ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বার্মার অংশবিশেষ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে

Daily Inqilab মোবায়েদুর রহমান

২৮ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম

গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় জোটনেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একটি কথা বলেছেন, যেটি বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য ভয়াবহ। এটিকে তার কথা না বলে তথ্য পরিবেশনও সম্ভবত বলা যায়। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং বলেছেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম/পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা চলছে। এই সংবাদটি বিভিন্ন পত্রিকায় যেভাবে ছাপা হয়েছে তার ফলে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যেমন, দৈনিক সমকালের শিরোনাম, ‘১৪ দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী/ চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা চলছে।’ একই দিন ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে বলা হয়েছে, বার্মা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশবিশেষ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দৈনিক ইনকিলাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের অংশবিশেষ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। ইংরেজি ডেইলি স্টারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের অংশবিশেষ নিয়ে এই রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, কোনো পত্রিকা বলছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং বার্মার অশংবিশেষ নিয়ে এবং কোনো কোনো পত্রিকা বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বার্মার অংশবিশেষ নিয়ে এই প্রচেষ্টা চলছে। বিভ্রান্তি হলো, প্রধানমন্ত্রী কি চট্টগ্রামের কথা বলেছেন? নাকি পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা বলেছেন? বার্মা বা মিয়ানমারের কোন্ অংশ নিয়ে এই রাষ্ট্র গঠিত হবে, সেটিও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেননি। তবে বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন রাজ্যের। এই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য আমরা ওপরে উল্লেখিত সবগুলি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের অংশ বিশেষ নিচে তুলে ধরছি।

Prime Minister Sheikh Hasina yesterday alleged that a plot is on to carve out “a Christian state like East Timor” taking parts from Bangladesh and Myanmar. She also claimed that she was offered a hassle-free reelection in the January 7 polls if she allowed a foreign country to build an airbase in Bangladesh territory. She said, “Like East Timor ... they will carve out a Christian country taking parts of Bangladesh [Chattogram] and Myanmar with a base in the Bay of Bengal.” “Many have their eyes on this place. There is no controversy here, no conflict. I won’t let that happen. This is also one of my crimes [in their eyes],” she said. About the proposal for airbase, the premier said, “The offer came from a white man.”

“It may appear that it is aimed at only one country, but it is not. I know where else they intend to go,” she said and stated that this is why the Awami League government is always in trouble. “There will be more trouble. But don’t worry about it.” “If I allowed a certain country to build an airbase in Bangladesh, then I would have had no problem.” Hasina also mentioned that she made the same reply as she did in 2001 when the US offered to sell the country’s gas to India.

ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে বলা হয়েছে, A conspiracy continued to make a Christian state comprising the Chittagong Hill Tracts of Bangladesh and a part of bordering Myanmar. ‘The plot is still there. With a part of Bangladesh like East Timor [broken off from Indonesia], then Chittagong [Chittagong Hill Tracts], Myanmar will form a Christian state. A base will be built in the Bay of Bengal,’ she said. ‘But the holding of the election would be allowed and I would face no difficulty in retaining power if I allowed them to build a base in the Bay of Bengal. It was a proposal from a white person,’ said the prime minister. Many have their eyes on this place... I would not let that happen,’ said the prime minister. She asked that who would be attacked if any air base was established here.

দৈনিক ইনকিলাবে বলা হয়েছে, কোনো দেশের কথা উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ারবেজ করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই, তাহলে আবার ক্ষমতায় আসতে কোন অসুবিধা নেই। এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘কিন্তু আমি রাজি হইনি’। তিনি আরো বলেছেন, এসব কারণে কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এবং হবে আমি জানি। বঙ্গপোসাগরে এয়ারবেজ করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন এক সাদা চামড়ার (নাম উল্লেখ না করে) প্রস্তাব। এখনো চক্রান্ত আছে উল্লেখ করে এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাবে। বঙ্গপোসাগরে একটা ঘাঁটি করবে। তিনি বলেন, বঙ্গপোসাগরের ওপর অনেকেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। এটাও আমার একটা অপরাধ।

তিনি আরো বলেন, এখানে (বঙ্গপোসাগরে) এয়ারবেজ করে কার উপরে হামলা করবে। যদি একটা দেশকে দেখানো হয়, সেটাও তো না। আমি তো জানি আরো কোথায় যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে কিছু সমস্যায় পরতে হচ্ছে, হবে আমি জানি।

দৈনিক সমকালে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী দেশ ঘাঁটি বানাতে চায়। এটি হতে দিচ্ছেন না বলেই কিছু সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারকে নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই চক্রান্ত এখনও আছে। “পূর্ব তিমুরের (ইন্দোনেশিয়া ভেঙে গড়ে ওঠা) মতো বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে, তার পরে চিটাগং (পার্বত্য চট্টগ্রাম), মিয়ানমার মিলে একটা খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানাবে। বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাটি করবে বলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনই হতে দেবে না। তবে দেবে, আর আমারও ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হবে না; যদি আমি বাংলাদেশে কারও বিমানঘাঁটি করতে দিই। তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নেই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি উল্লেখ করেন, বিএনপি বাংলাদেশে নির্বাচন হতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। সে সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বিমানঘাঁটি করতে দেওয়ার প্রস্তাবও তাঁর কাছে এসেছিল, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তাঁর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। কিন্তু তখনো তিনি সেই নেতিবাচক উত্তরই দেন। যে ধরনের উত্তর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ভারতে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে তিনি দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চক্রান্ত এখনো আছে। বে অব বেঙ্গলে একটা ঘাঁটি করবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কারণে আমাদের কিছু সমস্যায় সব সময় পড়তে হচ্ছে; পড়তে হবে, আমি জানি।

॥চার॥
প্রিয় পাঠক, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর কথা। সুতরাং আমরা নিজ থেকে কোনো কথা না বলে যে পত্রিকা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রকাশ করেছে আমরাও কোনো দাঁড়ি কমা সেমি কোলন বাদ না দিয়ে অংশ বিশেষ হুবহু তুলে দিয়েছি। তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়।

প্রথমে একটি বিষয় দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলা দরকার। দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে যত মতপার্থক্যই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমি এবং দৈনিক ইনকিলাব আপোসহীন। আমাদের দেশের এক ইঞ্চি জমির ওপরেও যদি কোনো দেশের কু-নজর থাকে তাহলে আমরা তা বরদাশত করবো না, সে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন বা ভারত যেই হোক না কেন।

কিন্তু প্রশ্ন আসে এজন্য যে, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। খ্রিস্টানদের সংখ্যা ১ শতাংশও নয়। বান্দরবানে খ্রিস্টানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে ০ দশমিক ৬২ শতাংশ। রাঙ্গামাটিতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। রাখাইন বা আরাকানে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এত ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জনসংখ্যা নিয়ে কি কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা যায়? পূর্ব তিমুরের কথা বলা হয়েছে। সেখানে ৯৪ শতাংশ হলো খ্রিস্টান। তাই ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন করা হয়েছে। কিন্তু ১ শতাংশ বা তারও কম সংখ্যক জনগোষ্ঠি নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন কীভাবে সম্ভব? প্রধানমন্ত্রী সাদা চামড়ার কথা বলেছেন। তারা যদি এই রকম প্রস্তাব দিয়ে থাকে তাহলে তাদের মস্তিষ্কের সুস্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন থেকে যায়।

রাজনৈতিক মত পার্থক্য যাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের একাংশ বিচ্ছিন্ন করে কেউ যদি স্বাধীন রাষ্ট্র বানাতে চায় তাহলে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ, যার যা আছে, তাই নিয়ে ঐ কুচক্রীদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

Email: [email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার