ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

মন্ত্রী ও মেয়রদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম

দেশে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ ঘাটতি লেগেই আছে। চলমান তাপদাহে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের মধ্যেই ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং চলছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিদ্যুতের চাহিদার সাথে উৎপাদন ও সরবরাহের সামঞ্জস্য না থাকায় বিদ্যুৎ খাত নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে, সমন্বয়ের নামে সরকার প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে দিচ্ছে। দাম দিয়েও জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। রাজধানী থেকে গ্রামাঞ্চলে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয় তামাশা বলে পরিগণিত হচ্ছে। সরকার যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপচয় ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। এর বড় অংশই এখন চুরি হয়ে যাচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিকশার মাধ্যমে। এছাড়া, মার্কেট, শপিংমল, ফুটপাতের দোকান, বস্তিসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি হয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ লাইনের কারণে সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

গতকাল দৈনিক ইনকিলাব ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ইনকিলাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাত ৮টা পর্যন্ত শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ করার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের পরও মার্কেটগুলো আলো ঝলমল করে। এতে বিদ্যুতের সংকট ও অপচয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে প্রায় ২ লাখ ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকশা চলছে, যেগুলো চোরাই লাইনের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ দিয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একটি চার বা পাঁচ ব্যাটারির রিকশা চার্জ দিতে ৮ থেকে ১১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে লাখ লাখ রিকশা চার্জ দিতে কত বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা সহজেই অনুমেয়। দেখা যাচ্ছে, বিদ্যুতের অভাব ও ঘাটতির জন্য অপচয় ও চুরি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কদের বেশ জোর গলায় বলেছিলেন, সড়কে অবৈধ ব্যাটারি চালিত বাহন চলতে দেয়া হবে না। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তাঁর এ কথার ছিঁটেফোটা বাস্তবায়ন হয়নি। রাজধানীর সড়কগুলোতে যেভাবে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলছে, এখনো সেভাবেই চলছে। এর আগেও তিনি সড়ক-মহাসড়কে ত্রিচক্রযান চলাচর নিষিদ্ধের কথা বলেছিলেন। উচ্চ আদালতও তা বন্ধে নির্দেশনা দিয়ছিল। মন্ত্রীর কথা এবং আদালতের নির্দেশনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং দিন দিন তা বেড়ে চলেছে। ফলে মন্ত্রীর কথা অসারে পরিণত হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, যে কথা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে না, তা বলার দরকার কি? মন্ত্রীর লম্বা কথা, তাঁর সম্মান বাড়ায় না, বরং ক্ষুণœ করে। কাজেই বাগাড়ম্বর সমীচীন হতে পারে না। শুধু মন্ত্রীর কথাই বাস্তবায়ন হচ্ছে না, ঢাকার দুই মেয়রের কথাও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণসহ নগর উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে তাদের বড় বড় কথা মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। গতকাল একটি দৈনিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই মেয়রের ‘কথা বেশি, কাজ কম’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদে ডেঙ্গু রোগীর পরিসংখ্যান নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপনও তুলে ধরা হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, দুই মেয়র কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে এবং যা বলে তা করে না। রাজধানীর মার্কেটগুলো বন্ধে যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তা যে মানা হচ্ছে না, তা তাদের অজানা নেই। এই কাজটিও তারা করতে পারছে না। এতে যে ব্যাপক বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং প্রচ- গরমে সাধারণ মানুষের অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এত উদাসীন হলে কিভাবে চলবে? ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মন্ত্রীর নির্দেশ এবং সময়মতো মার্কেট বন্ধের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও কোনো উদ্যোগ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মন্ত্রী বা মেয়রদের কথা কানে তুলছে না। তারা তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছে এবং অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।

অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়া দুর্বলতা প্রকাশ করে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয় না, সে নির্দেশনা কেন দেয়া হয়? বরং নির্দেশনা দেয়ার আগে মন্ত্রীর উচিৎ, তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয়া এবং নির্দেশনার সাথে সাথে তা বাস্তবায়ন করা। হুট করে নিষিদ্ধের কথা বলে তা বাস্তবায়ন না হলে, গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব কমে যায়। ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা হয়েছে, মন্ত্রীর নির্দেশনা কথার কথা ও মশকরা ছাড়া কিছু নয়। তাঁর কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। ঢাকার দুই মেয়রের ক্ষেত্রেও একই ধারণা জন্মেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মন্ত্রী ও মেয়রদের উচিৎ হবে, যে কথা বাস্তবায়ন করা যাবে না, সে কথা না বলা। বললে, ভেবেচিন্তে বলতে হবে, যাতে তা কার্যকর হয়। আমরা আশা করি, বিদ্যুতের অপচয় ও চুরি রোধে তাদের এখতিয়ারের মধ্যে যা রয়েছে, তা করার জন্য জোর পদক্ষেপ নেবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার