সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
২৩ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল(অব.) আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন ভিসানীতি অন্যতম রাজনৈতিক ফ্যাক্টর হয়ে উঠলেও আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতীয় আধিপত্যবাদী নীতির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের সমঝোতামূলক অবস্থানের কারণে আরেকটি একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছিল। নির্বাচনের পর পশ্চিমাদের বাগাড়ম্বর অনেকটা থেমে গেলেও নির্বাচনের ৫ মাসের মাথায় নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের মত প্রশ্নগুলো আবারো ঘুরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। এ সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি র্যাবের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু না, র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রশ্নে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের আগের অবস্থানই পুর্নব্যক্ত করেছে। উপরন্তু ডোনাল্ড লু’র সফরের পর পর সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল(অব.) আজিজের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ড, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবনমন, দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নে নাগরিক অসন্তোষের বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
র্যাব ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর র্যাবের হাতে গুম ও বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ড অনেকটা কমে আসলেও ঘটে যাওয়া গুম-হত্যাকান্ডের বিচার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার তাগিদ অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে পশ্চিমারা অভিযোগ করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন ২০২৪ সালের বৈশ্বিক মত প্রকাশ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অত্যন্ত সঙ্কটজনক বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা গত এক দশকে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধারাবাহিক অবনমনের চিত্র তুলে ধরেছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এর ঢাকা সফরকালে সে দেশের প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শুব্রিজ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভয়ঙ্করভাবে পরিচালনার অভিযোগ তুলে সে নির্বাচনকে বিশ্বের স্বীকৃতি দেয়ার বিপক্ষে নিজের অবস্থান পুর্নব্যক্ত করেছেন এবং তাদের দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর কয়েক মাসের নিরবতা শেষে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল।
বাংলাদেশের একজন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল(অব.) আজিজ আহমেদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নানাভাবে গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ। সরকারের অব্যাহত প্রয়াস সত্ত্বেও এলিট ফোর্স র্যাবের সাবেক কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা গত তিন বছরেও তুলে নেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে যে সব শর্ত পুরণের কথা বলা হয়েছিল তা হয়নি বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল। এবার জেনারেল আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের উপর নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের মানবাধিকার ও সুশাসনের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক চাপ নতুন মাত্রা যুক্ত করল। জেনারেল আজিজ সেনাপ্রধান থাকাকালে কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। তাতে আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছিল, এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবেও সে সব অভিযোগের কথাই বলা হচ্ছে। দেশের সাবেক সেনা প্রধান কোনো গুরুত্বহীন ব্যক্তি নন। তাঁর ও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দেশের ভাব-মর্যাদাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তি মিশনের সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা যেন দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনীর ভাব-মর্যাদা, বিশ্বস্ততা ও জনগণের আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সরকারকে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশ এখন এক জটিল অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। কোনো অজুহাতে যেন দেশের উপর কোনো অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা না আসে সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, মানবাধিকার, বিচারহীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মত ইস্যুগুলোকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক
ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার