও হতে পারে।
এএলডির বিভিন্ন পরিচয় অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিস হলে তার তিনটা পর্যায় দেখা যায়। এই পর্যায়গুলো হলো লিভার ফুলে যাওয়া। যারা অতিমাত্রায় মদ্যপান করে তাঁদের ক্ষেত্রে এই অবস্থা হয়। প্রথম পর্যায়ে তেমন কোনও সমস্যা বাইরে প্রকাশ পায় না। দ্বিতীয় পর্যায় হল লিভারের প্রদাহÑ যার নাম অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস। এই হেপাপাইটিস বিভিন্ন ধরনের। জটিল অবস্থায় উপনীত হলে, তখন বাইরে কিছু লক্ষণ ফুটে উঠে। এই লক্ষণের একটা হলো জন্ডিস। রোগী অস্বস্তি অনুভব করেন। বমি বমি ভাব হয় সঙ্গে পেটের ডাইরিয়া বা তরল পায়খানা। পেটের ব্যথা এবং শরীরের ওজন কমে যায়। এই অবস্থায় ক্ষুধা না লাগা অবস্থার উদ্ভব হয়। রক্ত বমির উপক্রম দেখা যায়। এএলডির তৃতীয় পর্যায় হল লিভার সিরোসিস, যেটা হলে মৃত্যুকে আর বোধ করা যাবে না। অত্যধিক মদ্যপান করলে পাঁচ সাত বছরের মধ্যে লিভার সিরোসিস হতে বাধ্য। প্রথমে লিভার ফুলে যায়, তারপরই ত্রনিকরূপ ধারণ করে। এরপর হেপাটাইটিস আর অন্তিম পর্যায়ে সিরোসিস। এই অবস্থায় উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে লিভার ফুলে উঠবে।
লিভার সিরোসিস হলে ৪০ শতাংশ রোগী ৭ বছরের বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন। অন্যথায় ৬০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হবে জটিল সমস্যার কারণে সাধারণত যেসব রোগী রক্ত বমি করেন, তাঁদের লিভার প্রক্রিয়া বিকল হয়ে পড়ে। সঙ্গে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াতেও বাধা পড়ে। তারপরই রোগী হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’-তে আক্রান্ত হন। তারপর বেঁচে থাকার আর কোনও পথ থাকে না। একটার পর একটা সমস্যা সামনে এসে দাঁড়ায়। এর জটিল সমস্যাগুলো এই প্রকার: শরীরে পানি জমে ওঠে। বিশেষ করে পেট এবং পায়ে পানি জমা হয়ে ওঠে। পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হবার আশঙ্কা দেখা দেয়। প্লীহা বড় হতে থাকে। এএলডি হলে এনিমিয়া বা রক্তহীনতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে। লিভারে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। হেপাটিক এনকেফেলোটিক হতে দেখা যায়। এই অবস্থায় রোগী উন্মাদ হয়ে যেতে পারেন। মস্তিষ্কে বিসঙ্গতি দেখা যায়। তার অন্যতম হলো: লিভারের জটিল সমস্যার উদয় হয়। কারো কারো পেটের জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। আমাশয়ের প্রদাহ দেখা দেয়। মানসিক রোগের উদ্ভব হয়। যৌন জীবন-যাপনের উপর এর প্রভাব পড়ে। পেশি, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের পেশির উপর প্রভাব পড়ে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। স্নায়ুবিক কলাসমূহ ধ্বংস হতে শুরু করে। মেদবহুলতা প্রকট হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মদের উপর নির্ভরশীলতা চরমে পৌঁছায়।
মদকাসক্ত ব্যক্তির করণীয়: মদ পানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়। মদ্যপায়ী ব্যক্তিকে পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হয়। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। উপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলো রোগীর দেহে দেখা দিলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মদের প্রচলন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব না হলেও এর অপকারিতা মানুষের মাঝে প্রচার করে সজাগতা সৃষ্টি করা খুবই দরকার। তাতে সমাজ ও দেশের পক্ষে মঙ্গল। অনেক পিতা-মাতা ঘরের ভিতরেই সন্তানের সামনে মদ পান করে। সন্তানের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে এই সব বন্ধ করা উচিত। এই বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উল্লেখনীয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। মদের অপকারিতা প্রচার করে মানুষের মাঝে সজাগতা সৃষ্টি করা সমাজের জন্য প্রয়োজন। জেনে রাখা ভাল মদ্যপানের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটে। মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্য অল্পেই হারিয়ে যায়। ছোট ছোট কথায় ঝগড়াঝাটি শুরু হয়ে যায়। মদ এক প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য। মদ শরীরের কোষসমূহের ক্ষতি করে। নষ্ট করে লিভার। দীর্ঘদিন মদপানের ফলে পাকস্থলীর প্রদাহ শুরু হয়। এর থেকে পেটে আলসার হবার আশঙ্কা থাকে। মদ্যপানের ফলে এনজাইমসমূহ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বদহজম দেখা দেয়। শরীরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থের অভাব দেখা দিতে থাকে। বিশেষ করে ভিটামিন ‘বি-১২১-এর অভাব দেখা দেয়। এই সব রোগীকে সর্বদা পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট। সদস্য, জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ কমিটি, সিলেট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই