ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

খাদ্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন

Daily Inqilab ইনকিলাব

২১ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২১ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম

খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, আটা, চিনি, তেল, মাছ, গোশত, ডিম, দুধ, পেঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি, তরিতরকারি, মশলাপাতিসহ এমন কোনো পণ্য নেই, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়সামর্থের মধ্যে আছে। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। বাজারের ওপর সরকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই। বাজারে দখল প্রতিষ্ঠা করেছে সিন্ডিকেটবাজরা। সিন্ডিকেটবাজ কারা, কারো অজানা নেই। সরকারের অতি কাছের ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেটবাজি করে বাজারে নির্বিচার লুণ্ঠন চালিয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা-ভোক্তারা এখানে সম্পূর্ণ অসহায় ও নিরুপায়। অনেকদিন ধরেই অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ, বাস্তবতা বিচারে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। গত প্রায় দু’বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর অবস্থান করছে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি স্বভাবতই বেশি। বিআইডিএস’র মহাপরিচালক বিনায়ক সেন সম্প্রতি এক জরিপের বরাত দিয়ে বলেছেন, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায়, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা কতটা শোচনীয় হয়ে পড়েছে, সহজেই অনুমান করা যায়। তাদের অধিকাংশই খেয়ে না খেয়ে, কখনো কম খেয়ে, কখনো এক বেলা খেয়ে দিন গুজরান করছে। পণ্যাদি কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এক ডিম চার ভাগ করে খাওয়ার অবস্থা হয়েছে তাদের। এরূপ নাজুক অবস্থার অনিবার্য পরিণতি পুষ্টিহীনতা। পুষ্টিহীন মানুষের কর্মসামর্থ কম হতে বাধ্য এবং বিভিন্ন রোগব্যাধির শিকার হওয়া তাদের জন্য স্বাভাবিক। বিশ্ব-খাদ্য কর্মসূচির চলতি মাসের প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দেশের দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের খাদ্য কেনার খরচ ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্য কেনার খরচ এত বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু বাড়েনি। অনেকের আয় বরং কমেছে। অনেকে কর্মহীন বা বেকারে পরিণত হয়েছে। সংসারে যে ব্যয় বেড়েছে, অর্থের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তার প্রেক্ষিতে অনেকে অন্যান্য খরচ কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্যমতে, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। ৪৩ শতাংশ মানুষ বাকিতে খাবার কিনছে। ২২ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা ব্যয় কমিয়েছে। ১৩ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় ভাঙছে।

সরকারের তরফে বড় গলা করে বলা হয়। দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, গোশত, ডিম, দুধেও পিছিয়ে নেই। ফলমূল, শাকসবজি, তরিতরকারিও প্রচুর উৎপাদিত হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে উৎপাদন মওসুমেও চালের দাম বাড়ে কেন? আটার দাম বাড়ে কেন? কেনই বা বিপুল পরিমাণ চাল-গম আমদানি করতে হয় ফি বছর? গবাদীপশুর সংখ্যা বার্ষিক চাহিদার তুলনায় বেশি বলে দাবি করা হলেও গোশতের দাম বাড়ে কেন? মুরগির দাম, ডিমের দাম বাড়ে কেন? মাছের দামই বা কেন বাড়ে? কেন ভর মওসুমেও শাকসবজি, তরিতরকারির দাম লাগামের বাইরে চলে যায়? এসব প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহ্য কোনো জবাব নেই। এই বৈপরীত্যের একটি কারণ এই হতে পারে যে, সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিসংখ্যান দেয়া হয় বা দাবি করা হয়, তা সঠিক নয়। ত্রুটিপূর্ণ বা ভুল পরিসংখ্যান উল্লেখ করা আমাদের দেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়। পরিসংখ্যান নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের অনাস্থার বিষয়টিও সবার জানা। জনসংখ্যার পরিসংখ্যান, উৎপাদনের পরিসংখ্যান, চাহিদার পরিসংখ্যান ইত্যাদি সব ধরনের পরিসংখ্যান সঠিক ও নির্ভুল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলু উৎপাদিত হয়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও এখন একই কথা প্রযোজ্য। তাহলে আলু-পেঁয়াজের দাম এত বাড়ে কীভাবে? কেনই বা আলু-পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দিতে হয়? চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে নিশ্চয়ই গড়মিল আছে।

অসাধু ব্যবসায়ীদের জোট বা সিন্ডিকেট পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। ঘোঁট পাকিয়ে, বাজার ম্যানিপুলেট করে পণ্যমূল্য বাড়ানো ব্যবসায়ীদের পুরানো স্বভাব। এ স্বভাব এখন অনিবার্য রূপ নিয়েছে। ফলে যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ের মূল্য ও ভোক্তপর্যায়ের মূল্য দুই-ই নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটবাজরা। দেখা যায়, উৎপাদক যে মূল্য পায় এবং ভোক্তা যে মূল্য দেয়, তার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। উভয়ের মাঝখানের ‘অর্থ’ হাতিয়ে নেয় মধ্যসত্ত্বভোগীরা, হালের সিন্ডিকেটবাজরা। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এ লুণ্ঠন বন্ধ করা সম্ভব। এজন্য চাহিদার পরিসংখ্যান সঠিক হতে হবে। সে অনুযায়ী উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। উৎপাদনে ঘাটতি থাকলে আমদানি করে পূরণ করতে হবে। এভাবে উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হলে সিন্ডিকেটবাজদের দৌরাত্ম্য আপনাআপনিই কমবে। বাজারের ওপর সরকারের নজরদারি তো থাকতেই হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ সক্ষমতাও থাকতে হবে। সরকারের লোকেরাই সিন্ডিকেট, তাদের প্রতি সরকারের অপার অনুকম্পা, এটা হলে হবে না। সিন্ডিকেট যেখানেই গড়ে উঠুক, নির্বিচারে ভেঙ্গে দিতে হবে। সরকার যদি এই শক্তি প্রদর্শন করতে পারে তবে ভোক্তাসাধারণ যেমন যুক্তিসঙ্গত দামে পণ্য কিনতে পারবে, উৎপাদকসাধারণও তেমনি উচিত মূল্য পাবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার