ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈরী আবহাওয়া, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, অতিমাত্রার লবণাক্ততার প্রভাব, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সুপেয় পানির তীব্র সংকটসহ নানান প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতায় সর্বদা কোণঠাসা উপকূলের মানুষ। একদিকে যেমন বারবার ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের জীবনযাত্রার মান নি¤œ থেকে নি¤œতর পর্যায়ে চলে যায়, অন্যদিকে ধুঁকে ধুঁকে চলা বিধ্বস্ত উপকূলবাসীর সামনে আয় ইনকামের সঠিক নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম না থাকায় তাদের অভাব অনটন, সাংসরিক টানাপোড়ন সর্বদা তাড়িয়ে বেড়ায়। মাটি ও পানির অতিমাত্রায় লবণাক্ততা, মৌসুম ভেদে অতিরিক্ত পানি আবার বিপরীতক্রমে খরার প্রভাবে কৃষি বা মৎস্য চাষে উপকূলবাসীর জীবনমানের দৃশ্যত তেমন কোনো উন্নয়ন হয় না। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও তারা পারে না তাদের ভাগ্যের চাকাকে ঘোরাতে। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে উপকূলবাসী অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করে এমনটাই উপলব্ধি এনে দেয় যেন। জন্মই যেন তাদের আজন্মের পাপ। একারণে উপকূলবাসী সর্বদা মেনে নেয় যে দুঃখ দুর্দশা সাথে করে নিয়েই তাদের চলতে হবে এবং এটাই নির্মম বাস্তবতা। তবে তাদের সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে সুপেয় পানির সংকট অতি তীব্র। ‘পানিই জীবন, পানিই মরণ’ উপকূলবাসীর জন্য এ ধরনের কথাগুলো খুবই প্রযোজ্য। কেননা উপকূলীয় অঞ্চলে মৌসুম ভেদে কখনো কখনো পানির আধিক্য থাকলেও বছরের বেশিরভাগ সময় সুপেয় পানির তীব্র অভাব থাকে। আবার পানির আধিক্য থাকলেও তার সবটাই লবণাক্ত এবং পানের অযোগ্য। এই সংকট সমাধানে সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপ প্রশংসানীয় বলা যায়। কিন্তু তাতেও উপকূলবাসীর তেমন সুসার হচ্ছে না।

সুপেয় পানির সংকট নিরসনে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও উপকূলবর্তী প্রতিটি পাড়ায় একের অধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব নলকূপের বেশিরভাগেরই পানি পানের অনুপযোগী। অধিকাংশ গভীর নলকূপের পানির রং লালচে এবং এই পানি স্বাদে ও মানে বোতলজাত পানি অপেক্ষা বেশ আলাদা। তাছাড়া ব্যবহারকারীদের গভীর এসব নলকূপ থেকে হাতে চেপে পানি বের করা বেশ কষ্টসাধ্য। উপরন্তু গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর এসব নলকূপ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন হাতে চেপে পানি বের করা একরকমের দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া সুগভীর এসব নলকূপের পানির গুণগত মান এবং রং ভালো না হওয়ায় বাধ্য হয়ে উপকূলবাসী পানির বিকল্প উৎস খুঁজতে থাকে। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় পানির বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। আশাপাশে যেসব জলাশয় থাকে সেগুলো অতিমাত্রায় লবণাক্ত থাকে এবং গ্রীষ্মের খরতাপে সেগুলোও শুকিয়ে যায়। আবার বর্ষা মৌসুমে চারপাশে পানির আধিক্য থাকলেও অতিমাত্রায় লবণাক্ত থাকার কারণে সেই পানি পানের পুরোপুরি অনুপযোগী থাকে।

তবে কিছু এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে পাইপ লাইনে পানি সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করা আছে। এসকল পাইপলাইনে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে পানি সাপ্লাই দেওয়া হয়। পাইপলাইনের আওতাধীন উপকূলবাসীরা এই পানি পানের জন্য ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি গ্রাহককে পানির ব্যবহারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে বিল পরিশোধ করতে হয়। উদাহরণসরূপ ৪/৫ জনের একটা পরিবারের জন্য পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানি শুধুমাত্র খাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলেও গ্রাহককে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বিল দিতে হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরানো এসকল উপকূলবাসীর জন্য প্রতি মাসের খাবার পানি বাবদ এই বিল পরিশোধ মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলে মনে হয়। এছাড়া কিছু কিছু ব্যক্তি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যক্তি পর্যায়ে পানির পাম্প স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ পানিকে পরিশোধন করে বিক্রি করে। পরিশোধিত এই পানি গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে পরিবহন ব্যয়েরও একটা বাড়তি ঝামেলা আছে। একদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভূগর্ভ থেকে পাম্পের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে সেগুলো রাসায়নিক দ্বারা বা ফিল্টার দিয়ে বিশুদ্ধ করে পুরোপুরি পানের উপযোগী করতে মূল্য মোটামুটিভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে তার সাথে ব্যবসায়ীর লভ্যাংশ যোগ করলে মোট মূল্য বেশ বেশিই বলা যায়। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে পানির পিছনে বাড়তি এত বিনিয়োগ বেশিরভাগ পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেক ব্যক্তি এখান থেকে পানি কিনে প্রয়োজন মিটালেও অধিকাংশ উপকূলবাসীর জন্য এটা ফিজিবল না। এছাড়া দৈনন্দিন গোসল, রান্নাবান্না, কৃষি কাজ, গৃহস্থলির অন্যান্য কাজের জন্য আলাদা পানির চাহিদা তো আছেই। পানির লবণাক্ততা অতিমাত্রায় হওয়ায় এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভোগান্তি এতটা চরমে পৌঁছায় যেটা স্বচক্ষে অবলোকন ব্যতীত অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি অনেক এনজিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও জনগণের ভোগান্তি নিরসনে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এসকল এলাকায় বাসাবাড়িতে বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় এবং অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বড় বড় পানির ট্যঙ্ক স্থাপন করলেও এই ট্যাঙ্কে ধারণকৃত পানি গ্রামবাসী বেশিদিন ব্যবহার করতে পারে না। সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষিত এসব পানির ট্যাঙ্কে সংরক্ষিত পানি বেশিদিন বিশুদ্ধ থাকে না। নানান ধরনের ব্যাক্টেরিয়া, পোকামাকড়, অণুজীবের আধিক্যের কারণে ট্যাঙ্কে ধারণকৃত পানিও দূষিত হয়ে যায়। পানিতে ফাঙ্গাস জন্মে। বিভিন্ন অণুজীবের আক্রমণে স্টোরেজ ট্যাঙ্কে আহরিত পানি গন্ধ হয়ে পানের অনুপযোগী হয়ে যায়। আবার বর্ষাকালে সংগৃহীত পানির স্টোরেজ ট্যাঙ্ক পরবর্তী বর্ষার আগ পর্যন্ত পরিবারের চাহিদাকৃত পানির চেয়ে পরিমাণে কম হওয়ায় প্রতিটি পরিবারকে পানির সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হয়। উপকূলীয় এসব এলাকায় প্রায় প্রতি বাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অগভীর নলকূপ স্থাপিত আছে। কিন্তু এসব অগভীর নলকূপে অতিমাত্রায় আর্সেনিক, আয়রন, লেডসহ অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতি এবং ঐ পানির লবণাক্ত স্বাদ থাকায় পানের উপযুক্ত নয়। পান ব্যতীত গৃহস্থলির অন্যান্য টুকিটাকি কাজ কিংবা গোসলে এই পানি ব্যবহার করা গেলেও শুকনো মৌসুমে অগভীর নলকূপের পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। তাছাড়া অনেকে জেনে কিংবা না জেনে অগভীর এই নলকূপের আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সম্মুখীন হচ্ছে নানা ধরনের পেটের পীড়ায়। যেটা উপকূলবাসীর জন্য চরম হুমকি।

উপকূলবাসীর জীবনধারণের প্রধান উপজীব্য এই পানিকে কেন্দ্র করে। কেননা উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি চাষ সেখানকার একমাত্র অবলম্বন। এই চিংড়ি চাষের জন্য ঘেরগুলোতে বছরের পুরো সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন পানির প্রয়োজন। যেখানে নিয়মিত জোয়ার ভাটার মাধ্যমে চিংড়ি ঘেরের পানির পরিবর্তন আবশ্যক। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এসব অঞ্চলে বছরের প্রায় ৬ মাসেরও অধিক সময় উপকূলবাসী পানি পায় না। চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহের জন্য যেসব নদী আছে সেগুলো এখন পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এছাড়া ক্ষমতাসীন অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধ তৈরি করে চিংড়ি ঘেরে সরবরাহকৃত পানি দেওয়া নদীগুলোকে অত্যাধিক সংকুচিত করার কারণে সেগুলো দিয়ে পানি সরবরাহ এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানির প্রবাহ হলেও বর্ষা শেষ হতেই আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এছাড়া প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের বেশ আগেভাগেই চিংড়ি চাষের উপযুক্ত সময় শুরু হয়ে বর্ষা মৌসুমে একটু মন্থর হয়ে আসে এবং এর পরবর্তী সময়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে পানির অভাবে চিংড়ি চাষেরও পুরোপুরি অনুপযোগী দেশের দক্ষিণাঞ্চল।

চিংড়ি চাষের জন্য চিংড়ি ঘেরগুলোতে পানির আদর্শ যে গভীরতা থাকার দরকার পর্যাপ্ত পানির অভাবে সেটা কোনভাবেই অনুসরণ করা যাচ্ছে না। ফলে সূর্যের প্রখর তাপে চিংড়ির স্বাভাবিক বাসস্থান বিনষ্ট হচ্ছে। চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এছাড়াও পানি কম থাকায় চিংড়ি ধরার উপযোগী হওয়ার পূর্বেই নানা ধরনের রোগ বালাই দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত এসব চিংড়ি ধরার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে ঘেরের মধ্যেই মারা যাওয়ায় ঘের মালিক ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। চিংড়ি চাষিরা বর্তমানে চিংড়ি চাষ হতে লাভ তো দূরের কথা সারাবছরের বিনিয়োগকৃত টাকাও উঠাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বছরের পুরো সময়টায় উপকূলবাসী অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চিংড়ি উৎপাদনে আনুষঙ্গিক সকল খরচের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে চিংড়ির বাজারমূল্যের নেতিবাচক প্রভাব চিংড়ি চাষিদের অনেকটা কোণঠাসা করেছে। এহেন পরিস্থিতিতে উপকূলবাসী না পারছে চিংড়ি চাষকে ছেড়ে দিতে আবার না পারছে চিংড়ি চাষে লাভবান হতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, চিংড়ি চাষে ব্যাপক ক্ষতি, পানির অভাব, দৈনন্দিন খরচ বেড়ে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলবাসীকে চরমভাবে কোণঠাসা করেছে। বাধ্য হয়ে অনেকে চিংড়ি চাষের জন্য ব্যবহৃত আবাদি জমিতে ফসল ফলাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা। অতিমাত্রার লবণাক্ততাকে এক্ষেত্রে অধিক দায়ী করা যেতে পারে। এছাড়া কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত পানির অভাব তো আছেই। এই সমস্যা সমাধানে লবণাক্ত সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা অতীব জরুরি। কিন্তু এখানেও পর্যাপ্ত গবেষণার অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে লবণাক্ত সহনশীল বীজ উদ্ভাবন, স্বল্প পানির উপস্থিতিতে কীভাবে এসব উদ্ভিদ টিকে থাকতে পারবে সেটা নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

চিংড়ি ধরার উপযুক্ত হওয়ার পূর্বে কেন মারা যাচ্ছে সেগুলোর কারণ খুঁজে কীভাবে চিংড়ি চাষ থেকে লাভবান হওয়া যায় সে বিষয়ে মৎস্য গবেষকদের যথেষ্ট ভূমিকা রাকা প্রয়োজন। চিংড়ি চাষের জন্য যদি পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে চিংড়ি চাষ থেকে লাভবান হওয়া দুঃসাধ্য। তবে এক্ষেত্রে এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন প্লট আকারে জলাশয় তৈরি করে মৎস্য চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে অন্যান্য মাছ চাষ করার যেতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত বর্ধনশীল নাইলোটিকা, মনোসেক্স, রুই, মৃগেল, গলদা চিংড়ির পাশাপাশি বাগদা চিংড়ি অধিকতর উপযোগী। এসকল জলাশয়ের বেড়ি বাঁধের উপরেও বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করা যেতে পারে। ফলে একই সাথে মাছ ও সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণাঞ্চলের অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত এলাকায় এ ধরনের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে শুরু হলেও সেগুলোর পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন। বিশেষ করে অধিক লবণাক্ত এলাকায় কীভাবে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপকূলবাসী লাভবান হতে পারে সে বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তি পর্যায়ে না করে সামষ্টিক পর্যায়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলবাসীর নিত্যসঙ্গী। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটার সময়ে উপকূলবাসীর সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা তো আছেই। কিন্তু দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যা মোকাবেলা উপকূলবাসীর জন্য আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অন্যসকল দুর্দশার সাথে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। উপকূলবাসীর এই দুর্দশা লাগবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে পানি নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। যদিও এ ধরনের অনেক গবেষণা চলমান রয়েছে কিন্তু সমস্যা সমাধানে তেমন আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সর্বোপরি উপকূলবাসীর দুর্দশা লাগবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী হোয়াইট গোল্ড নামে খ্যাত চিংড়ি চাষে গতি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের যথোপযুক্ত গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে এই গবেষণার পেছনে সরকারের বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলোকে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন ধারার সঙ্গে সমন্বয় করার পরিকল্পনা করতে হবে। অতিদ্রুত উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি ঘেরে পানি সরবরাহকারী নদীগুলো খনন করে চিংড়ি ঘেরে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহের সুযোগ করে দিতে হবে। উপকূলীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিশেষ নজর দিতে হবে। শহর রক্ষা বাঁধ, সড়ক, রাস্তা, বাজার, আবাসন, স্যানিটেশন, স্কুল, কলেজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানির টেকসই পরিকল্পনা ইত্যাদির বিষয়ে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বঙ্গোপসাগরকেন্দ্র্রিক সমুদ্রঅর্থনীতি বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে হবে। চিংড়ি চাষকে লাভজনক করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি দাতা সংগঠনগুলোসহ সকল সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার