সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি
১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম
সরকার বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, প্রতিবন্ধীভাতা, এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান ইত্যাদিসহ অর্ধশতাধিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সমাজে হতদরিদ্র, বেকার, ভূমিহীন, ভবঘুরে, আশ্রয়হীন, দুঃস্থ নারী, অনাথ ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু, অসহায় প্রবীণ, দরিদ্র রোগী, শারীরিক-বুদ্ধি-সামাজিক প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক নাগরিকদের লাগসই কল্যাণ ও উন্নয়ন বিধানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গ্রাম ও শহর উভয় এলাকায় নিবিড়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সরকার দেশের কমবেশি একতৃতিয়াংশ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় আনার মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের দারিদ্রমোচন, মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় খাদ্য সহায়তা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রিসহ নানাবিধ কর্মসূচির পাশাপাশি সরকার নগদ অর্থ সহায়তাও দিয়ে থাকে।
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি: ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর হতে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। শুরুতে প্রতি ওয়ার্ডের ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাকে প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হতো। পর্যায়মে ভাতাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজের দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি যাদের বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে ৬৫ বছর বা তদুর্দ্ধ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর বা তদুর্ধ তারা এ কর্মসূচির আওতায় আসতে পারেন।
বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রম: দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ও অনগ্রসর নারীর সামাজিক সুরক্ষা ও তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সরকার ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা’ কর্মসূচি চালু করে। শুরুতে এ কর্মসূচির আওতায় ৪.০৩ লক্ষ জন নারী মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা পেতেন। বর্তমানে উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা: ২০০৭-০৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু করা হয়। এর আওতায় মূলত পল্লী এলাকার দরিদ্র মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র গর্ভবতী মহিলাদের ভাতা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। আগে মাসিক ৫০০ টাকা হারে এ ভাতা প্রদান করা হতো। বর্তমানে দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন মাসিক ভাতা ৮০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও, ভাতা প্রদানের মেয়াদ ২৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৩৬ মাস করা হয়েছে।
কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল: ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। শহরাঞ্চলে কর্মজীবী দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য ও তাদের গর্ভস্থ সন্তান বা নবজাত শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তার উদ্দেশ্যে এই ভাতা প্রদান করা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর গার্মেন্টস শিল্প এলাকা এবং দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাকে এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে একজন মা মাসে ৫০০ টাকা করে ২৪ মাস পর্যন্ত এ সহায়তা পেতেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছর হতে ভাতার পরিমাণ ও মেয়াদ দুটোই বৃদ্ধি করা হয়েছে।বর্তমানে একজন মা মাসে ৮০০ টাকা করে ৩৬ মাস পর্যন্ত এ সহায়তা পান।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা: জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা মাসিক ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতাসহ ১০ হাজার টাকা হারে বছরে ২টি উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠদের ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের ২৫ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের সকল জেলায় সব মুক্তিযোদ্ধাদের এ২চ পদ্ধতিতে সম্মানী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি ২ হাজার টাকা করে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ সম্মানী ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারবর্গ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণেও সরকার কাজ করছে। শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতার জন্যে পৃথক কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি: ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাইলট হিসেবে দেশের ৭টি জেলা যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, যশোর, নওগাঁ ও হবিগঞ্জ জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। বর্তমানে কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে মোট ৬৪ জেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি: এ কর্মসূচিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত ৫০ লাখ হত দরিদ্র পরিবারকে (বিধবা, বয়স্কা, পরিবার প্রধান নারী, নি¤œ আয়ের দুঃস্থ পরিবার প্রধানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে) তালিকাভুক্ত করা হয়। প্রতি বছর কর্মাভাবকালীন ৫ মাস ১০ টাকা কেজি দরে এ কর্মসূচির তালিকাভুক্ত পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়।
ওএমএস কর্মসূচি: নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার খোলা বাজারে বিক্রয় (ওএমএস) কর্মসূচি চালু করে। এ কর্মসূচির আওতায় বিশেষ ভর্তুকির মাধ্যমে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে খাদ্য সামগ্রী (চাল ও আটা) বিক্রয় করা হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় ২০১৪ সালের প্রথমার্ধ থেকে দুস্থ জনগোষ্ঠী উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচিতে তিনটি জেলার ৫টি উপজেলায় উপকারভোগীদের মধ্যে পুষ্টিচাল বিতরণের কাজ ধাপে ধাপে প্রচলন করা হয়। বর্তমানে ১৭০টি উপজেলায় পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির পুষ্টি চাহিদা পূরণে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, ফলিক এসিড, আয়রণ ও জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিচালও বিতরণ করা হচ্ছে। ২০১৭- ১৮ অর্থবছরে কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে সর্বমোট ২৫১টি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে পুষ্টিচাল বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়াধীন কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি চলমান রয়েছে। সাধারণত দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দরিদ্র মানুষের জীবিকা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহকে এই সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রতি পরিবারকে মাসিক ২০-৪০ কেজি করে ২ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত এ সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়াও, মা ইলিশ ও জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেরাও ভিজিএফ সহায়তা পেয়ে থাকেন। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে দরিদ্র জনগণও ভিজিএফ সহায়তা পান।
অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা: ২০০৫-০৬ অর্থবছরে চালু করা হয় অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় শুরুতে ১,০৪,১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হতো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাসিক ভাতার পরিমাণ ৭৫০ টাকা হতে টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
সরকারের নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে দেশের দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেলেও সরকারের লক্ষ্য হল দেশকে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্যমুক্ত করা। উচ্চ প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রগতিশীল কর কাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখে। এর বাইরে দারিদ্র্য হ্রাসের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার বেশ কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম, পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রম, দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন, শহর সমাজ উন্নয়ন নামক ৪টি কার্যক্রমের আওতায় ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে পরিবার প্রতি ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিতরণ করা হচ্ছে। এসব ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম প্রান্তিক চাষী, দিনমজুরসহ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগণকে সুরক্ষা প্রদান ও গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য ধরে রাখার মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। শহর সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকা হারে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। সরকার অপেক্ষাকৃত বঞ্চিতদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার জন্য সিএমএসএমই স্টার্টআপ ও নারী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য জামানত শিথিল করে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বাস্তবায়ন করছে। (পিআইডি)
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার