কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে
১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম
সঠিক পরিকল্পনা ও বাজারব্যবস্থাপনা না থাকায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ উঠাতে পারছে না কৃষক। সেই সাথে প্রান্তিক কৃষক এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের মূল্যে বিশাল ফারাক তৈরী হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদি খরা ও তাপপ্রবাহসহ প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব সত্ত্বেও এবার বাম্পার বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে। উজানী ঢলে পাকা ধানের খেত ডুবিয়ে দেয়ার মত কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি ছাড়াই ইতিমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কেটে ঘরে তোলা হয়ে গেছে। বাম্পার ফলনসহ সারাদেশে ৭০ শতাংশের বেশি ধানকাটা শেষ হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। এটা এ দেশে কোনো নতুন বাস্তবতা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান উৎপাদন এবং মূল্য বঞ্চনায় কৃষকের ঘরে হতাশা ও বিষাদ দেখা গেছে। এরপরও প্রতিবছর নতুন স্বপ্ন বুকে ধারণ করে ফসলের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে কৃষক। গত ৫ দশকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য ক্রমবর্ধিত খাদ্য চাহিদা পুরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কৃষক যে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে তা দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম মাইলফলক। চরম খাদ্য ঘাটতি, মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষের মত প্রাকৃতিক সংকট মোকাবেলা করে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার মূল কারিগর দেশের কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষ। তাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিকে নজর দেয়া রাষ্ট্রের অন্যতম জরুরি কর্তব্য।
অনেক আগেই কবি লিখেছেন, ‘সব সাধকের সেরা সাধক আমার দেশের চাষা/দেশমাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা’। দেশের কর্মবীর কৃষককে তার ফসলের প্রাপ্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করে দেশকে বড় ধরণের সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কিনা তা আমাদের ভাবতে হবে। চলমান অর্থনৈতিক সংকট তথা ডলার সংকটে ভোগ্যপণ্যসহ অনেক জরুরি পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় যদি দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয় তা মূল্যস্ফীতিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার আরো বাইরে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ ও দুর্ভিক্ষ নেমে আসতে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা মোকাবেলা করতে হলে প্রথমেই কৃষকের নিরাপত্তার দিকে সুনজর দিতে হবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে কৃষক এবং ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পের বিভিন্ন খাতে যেভাবে প্রণোদনা ও ভতুর্কি দেয়া হচ্ছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষক ও সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিয়ে হলেও উৎপাদন খরচের বোঝা কমিয়ে আনতে হবে। কৃষকের জন্য ধানবীজ, সার, সেচ, বালাইনাশকের সুলভ ও ভর্তুকি মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। গবাদিপশুর খাদ্যমূল্য গোশতের দামে প্রভাব ফেলে। এদিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
অর্থকরি ফসল হিসেবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এক সময় পাটের শীর্ষ ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে পাটশিল্প নিয়ে অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। প্রথমে পাটকলে বিশৃঙ্খলা, পাটগুদামে আগুন দিয়ে এ শিল্পের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা হয়। অত:পর পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় নিজের পাটে আগুন দিয়ে কৃষককে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। আমাদের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা একটি অদৃশ্য শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। বোরো ও আমনের ভরা মওসুমে ভারত থেকে নি¤œমানের চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে ধান-চালের বিক্রয় মূল্যে ধস নামিয়ে প্রান্তিক চাষিদের বঞ্চিত করার চক্রান্ত রয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের মূল্য কেজি ৩২টাকা নির্ধারণ করলেও প্রান্তিক চাষিরা ২০টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। পুষ্টির সুষম চাহিদা পুরণে ভাতের সাথে প্রোটিনের চাহিদাও পুরণ করতে হয়। এক কেজি গরুর গোশত কিনতে হলে কৃষককে একমণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এ এক বিষ্ময়কর বাস্তবতা। প্রতিমণ ধান উৎপাদন করতে যেখানে গড়ে কৃষকের খরচ হচ্ছে ১৪-১৫শ টাকা, সেখানে তাদেরকে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০-১২০০ টাকায়। দেশের খাদ্য চাহিদা পুরণে সাফল্যজনক ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কৃষক পুঁজি হারিয়ে দুর্বল ও সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তারা ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। আমাদের মত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশে জনগণের খাদ্য চাহিদা পুরণে ব্যর্থতা সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। দেশে অর্থনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক মন্দা, ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি কারণে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এমনকি ডলারের পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকলেও জরুরি মুহুর্তে খাদ্য আমদানি করতে না পারায় দেশে খাদ্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বিগত দশকে আমাদের হয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তায় দেশীয় উৎস ও উৎপাদনশীলতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার