ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর কত?

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম

নিত্যপণ্যে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক স্তরবিন্যাসে নি¤œবিত্ত-নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোই সংখ্যাগরিষ্ঠ। চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে এসব পরিবার। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি না থাকায় দরিদ্র ও পুষ্টিহীনতার হার বেড়ে চলেছে। এভাবে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির সাধারণ গতিধারায় চলছে না। প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের মল্য উল্লম্ফনের সাথে রয়েছে সিন্ডিকেটেড কারসাজি। এক শ্রেণীর মুনাফাবাজ মজুদদার একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করে পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থাগুলো মূল্য নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। কৃষক, উৎপাদক ও আমদানিকারক থেকে সাধারণ ভোক্তা পর্যন্ত পণ্যমূল্যে বিশাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। একদিকে কৃষক উৎপাদন খরচসহ ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা পরিবারের নিত্যপণ্যের চাহিদা পুরণে হিমসিম খায়। চাল,ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, মসলাসহ নিত্যপণ্যের বাজারে মাঝখানের এক অদৃশ্য মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর পকেটে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। মুনাফালোভী বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দেশে কোটি কোটি শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এদের কারণে নানাবিধ রোগাক্রান্ত ও অপুষ্ট একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠছে।

বাজার সিন্ডিকেটের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রান্তিক কৃষক, খামারি এবং ভোক্তাশ্রেণী প্রধান দুইপক্ষই বঞ্চিত হয়। এই প্রবণতা শুধু দরিদ্র মানুষের অপুষ্টি ও জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলেনা, উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষকরা ধান-আলু-পেঁয়াজের মত্য পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষাবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ থেকে বুঝা যায়, মুনাফাবাজ সিন্ডিকেট দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে ডিমের বাজারকে ঘিরে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। অদৃশ্য শক্তির যাদুমন্ত্রে ডিমের দাম ওঠানামার যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা সব পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দেশে মৎস্য উৎপাদনে এক প্রকার বিপ্লব সাধিত হলেও শুধুমাত্র মৎস্য দিয়ে প্রোটিনের চাহিদার সবটা পুরণ করা সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতির কারণে গরু-খাসির গোশত, হাঁস-মুরগি কিনতে পারছে না সাধারণ মানুষ। সে ক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির ডিমই হচ্ছে সাধারণ মানুষের সহজ বিকল্প। কিছুদিন আগেও ৩৫-৪০ টাকা হালি বিক্রি হওয়া ফার্মের মুরগীর ডিমের মূল্য এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন ৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। হঠাৎ এমন মূল্যবৃদ্ধির সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা কারো কাছেই নেই। ডিম ও মুরগির মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য প্রেটিনের চাহিদা পুরণের অবশিষ্ট অবলম্বনকেও দুরূহ করে তুলেছে।

পণ্যমূল্য নিয়ে কারসাজি দেশের মানুষের কাছে বড় ধরনের সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি হঠাৎ করেই উদয় হয়নি। বছরের পর বছর ধরে অদৃশ্য শক্তির সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজির খেসারত দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। এই সিন্ডিকেটের শক্তি রাষ্ট্রশক্তিকেও চ্যালেঞ্জ করছে। বিগত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেটের হাত বড়, ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সরকারকে বিপদে পড়তে হবে’। সম্ভবত এমন অপ্রিয় সত্য উন্মোচনের জন্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও বর্তমান সরকারে সেই মন্ত্রীর ঠাঁই হয়নি। দেশের অর্থ পাচার, বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতি, ব্যাংকিং সেক্টরের লুটপাট, শেয়ারবাজার লুন্ঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভ চুরি ইত্যাদি কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারিরই কোনো বিচার কিংবা সুরাহা হয়নি। অদৃশ্য শক্তির কালোহাত দেশের অর্থনীতি, বাজার ব্যবস্থা, ব্যাংকিং খাত এবং মানুষের জীবনযাত্রাকে সরাসরি আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সাধারণ খাদ্য ও প্রোটিনজাত খাবারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি শিশু-কিশোরদের অপুষ্ট করে তোলছে। মূল্য কারসাজি তাদের মেধা, উদ্ভাবনী প্রতিভা, কর্মশক্তি ও উৎপাদনশীলতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অপুষ্ট ও কোটি কোটি রোগাক্রান্ত মানুষের বোঝা নিয়ে কোনো জাতি সমৃদ্ধ সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। দেশে পণ্যের মূল্য কারসাজি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ৩টি আইন যথাক্রমে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন১৯৫৬, ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এবং কৃষি বিপণন আইন ২০১৮’ রয়েছে। এসব আইন বাস্তবায়নে কয়েকটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন না থাকায় আইন কোনো কাজে আসছে না। বছরের পর বছর ধরে পণ্যমূল্য কারসাজি অব্যাহত থাকলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ নেই। দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত এমন মুনাফাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকারের নিষ্ক্রিয় আত্মসমর্পণ বিস্ময়কর। চাহিদা অনুসারে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষ সিন্ডিকেটের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চায়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার