ইসরাইল নব উদ্যমে গণহত্যায় মেতে উঠেছে, যার দায় যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারবে না
২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯ এএম | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৯ এএম
গাজার দক্ষিণপ্রান্তিক শহর রাফাহর একটি বাড়িতে ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ১৫ জনকে হত্যা করেছে। এদের অধিকাংশই শিশু। ওদিকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরো অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরাইলি বাহিনী নতুন উদ্যমে গাজায় হত্যা ও ধ্বংসকাণ্ড শুরু করেছে। ক’দিন আগে ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ইসরাইলের জন্য বড় রকমের সামরিক ও মানবিক সহায়তা অনুমোদন করেছে। ২৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের এই নতুন সহায়তা সামরিক, আকাশ প্রতিরক্ষা ও মানবিক কাজে ব্যবহার করা হবে। এত বড় অংকের সহায়তায় ইসরাইল স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত হয়েছে। রাফাহ ও পশ্চিম তীরে হত্যাকাণ্ড তার প্রমাণ বহন করে। অবশ্য গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত এমন কোনো দিন নেই, যেদিন গাজা বা পশ্চিম তীরে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেনি। এই নির্বিচার হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। ৭ মাসে আগ্রাসী ইসরাইলি বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৩৪ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি নারী ও শিশু। ইসরাইলের এই আগ্রাসন, হামলা ও হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমর্থনই দেয়নি, সর্বপ্রকার সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। ইসরাইলের জন্য নতুন সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে দ্বিমত ও সমালোচনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মহলসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে। ইসরাইলকে আরো সহায়তা দেয়া মানে আরো ফিলিস্তিনি হত্যা, আরো ধ্বংসকাণ্ড। এসব কথা বেতোয়াক্কা করেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের জন্য নতুন সহায়তা অনুমোদন করেছে। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে একথা বলা যায়, গাজায় আগ্রাসন ও গণহত্যা দৃশ্যত ইসরাইল চালাচ্ছে, তবে প্রকৃতপক্ষে চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য কেবল ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুই দায়ী নয়, আসলে দায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি চাইতো, আগেই গাজায় যুদ্ধ বিরতি হয়ে যেতো। ইসরাইলের এত সাহস ও সক্ষমতা নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। ইসরাইলের বকলমে যুক্তরাষ্ট্রই গাজায় আগ্রাসন, হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ বিরতির প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটোতেই তা নাচক হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান যুক্তরাষ্ট্র মুখে সমর্থন করলেও বাস্তবে করে না। কদিন আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্র্ণ সদস্যপদ যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কারণে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ লাভের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে ফিলিস্তিনের।
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার দায় যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে যেতে পারবে না। প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিংরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ইতিহাসের উপাদান, ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ, সাক্ষ্য-প্রমাণ ইত্যাদি এখন অনেক বেশি নিখুঁতভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। সহজে তা মুছে ফেলা সম্ভব নয়। একদিকে মানবাধিকারের ললিত বাণী, অন্যদিকে মানবাািধকারের বেপরোয়া লংঘন-যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বৈতনীতিও লিপিবদ্ধ হয়ে থাকছে। যুক্তরাষ্ট্রকে বর্ণবাদী, খ্রিষ্টবাদী, সাম্প্রদায়িক ও মুসলিম বিদ্বেষী রাষ্ট্র বলা হয়। এসব কি কারো অজানা? আজ গাজায় যা ঘটছে, ঘোর মুসলিম বিদ্বেষই তার মূলে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো ইসলামোফোরিয়ায় আক্রান্ত। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াকে তারা অনিবার্য নীতি বা কর্তব্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। তারা যুথবদ্ধ হয়ে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশগুলোর জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আজ ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রহারা, নিজ দেশে পরবাসী, অধিকাংশ অন্যান্য দেশে উদ্বাস্তু। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ কখনো তাদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। তারা দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনের ভূমি জবরদখলকারী ইহুদিদের রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে। মুসলিম রাষ্ট্র ও জনপদগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাশক্তিচক্র এপর্যন্ত কত মানুষকে হত্যা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। কত সম্পদ লুট করেছে, বাড়িঘর ও স্থাপন ধ্বংস করেছে তার হিসাব নেই। তারাই যখন শান্তি ও মানবতার কথা বলে তখন সেটা পরিহাস বলেই মনে হয়। যুদ্ধ চালানোর জন্য, মানুষ হত্যার জন্য ইসরাইল ও ইউক্রেনকে যখন বিলিয়নকে বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হচ্ছে, যখন আফ্রিকার এক বড় ভূগোলজুড়ে বছরের পর পর দুর্ভিক্ষ বা দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। দুর্ভিক্ষপীড়িত কংকালসার মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের বিন্দুমাত্র মমতা ও সহানুভূতি নেই। সিরিয়ার বা অন্যান্য মুসলিম দেশের উদ্বাস্তুদের জন্য ইউরোপে কোনো স্থান নেই। অথচ ইউক্রেনের শ্বেতাঙ্গদের জন্য তাদের দরদ ও কর্তব্য অশেষ, অফুরন্ত। পূর্ব তিমুর কিংবা দক্ষিণ সুদানে খ্রিস্টানদের আলাদা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠায় তাদের যতটা বদ্ধপরিকর হতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার কিছুমাত্র দেখা যায়নি।
শান্তি, স্বাধীনতা, মানবাধিকার গণতন্ত্র ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বৈতনীতি আজকের বিশ্বের অশান্তি, হানাহানি, যুদ্ধ, মানবিক বিপর্যয়, মানবাধিকারের অবমাননা ইত্যাদির জন্য প্রধানত দায়ী। ওইসব দেশেও অভিন্ন কারণে বিরোধ-বিভক্তি-ক্ষোভ দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। মানবতাবাদী ইহুদিরা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গাজার গণহত্যার বিরোধিতা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করছে। খোদ ইসরাইলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে প্রায়ই সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মান প্রভৃতি দেশেও সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ ক্ষোভ-বিক্ষোভ করছে। মুসলিমদেশগুলোতে তো স্বাভাবিক কারণেই যুদ্ধ ও গণহত্যাবিরোধী সমাবেশ বিক্ষোভ হচ্ছে। এ ব্যাপারে ইসলামী সম্মেলন সংস্থার ভূমিকা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। সংস্থাটি যদি সক্রিয় হতো, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ ও বিপন্নতা অনেক আগেই কমে যেতো। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও তরান্বিত হতো। ইসলামী সম্মেলন সংস্থা কবে জেগে উঠবে, সেটাই প্রশ্ন। যে কোনো দেশের নীতি, আদর্শ ও পদক্ষেপ তার সুনাম-দুর্নাম, খ্যাতি-অখ্যাতির জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ পরাশক্তি হিসাবে নিজের অবস্থান এখনো ধরে রাখলেও ইতোমধ্যে তাতে চিড় ধরছে। তার প্রভাব দিনে দিনে কমে আসছে। মধ্যপ্রাচ্য তার হাতের বাইরে চলে গেছে। এশিয়ার গুটিকয়েক দেশে তার প্রভাব রয়েছে। তার দীর্ঘদিনের মিত্র অনেকেই তাকে ছেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তার প্রতিপক্ষ শক্তির বলয় ও প্রভাব দিনকে দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা কোনো শুভ লক্ষণ নয়। তার নেতৃবৃন্দ ও নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি আমলে নেয়া উচিত। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসৃত দ্বৈতনীতি পরিহার করলে তার অবস্থানের বাঁক পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাতে বিশ্বের শান্তি, নিরাপত্তা, সহাবস্থান বহুলাংশেই নিশ্চিত হতে পারে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লোকসানে দিশেহারা খামারিরা
তাপদাহের সঙ্গে স্বল্প বৃষ্টি
আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর কোনো অসম্মান একমুহূর্তও সহ্য করবো না
সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
যারা আমাদের চাপে রাখতে চেয়েছিল, তারাই এখন চাপে :ওবায়দুল কাদের
মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আরবিতে দক্ষতা অর্জন করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন : সিপিডি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ
বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল বন্যার আশঙ্কা
ভিয়েতনামে লাখ লাখ মাছের মৃত্যু
২৫ জেলায় স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আজ বন্ধ থাকবে
বাড়তি ভাড়ায় রেলভ্রমণ আজ থেকে
ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
তুরস্ককে আন্তর্জাতিক গ্যাস বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত
চাঁদের পথে পাকিস্তানের প্রথম স্যাটেলাইট মিশন
সম্রাট হুমায়ুন : উদারনীতির উদ্যান-২
ফজরের নামাযের দশটি ফযীলত-২
ষাঁড় ঝাঁপিয়ে পড়ে দোকানে
নারী সংখ্যাধিক্যের দেশ
চুল রাঙিয়ে বিপাকে
রঙচটা বাস চলছেই